কাজী মোশাররফ হোসেন, কাপ্তাইঃ-প্রাণঘাতি করোনার প্রভাবে সারা দেশ আজ আতঙ্কিত অবস্থায় আছে। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৬৩টি জেলাই বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। বর্তমানে দেশের কোটি কোটি মানুষ করোনার ভয়ে ভীত হয়ে আছেন। প্রতিদিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। সারা দেশে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৬৬৭ জন। আর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণে করেছেন ১৬৮ জন। দেশের প্রতিটি জেলা এবং উপজেলা করোনায় আক্রান্ত হলেও এখন পর্যন্ত রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা এবং জেলার ১০ উপজেলা করোনা থেকে মুক্ত রয়েছে।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশীদ সমগ্র রাঙ্গামাটি জেলা এখন পর্যন্ত করোনা থেকে মুক্ত থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, করোনা যাতে রাঙ্গামাটি জেলায় প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনী, রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধিসহ সকলের সহযোগিতায় আমরা প্রথম থেকেই কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। অন্য জেলার কোন লোককে রাঙ্গামাটি জেলায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। পাশাপাশি রাঙ্গামাটি জেলার কোন লোককেও অন্য জেলায় যাতায়াতের সুযোগ দেওয়া হয়নি। বিশেষ প্রয়োজনে অন্য জেলা থেকে কেউ রাঙ্গামাটি জেলায় আসলে তাকে সাথে সাথে ১৪ দিনের জন্য হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। সন্দেহভাজন কোন রোগী পাওয়া গেলে তাৎক্ষনিক তাকে এবং তার সাথে সংশ্লিষ্টদের লকডাউনে রাখা হয়। রাঙ্গামাটির ১০ উপজেলার প্রতিটি উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনী, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদসহ সর্বস্তরের সাধারন জনগণ করোনা প্রতিরোধে সহযোগিতা করেছেন বিধায় বর্তমানে রাঙ্গামাটি জেলা ব্যাতিত দেশের সকল জেলা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। আগামীতেও রাঙ্গামাটি জেলাকে করোনা থেকে দুরে রাখতে সব ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জেলা প্রশাসক জানান।
কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশ্রাফ আহমেদ রাসেল বলেন, কাপ্তাই উপজেলায় কর্ণফুলী পেপার মিল, কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন, প্লাইউডসহ বিভিন্ন কলকারখানা থাকায় এখানে দেশের প্রায় প্রতিটি জেলার লোকজনের বসতি রয়েছে। কিন্তু করোনার প্রভাব শুরু হবার সাথে সাথে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়। পুলিশ, সেনাবাহিনী, জনপ্রতিনিধি এবং সরকারী বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে পুরো উপজেলায় কাজ শুরু করা হয়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কাপ্তাই উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ হয়। এলাকার সবাইকে ঘরে থাকতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। দোকানপাট খোলা না রাখা এবং সবাইকে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে বাধ্য করা হয়। মসজিদ মন্দিরসহ অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক নির্ধারিত সংখ্যক মানুষের বেশি যাতে যাতায়াত না করেন সে জন্যও সবাইকে সচেতন করা হয়। রাঙ্গামাটি জেলার ১০ উপজেলার প্রতিটি উপজেলায় একই রকম পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এসব পদক্ষেপের ফলে রাঙ্গামাটি জেলা এবং জেলার ১০ উপজেলা এখন পর্যন্ত প্রাণঘাতি করোনা থেকে মুক্ত রয়েছে। এই অবস্থান ধরে রাখার জন্য তিনি সকলের আন্তরিক সহযোগিতাও কামনা করেন।