॥ ডেস্ক রিপোর্ট ॥
চট্টগ্রামের রাউজানে শান্তির বার্তা ও ধর্মীয় উৎসব উদ্যাপনে উড়ানো হলো দেড় লক্ষাধিক রঙবেরঙের ফানুস। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা (আশ্বিনী পূর্ণিমা) উপলক্ষে সোমবার (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে এই বর্ণিল আয়োজন।
প্রতি বছরের মতো এবারও রাউজানের ১৬৫টি বৌদ্ধ বিহারে ধর্মীয় রীতি অনুসারে প্রবারণা পূর্ণিমা পালিত হয়। বিহারগুলোর আওতাধীন এলাকা থেকে প্রায় দেড় লক্ষাধিক ফানুস (আকাশ প্রদীপ) আকাশে উড়ানো হয়, যা রাউজানের রাতের আকাশকে করে তোলে আলোকোজ্জ্বল ও রঙিন।
ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, চুলামনি চৈত্যকে পূজা করার উদ্দেশ্যে ফানুস উত্তোলন করা হয়। পূর্ণার্থীরা ধর্মীয় মন্ত্র পাঠ করে, খালি পায়ে বিহার প্রাঙ্গণ, বাড়ির উঠান ও দালানের ছাদ থেকে ফানুস উড়িয়ে দেন। ফানুস উড়ানোর মুহূর্তে চারপাশ মুখরিত হয়ে ওঠে “সাধু! সাধু!” ধ্বনিতে।
সকাল থেকেই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতীরা বিহারে এসে মোমবাতি জ্বালিয়ে বুদ্ধমূর্তিতে শ্রদ্ধা জানান। দিনব্যাপী চলে ধর্মীয় প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রদীপ প্রজ্বালন ও ধর্মীয় দেশনা।
মহামুনি গ্রামের নিকসন তালুকদার জানান, গ্রামের যুবকদের সংগঠন “অষ্টাঙ্গিক” এর উদ্যোগে ঐতিহাসিক মহামুনি বিহার প্রাঙ্গণ থেকে ৫০০ ফানুস ও পুরো গ্রামে প্রায় ২ হাজার ফানুস উড়ানো হয়। তিনি বলেন, সন্ধ্যার পর মনে হচ্ছিল আকাশের তারা যেন মাটিতে নেমে এসেছে।”
এছাড়াও, মহামুনি তরুণ সংঘ এর আয়োজনে ‘প্রভাকর-মঞ্জুরিকা’ উন্মুক্ত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ২০০-এর অধিক প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে।
হোয়ারাপাড়ার ঐতিহাসিক রামদাশ বিহার ও ভাবনা কেন্দ্রের বিহার অধ্যক্ষ ভদন্ত করুনানন্দ ভিক্ষু বলেন, আমাদের ৮টি বিহারসহ পুরো গ্রাম থেকে প্রায় ৩ হাজার ফানুস উড়ানো হয়েছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আমরা প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন করেছি।
বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ভদন্ত ড. প্রিয়দর্শী মহাথেরো বলেন, গৌতম বুদ্ধ বুদ্ধত্ব লাভের পূর্বে তার মাথার চুল আকাশে নিক্ষেপ করে বলেছিলেন, আমি যদি সত্যিই বুদ্ধত্ব লাভ করি তবে চুলগুলো মাটিতে পড়বে না। পরে দেখা যায়, চুলগুলো আকাশে ভেসে অদৃশ্য হয়ে যায় এবং দেবতারা তা নিয়ে চৈত্য নির্মাণ করে পূজা করেন। এখান থেকেই ফানুস উত্তোলনের প্রাচীন ধর্মীয় অনুপ্রেরণা এসেছে।
তিনি আরও বলেন, আজও আমরা সেই বিশ্বাস ও শান্তির প্রতীক হিসেবে ফানুস উত্তোলন করি। জগতের সকল প্রাণীর সুখ, শান্তি ও মঙ্গল কামনায় এই প্রবারণা পূর্ণিমায় বিশ্বজুড়ে বৌদ্ধরা ফানুস উড়ায়।