কাজী মোশাররফ হোসেন, কাপ্তাইঃ-কাপ্তাই-রাঙ্গামাটি নতুন সড়কে বন্য হাতির আক্রমণে মাত্র ৫ দিনের ব্যবধানে ২ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। হাতির ভয়ে এখন সাধারন মানুষ এই সড়কে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে। বিশেষ প্রয়োজনে কাপ্তাই থেকে রাঙ্গামাটি যেতে হলে অনেক পথ ঘুরে এখন মানুষ বরইছড়ি সড়ক দিয়ে যাতায়াত করছেন।
শুক্রবর (১২ মার্চ) সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে কাপ্তাই নতুন বাজার থেকে কোনো অটোরিক্সা সিএনজি রাঙ্গামাটির বিনোদন কেন্দ্র বেরাইন্যা এবং বরগাং যাতায়াত করেনি। আগে প্রতিদিন শতাধিক যানবাহন এই সড়কে চলাচল করলেও এখন যান চলার প্রায় বন্ধ হয়ে আছে।
অটোরিক্সা চালক কামাল উদ্দিন বলেন, আমরা প্রতিদিন কাপ্তাই নতুন বাজার থেকে রাঙ্গামাটির আসামবস্তি পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করি। প্রতিদিন অনেক পর্যটন আসেন যারা কাপ্তাই থেকে রাঙ্গামাটি অথবা রাঙ্গামাটি থেকে কাপ্তাই যাতায়াত করেন। কিন্তু গত ১১ মার্চ প্রকাশ্য দিবালোকে বন্য হাতি একজন পর্যটককে নির্মমভাবে হত্যা করে। সেই দুর্ঘটনার আগে গত ৫ মার্চ একই স্থানে বন্য হাতি আরেক জন লোককে হত্যা করেছিল। হাতির ভয়ে এখন এই সড়কে যাতায়াত প্রায় বন্ধ হয়ে আছে।
জীবতলী ইউপি চেয়ারম্যান সুদত্ত কারবারী বলেন, সড়ক পথে কাপ্তাই থেকে রাঙ্গামাটি যাতায়াতের জন্য আমরা এই সড়কটি ব্যবহার করে আসছি। আগে কোন সমস্যা ছিলনা যাতায়াতে। কিন্তু বছর দুইয়েক পূর্বে রাতে হঠাৎ সড়কে বন্য হাতির আনাগোনা শুরু হয়। বন্য হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে রাতে কয়েকজন মারাও গেছে। গত ৫ মার্চও রাত ২টার সময় বন্য হাতি একজনকে পিষে মারে। কিন্তু গত ১১ মার্চ সকাল সাড়ে ৯টার সময় প্রকাশ্য দিবালোকে ৬ জন মানুষের মধ্য থেকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রকে মারার পর সাধারণ মানুষ ভীত হয়ে পড়েছেন। তাই আপাতত এই সড়কটি কেউ ব্যবহার করছেন না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিন বন বিভাগের ডিএফও মোঃ রফিকুজ্জামান শাহ বলেন, হিংস্র বন্য পশু যাতে মানুষের যানমালের ক্ষতি করতে না পারে সে জন্য বন বিভাগের প্রচেষ্টা রয়েছে। হাতি চলাচলের পথ চিহ্নিত করে জায়গায় জায়গায় সাইন বোর্ড টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ হাতির যাতায়াতের পথ এড়িয়ে চলাফেরা করে থাকেন। তারপরও কেন বন্য হাতি মানুষের উপর অকারণে চড়াও হচ্ছে এটি খুঁজে বের করারও চেষ্টা চলছে। তবে বন জঙ্গলে বন্য হাতির খাবারের প্রচন্ড সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সাধারণত খাবারের সন্ধ্যানেই বন্য হাতি লোকালয়ে ছুটে আসছে। আর সামনে পেয়ে মানুষের ক্ষতি করছে। মানুষের জীবন রক্ষায় বন বিভাগের পক্ষ থেকে হাতি তাড়ানোর জন্য সোলার ফেঞ্চিং বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ডিএফও বলেন গত ১১ মার্চ বন্য হাতির আক্রমণে ঢাকা টেক্সটাইল ইউনির্ভাসিটির ছাত্র অভিষেক পালের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটির জন্য আমরা বন বিভাগের সবাই দুঃখিত। এ ধরণের ঘটনা আর যাতে না ঘটে সে জন্য বন বিভাগের পক্ষ থেকে সোলার ফেঞ্চিং বসানোসহ আরো পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান। তবে আপাতত সবাইকে সাবধানতার সাথে কাপ্তাই-রাঙ্গামাটি নতুন সড়কে যাতায়াত করার জন্য তিনি পরামর্শ দিয়েছেন।