স্রোতের কারণে পানছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়ক যোগাযোগের ব্রীজটি ছড়াগর্ভে বিলীন হওয়ার শংকা

348

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ-পানছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কের নালকাটার বুক চিরে বয়ে গেছে শুকনাছড়ি ছড়া। এই ছড়ার উপর দিয়েই পানছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কে রয়েছে নালকাটা ব্রীজ। বর্তমানে ছড়ার প্রবল স্রোতের কারণে ব্রীজটির পশ্চিম পার্শ্বের বিশালাকার ভাঙ্গন ধরে মাটি ধ্বসে পড়েছে। যে কোন মুহুর্তে ব্রীজটি ছড়াগর্ভে বিলীন হতে পারে। এতে ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে খাগড়াছড়ি-পানছড়ির এই সড়কটি।
এতে জেলা সদরের সঙ্গে পানছড়ি উপজেলায় যোগাযোগের এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি এখন বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যেকোনো সময়েই ঘটতে পারে বড় কোন দুর্ঘটনা- এমন শঙ্কা নিয়েই প্রতিদিন এ সড়কে চলাচল করছে হাজারো মানুষ। ব্রীজটি বিলীন হওয়ার আগেই প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন যাত্রী সাধারণ।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন পরিদর্শন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খাগড়াছড়ি জেলার গিরিফুল এলাকায় চেঙ্গী নদী ও পানছড়ি উপজেলার লতিবান ইউনিয়নের দক্ষিণ নালকাটা এলাকায় শুকনাছড়ি ছড়ার পাড়ে ভাঙন বেড়েছে। ফলে খাগড়াছড়ি-পানছড়ি প্রধান সড়কের প্রায় দু’শত ফুট রাস্তা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। খাগড়াছড়ি সদরের উত্তরের দুইটি ইউনিয়ন ও পানছড়ি উপজেলাবাসীর খাগড়াছড়ি জেলা শহরে আসা যাওয়ার একমাত্র রাস্তা এটি। পানছড়ি থেকে জেলা সদরে যাওয়ার প্রধান এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কয়েকশত ভারী-হালকা যানবাহন চলাচল করে। গিরিফুল এলাকায়ও সড়কে কামড় বসিয়েছে চেঙ্গী নদী। বালির বস্তা দিয়ে আপাতত ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা হলেও সেটি টেকসই নয়।
অপরদিকে নালকাটায় ছড়াটির ওপর একটি বক্স কালভার্টের মাধ্যমে খাগড়াছড়ি-পানছড়ি প্রধান সড়কটি সংযুক্ত। নামে ‘ছড়া’ হলেও এখন এর আকার বিশাল। প্রধান সড়ক হয়ে ছড়ার পাশ দিয়ে দক্ষিণ নালকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গ্রামে যাতায়াতের পথ। পাড় ভাঙতে-ভাঙতে প্রধান সড়ক ও গ্রামীণ পথ; দুটিই এখন ঝুঁকিতে পড়েছে। বিগত কয়েকবছরে অনেকের ধানি জমিও বিলীন হয়েছে এই ছড়ায়। কালভার্টের তলা থেকে মাটি সরে যাওয়ায় ঝুঁকি এখন আরও বেড়েছে। ইতোমধ্যে সওজ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড সেখানে ভাঙন রোধে পাইলিং, বালুর বস্তা ও পাথর ফেলেছে। তবে সওজ রাস্তাটি রক্ষায় প্রাথমিক ব্যবস্থা নিলেও স্থায়ী সমাধান চান স্থানীয়রা। এছাড়া গিরিফুলে সড়কটি যে-কোনো মুহূর্তে ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
নালকাটা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা নয়নময় চাকমা বলেন, ‘ছড়ার পাড় ভাঙন হতে হতে এখন প্রধান সড়কে এসে গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেখানে বস্তা দিয়েছে সড়ক বিভাগ। কিন্তু এভাবে ভাঙনরোধ করা সম্ভব না। এভাবে চলতে থাকলে কালভার্ট ধসে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।’
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, পানি বেড়ে গেলে পাড়ের মাটি নরম হয়ে যায়। পানি কমে যাওয়ার পর পাড় ভাঙতে থাকে। চেঙ্গী নদীর ও শুকনাছড়ি ছড়ার ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নিতে সংষিøষ্ট সব দপ্তরকে জানানো হয়েছে। এসব দপ্তরের কর্মকর্তারা প্রায় সময় ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে এলেও শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। কিন্তু তাদের বাস্তবে টেকসই কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
দক্ষিণ নালকাটা এলাকার ভাঙন কবলিত স্থানের পাশে চা-মুদিমালের একটি দোকান চালান তপন চাকমা। ছড়ার একপাড়ে তাঁর দোকান, অপরপাড়ে সুপেয় পানির একটি টিউবওয়েল রয়েছে। কিন্তু পাড়ের মাটি নরম হয়ে ভাঙনের আশঙ্কায় পড়ায় তপন চাকমাসহ আশপাশের মানুষজন টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ বন্ধ করে দিয়েছেন। তপন বলেন, ‘ছড়ায় পানি বাড়লে আতঙ্কে থাকি। এই ছড়া অনেকের ফসলি জমি খেয়েছে। আমি কোন রকমে দোকান করে খাই। আমার দোকানটিও কখন ছড়ায় পড়ে যায় জানি না। ছড়ার পাশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার রাস্তাটিও এখন হুমকির মুখে। নালকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষার্থীও এই পথে চলাচল করে। জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে আমরা বিপদে পড়ে যাব।’
লতিবান ইউনিয়ন পরিষদের (৫নং ওয়ার্ড) সদস্য রুপেন চাকমা জানান, ‘আমরা ইতোমধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও অফিস, জেলা পরিষদকে বিষয়টি জানিয়েছি। ছড়ার পাড় ভাঙনে স্থানীয় অনেক কৃষক তাদের জমিজমা হারিয়েছেন। যদি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। সওজ কিছু কাজ শুরু করেছে যা যথেষ্ট নয়। আশাকরি টেকসই উন্নয়নে কর্তৃপক্ষ দ্রুত কাজ করবে।’
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) খাগড়াছড়ির নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল জানান, ‘গিরিফুলের সড়কটি রক্ষায় প্রাথমিকভাবে নদীর পাড়ে আমরা গাছের পাইলিং করেছি, বস্তা ফেলেছি। তবে তা আপাত ব্যবস্থা। আমরা ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দিয়েছি। আগামী বর্ষার আগে যদি তারা স্থায়ী ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে এটা কতটুকু টিকিয়ে রাখা যাবে তা চিন্তার বিষয়। আর লতিবান ইউনিয়নে কালভার্টটির দুইপাশে ও নিচে মাটি সরে যাওয়ায় সেখানেও বালির বস্তা দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করছি।’
এই প্রকৌশলী জানান, ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা চিঠি পাঠাব। যদি এর আগে কোনো কারণে কালভার্টটি টিকানো সম্ভব না হয়, তাহলে আমাদেরকে বেইলি ব্রিজ বা বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে যোগাযোগ নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে হবে।’