খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের রিপোর্ট নেগেটিভ : অবরোধ স্থগিতের ঘোষণা জুম্ম ছাত্র-জনতার

22

॥ খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি ॥
খাগড়াছড়ি সদরের সিঙ্গিনালা এলাকার অষ্টম শ্রেণির মারমা কিশোরীর মেডিকেল রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। মেডিকেল টেস্টে গণধর্ষণ কিংবা ধর্ষণের কোনো আলামত পাননি চিকিৎসকরা। খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের ৩ জন চিকিৎসকের ২৮ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত মেডিকেল রিপোর্টে এ তথ্য পাওয়া যায়। ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে ১২ বছর বয়সী ওই কিশোরী খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়।
এদিকে, খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ সমর্থিত অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে জুম্ম ছাত্র-জনতা নামের সংগঠনটি। অষ্টম শ্রেণির মারমা কিশোরীর মেডিকেল রিপোর্ট নেগেটিভ আসার খবর প্রকাশের পরপরই অবরোধ স্থগিতের ঘোষণা দিল সংগঠনটি।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টায় দেয়া ওই স্ট্যাটাসে উল্লেখ করা হয়, চলমান অবরোধ রাত ১১টা থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। তবে দাবিগুলোর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও প্রশাসনের কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করে ভবিষ্যতে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত এক বৈঠকে জুম্ম ছাত্র-জনতার ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। যার ৬ জনই ইউপিডিএফের কর্মী। সেখানে তারা ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন।
যে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের অভিযোগ কেন্দ্র করে এত সহিংসতা, নাশকতা, প্রাণহানী সেই অষ্টম শ্রেণির মারমা কিশোরীর মেডিকেল রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। মেডিকেল টেস্টে গণধর্ষণ কিংবা ধর্ষণের কোনো আলামত পাননি চিকিৎসকরা। খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের ৩ জন চিকিৎসকের ২৮ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত মেডিকেল রিপোর্টে এ তথ্য পাওয়া যায়। মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে ১২ বছর বয়সী ওই কিশোরী খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়।
কিশোরীর বাবার অভিযোগ, ওই দিন (২৩ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় এক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট শেষে বাড়ি ফেরার পথে রাত সাড়ে ৯টার দিকে নিখোঁজ হয় তার কিশোরী কন্যা। রাত সাড়ে ১১টার দিকে স্থানীয়রা খোঁজাখুঁজি করে স্থানীয় শাসন রক্ষিত বৌদ্ধ বিহারের পাশে পানিযুক্ত জমিতে খুঁজে পায় এবং সেখান থেকে তাকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
গণধর্ষণের অভিযোগ এনে কিশোরীর বাবা ওই দিন রাতেই খাগড়াছড়ি সদর থানায় এজাহার দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ তার মেয়েকে অজ্ঞাত ৩ যুবক পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে। তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে সদর থানায় এ এজাহার দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরের দিন বুধবার বেলা ১১টার সদরের সিঙ্গিনালা এলাকার ১নং ওয়ার্ড থেকে শয়ন শীল (১৯) নামে সন্দেহভাজন এক কিশোরকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় আটক করা হয়। আদালতের নির্দেশে আটক কিশোরকে ৬ দিনের রিমান্ডে আনে পুলিশ।
মেডিকেল রিপোর্ট কিংবা আইনি প্রক্রিয়ার অপেক্ষা না করেই অষ্টম শ্রেণির স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ কেন্দ্র করে ইউপিডিএফের ইন্ধনে সহিংস সড়ক অবরোধের ডাক দিয়ে জান-মালের ক্ষতি করতে শুরু করে ইউপিডিএফ সমর্থিত এই জুম্ম ছাত্র জনতা। যার ফলে ১৪৪ ধারা জারি করতে বাধ্য হয় জেলা প্রশাসন। ১৪৪ ধারা জারি থাকার মধ্যেই ২৮ সেপ্টেম্বর গুইমারার রামসু বাজার এলাকায় সহিংস সংঘর্ষ হয়, এতে ৩ জন নিহত এবং আহত হন অনেকে।
মঙ্গলবার দুপুরে গুইমারার সংঘর্ষ-ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেফালিকা ত্রিপুরা, জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার, পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল, গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আইরিন আক্তার এবং গুইমারা থানার ওসি এনামুল হক চৌধুরী।
ঘটনার তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকলে ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়া হবে।