পাহাড়ে ভিন্ন পদ্ধতিতে লাউ চাষে এগিয়ে পাহাড়িরা

298

সুজন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, বিলাইছড়িঃ-পাহাড়ে জুম চাষে এগিয়ে পাহাড়িরা। যুগ যুগ ধরে পাহাড়ীরা বসবাস করে আসছে পাহাড়ের ডালে ছড়ার পাড়ে কিংবা সুউচ্চ পাহাড়ে। প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এখনো অনেক পাহাড়ি জুম চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। যদিওবা তাদের ঠিক ঠিকানা নেই, নেই কোন সুনির্দিষ্ট জায়গা জমি। জীবন চলার পথে বেছে নিতে হয় বন বিভাগের কোন এক জায়গা। একটাই উদ্দেশ্য জঙ্গল কেটে জুম চাষ করে ব্যাপক ফসল ফলানো। কিন্তু কোন ভাবে হারিয়ে যায়নি তাদের অভিজ্ঞতা। পাহাড়ের ডালে চাষ করা তাদের নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার।
তাছাড়া এসব পাহাড়ে ডালে প্রযুক্তি তেমন কাজে আসেনা। যা তারা পিরামিড পদ্ধতিতে চাষ করে থাকে। চাষ করার পরে তারা যে ফল সবচেয়ে ভালো মানের সে ফলটি পাকিয়ে বীজগুলো সংরক্ষণ করে থাকে। পরে বীজগুলো মৌসুম অনুসারে সুবিধা মত সময়ে বপন করে থাকেন। তেমনি ভাবে একটি সফল চাষ হচ্ছে লাউ চাষ।
কয়েক জন বন্ধু মিলে পাহাড় ভ্রমন গেলে চোখে পড়ে লাউটি। তথ্য সংগ্রহ ও তাদের অবস্থা জানতে গিয়ে দেখা গেল। প্রায় ১৮০০ ফিট সু-উচ্চ পাহাড়ে এক জুমিয়া তিনি নিজ শনের ঘরে চালের উপরে লাউ চাষ করে দেখালেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানালেন, আগে আমাদের বাপ-দাদা’রা বেশির ভাগ এভাবেই লাউ চাষ করে আসতো, তাই আমরাও এভাবে করছি। এক পাহাড় থেকে যখন আরেক পাহাড়ে জুম চাষ করতে যাই তখন আমরা মাছাং ঘর বা তংঘরটি করা আগেই লাউ বীজটি বপন করার চেষ্টা করি। এটা আমাদের ঐতিহ্যগত পদ্ধতি।
লাউ চাষ কেন এত প্রিয় তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কচি লাউ ও লাউ শাকের আগা সিদ্ধ করে জুম্ম মরিচ বর্তা দিয়ে গরম গরম খাওয়া পাহাড়িদের একটি কমন আইটেম।
তিনি আরো জানান, একটি শনের চাউনি তংঘর-এর নীচে (যেদিকে পানি ফেলা হয়) চারদিক তিন ফুট বিশিষ্ট এবং গভীরতাও তিন ফুট হতে হবে। গর্তে গর্ত ভর্তি পঁচা শন, খড় নতুবা জৈব সার, গোবর দিয়ে ১৫ দিন পর লাউ বীজ বপন করলে এটি দ্রুত গজিয়ে নিদিষ্ট সময়ে লাউটি পাওয়া যাবে বলে তিনি জানান। তবে টিনের ঘরে সম্ভব হবে কিনা জানিনা বলেও জানান। এখানে যথেষ্ট ঠান্ডা প্রয়োজন রয়েছে। শনের ঘর ছাঁদের উপরে প্রচন্ড গরমেও বেশ ঠান্ডা রাখবে লাউটি। কোন রাসায়নিক সার প্রয়োজন হয়না। তাই এ লাউ চাষ যা বিষমুক্ত বলেও জানান।
তিনি আরও জানান, এখন মানুষ আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করে থাকে। রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে সমতল অঞ্চলে বেশি ফলন পাওয়ার জন্য এসব চাষ করে থাকে। তা আমরা না জেনে খাচ্ছি ফলে আমরা বেশি অসুখ-বিসূখ হচ্ছি। তাই যাদের জায়গা-জমি কম তারা এই পদ্ধতি লাউ, চাল কুমড়া পাশাপাশি পুঁইশাকের চাষ ও করতে পারেন। তাই লাউকে নিয়ে শিল্পীরা গানও তৈরি করেছেন বলে বর্তমানে গাওয়া হয়। যা গানটি সকলের প্রিয়।