কর্ণফুলী পেপার মিলে অবিক্রিত পড়ে আছে ৫ হাজার টন কাগজ, আর্থিক ভাবে ক্ষতির সম্মুখিন

204

কাজী মোশাররফ হোসেন, কাপ্তাইঃ-কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনায় অবস্থিত এশিয়া বিখ্যাত কর্ণফুলী পেপার মিলে (কেপিএম) এ ৫ হাজার টন উৎপাদিত সাদা কাগজ অবিক্রিত পড়ে আছে দিনের পর দিন। পড়ে থাকা এই কাগজের মূল্য প্রায় ৭০ কোটি টাকা বলে জানা গেছে।
অথচ টাকার অভাবে শ্রমিক কর্মচারি ও কর্মকর্তাদের ২ মাসের বেতন প্রদান বন্ধ রয়েছে। এই ৫ হাজার টন কাগজ বিক্রি করা সম্ভব হলে সকলের বেতন প্রদানসহ কারখানার অন্যান্য খরচ মিটানোও সম্ভব হতো। কাগজ বিক্রি না হওয়ায় উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্বেও বর্তমানে উৎপাদন সীমিত রাখা হয়েছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, কেপিএমের গুদামগুলো বর্তমানে রীম কাগজে ভরাট হয়ে আছে বিভিন্ন স্থানে। গুদামে কাগজ রাখার জায়গা না থাকায় মেশিন হাউজের বিভিন্ন স্থানে স্তুপ করে কাগজ রাখা হয়েছে।
কেপিএমে বিপুল পরিমান কাগজ অবিক্রিত পড়ে আছে বলে নিশ্চিত করেছেন কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস। কাগজগুলো বিক্রি করা সম্ভব হলে কেপিএম আর্থিক ক্ষতি হতে রক্ষা পেত বলেও তিনি জানান।
কর্তৃপক্ষ সুত্রে জানা গেছে, জাতীয় পাঠ্য পুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কেপিএম উৎপাদিত কাগজের প্রধান ক্রেতা। প্রতি বছর সরকার কোটি কোটি শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে যে পাঠ্য বই উপহার হিসেবে তুলে দিচ্ছে সেই কাগজ এনসিটিবিকে সরবরাহ করে থাকে কেপিএম। কিন্ত বর্তমানে এনসিটিবি কেপিএম থেকে কাগজ নিচ্ছেনা। যার ফলে কেপিএমে কাগজের পাহাড় জমে গেছে। এছাড়াও নির্বাচন কমিশন, বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড, বিএসও, বিশ্ববিদ্যালয় সমুহ অন্যান্য বছর কেপিএম থেকে কাগজ কিনে নিলেও বিগত প্রায় দেড় বছর তারাও কাগজ নিচ্ছেনা বলে জানা গেছে।
কেপিএম কারখানা সুত্র আরো জানায়, কাগজ উৎপাদনের জন্য কেপিএম নগদ মূল্যে বিদেশ থেকে পাল্প (মন্ড) আমদানি করে থাকে। এছাড়াও অন্যান্য কাঁচামালও কেপিএম নগদ মূল্যে ক্রয় করে থাকে। এনসিটিবিসহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান যদি যথাযথ নিয়মে কেপিএম থেকে স্বাভাবিক ভাবে কাগজ সরবরাহ নিতো তাহলে কেপিএমে এভাবে কাগজের পাহাড় জমে থাকতোনা এবং কেপিএম আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থও হতোনা।
কেপিএম কারখানার একাধিক শ্রমিক নেতা বলেন, শ্রমিক কর্মচারী কর্মকর্তারা দিনরাত পরিশ্রম করে কাগজ উৎপাদন করছে। উৎপাদনের স্বার্থে শ্রমিকরা নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কয়েক ঘন্টা বেশি শ্রম দিচ্ছেন। কোন সরকারি ছুটি, (মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, শিশু দিবস, বাংলা নববর্ষ, মে দিবস, ঈদ) যে কোন পালা পার্বনে ছুটি ভোগ না করে শ্রমিক কর্মচারি ও কর্মকর্তারা উৎপাদনের কাজে ছিলেন। এত পরিশ্রম করার পরও যদি সময় মতো বেতন পাওয়া না যায় সে ক্ষেত্রে দুঃখ কষ্টে তাদের দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।
একটি সুত্র জানায়, কেপিএম সরকারি প্রতিষ্ঠান। এনসিটিবিসহ সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কেপিএম থেকে কাগজ কিনতে বাধ্য। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কাগজ না কিনে তারা উদ্দেশ্য মূলকভাবে অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কাগজ কিনছে। এর ফলে সরকারি প্রতিষ্ঠান কেপিএম আর্থিক ভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ক্যামিকেল ইন্ডাষ্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) চেয়ারম্যান শাহ্ মোঃ মিদাদুল হক সম্প্রতি কেপিএম কারখানা পরিদর্শন করেন। তিনি কেপিএম কারখানা ঘুরে উৎপাদিত কাগজের মান দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। সরকারের অন্যান্য সংস্থাগুলো যাতে কেপিএমের কাগজ নেয় সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে তিনি স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেন বলে জানা গেছে।