বিলাইছড়িতে যথাযোগ্য মর্যাদায় শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন

15

॥ সুজন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, বিলাইছড়ি ॥
রাঙ্গামাটির বিলাইছড়িতে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে উপজেলার সব বৌদ্ধ বিহারে শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন করা হয়েছে। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে প্রবারণা পর্যন্ত এ তিন মাস বর্ষাবাসের পর প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করা হয়। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা সাধনা লাভের জন্য এই তিন মাস আত্মশুদ্ধি ও মনের পবিত্রতার জন্য ভাবনা, ধ্যান, সাধনা অনুশীলন করেন।
দিনটি উপলক্ষে সোমবার (৬ অক্টোবর) সকালে কুতুব দিয়া সদ্ধর্মোদয় বৌদ্ধ বিহারে দিনব্যাপী নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। দেশ ও জাতির সুখ ও মঙ্গল কামনায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষরা পঞ্চশীল গ্রহণ করেন। পরে বুদ্ধের উদ্দেশ্য ফুল পূজা, বুদ্ধপূজা, বুদ্ধমূর্তি দান, সংঘদান, অষ্টপরিষ্কার দান, অনুষ্ঠিত হয়। এতে পঞ্চশীল প্রার্থনা করেন নতুন মনি তঞ্চঙ্গ্যা। এছাড়া বক্তব্য রাখেন বিহার পরিচালনা কমিটি উপদেষ্টা রঞ্জন তঞ্চঙ্গ্যা, মনিষা দেওয়ান এবং এ্যাড. বিমল তঞ্চঙ্গ্যা, মেম্বার বাবুলাল তঞ্চঙ্গ্যা, বিহার কমিটির সভাপতি জয়তুন তঞ্চঙ্গ্যা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ট দায়ক নুনু তঞ্চঙ্গ্যা, দীলিপ তঞ্চঙ্গ্যা, সুমন্ত তঞ্চঙ্গ্যা, প্রিয়রতন তঞ্চঙ্গ্যা, দিবাকর তঞ্চঙ্গ্যা, সোনাধন তঞ্চঙ্গ্যা, বর্ষা মার্মা, শ্রাবন্তী তঞ্চঙ্গ্যা-সহ শতশত দায়ক-দায়িকা উপস্থিত ছিলেন। আগামী ১২ই অক্টোবর ৬ষ্ঠ সংগীতিকারক প্রয়াত রাজগুরু জন্মস্থান কুতুব দিয়া সদ্ধর্মোদয় বৌদ্ধ বিহারে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হবে।
এইদিনটি ঘিরে দিনব্যাপী নানা আয়োজন করা হয়। এছাড়া সন্ধ্যায় আকাশে রঙিন ফানুস উড়ানো হয়। বিহারে আগত ভক্তরা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কাছ থেকে স্বধর্ম দেশনা শ্রবণ করেন। বৌদ্ধ বিহারে বিহার অধ্যক্ষ চন্দ্র কীর্তি ভিক্ষু জানান, তিন মাস বর্ষাবাসের পর এ প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করা হয়। প্রবারণার অর্থ সকলের কায়িক ও মনের বাসনা পূরণের জন্য, কারো যদি ভূল-ক্রুটি হয়ে থাকে, একে অপরের ক্ষমা, মৈত্রী নিয়ে থাকা তাই হচ্ছে প্রবারণা। এক কথায় কোনো হিংসা-বিদ্বেষ যাতে না থাকে এবং সকল প্রাণী সুখী হয়। এছাড়াও মহামতি গৌতম বুদ্ধ নির্বাণ লাভের পর আষাঢ়ি পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা তিথি পর্যন্ত তিন মাস বর্ষাবাস শেষে প্রবারণা পালন করেন। সেই থেকে বৌদ্ধধর্মীয় গুরুরা বর্ষাবাস শেষে দিনটি পালন করে আসছেন।
এছাড়াও একইভাবে উদযাপন করেন, দীঘল ছড়ি, ধূপ্যাচর, কেরন ছড়ি, আমতলী, বাঙ্গালকাটা, মাছকাবা ছড়া-বহলতলী, সাক্রাছড়ি, দোসরীপাড়া, ধুপশীল, তিনকুনিয়া, মালুম্যা, চাইন্দা, উলুছড়ি, ধুপপানি, তক্তানালা, ওড়াছরি, এগুজ্যা ছড়ি, গোয়াইনছড়ি, তাড়াছড়ি এবং তাংকইতাং বৌদ্ধ বিহার সহ উপজেলার প্রায় ৬০টি বৌদ্ধ বিহার।