॥ মোঃ আজগর আলী খান, রাজস্থলী ॥
রাত পোহালে শুরু হতে যাচ্ছে সনাতন সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। শহর থেকে গ্রাম, পাড়া-মহল্লা সর্বত্র লেগেছে উৎসবের আমেজ। পূজার আনন্দঘন পরিবেশকে রাঙাতে দিন-রাত কঠোর পরিশ্রমে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা। দম ফেলার ফুরসৎ নেই তাদের। শেষ আঁচড়ের ছোঁয়ায় দেবী দুর্গা প্রতিমায় ফুটে উঠছে জীবন্ত রূপ।
রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে ৪টি মণ্ডপে মণ্ডপে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। কল্পনায় দেবী দুর্গার অনিন্দ্য সুন্দর রূপ দিতে শিল্পীর রঙ-তুলির জাদুতে প্রতিমা সাজানো হচ্ছে মহালয়া থেকেই। এখন চলছে শাড়ি ও গহনায় দেবীকে অলঙ্কৃত করার শেষ কর্মযজ্ঞ। মণ্ডপগুলোতে মৃৎশিল্পীদের যাদুকরী হাতে সাঁজানো প্রতিমা দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন ভক্তরা। এরই মধ্যে ঢাকের বাদ্য আর প্রতিমা তৈরিতে কারিগরদের ব্যস্ততা জানান দিচ্ছে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। একদিন পরেই (২৮ সেপ্টেম্বর) মহাষষ্ঠীতে দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে পাঁচদিনের শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা।
এবার রাজস্থলী উপজেলায় মোট ৪টি মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বলেন, পূজার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আনসার ভিডিপি, সেনাবাহিনী, পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে প্রতিটি মণ্ডপে নিরাপত্তার জন্য স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। এছাড়াও গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিটি মণ্ডপে আনসার ভিডিপি সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন মণ্ডপে ঘুরে দেখা যায় মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে নানান প্রস্তুতি। সাজসজ্জা, আলোকসজ্জা, প্যান্ডেল তৈরি ও ডেকারেশনসহ অন্যান্য কাজগুলো জোর গতিতে চলছে।
একজন প্রতিমা তৈরীর কারিগর বলেন, এ বছর তিনি বিভিন্ন এলাকায় ৪টি মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ নিয়েছেন। আকার ভেদে প্রতিটি প্রতিমার পারিশ্রমিক নিচ্ছেন ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
রাজস্থলী হরিমন্দির সার্বজনীন দুর্গা পূজা কমিটির সভাপতি শ্রী অমল নাথ বলেন, এখানে আমরা রাজস্থলী বাঙ্গালহালিয়াতে হিন্দু সনাতনী কয়েক শত পরিবার বসবাস করি। দীর্ঘ দিন ধরে এই উপজেলার মন্দির গুলোেতে পুজা অর্চনা হয়ে আসছে। বিজয়া দশমীর দিন বিশাল মেলা বসে মন্দির প্রাঙ্গণে। আমাদের এই মন্দিরটি পুকুর সংলগ্ন হওয়ায় প্রতি বছর মা দুর্গাকে তুলে কয়েক কিলো শোভাযাত্রা প্রদক্ষিণ করে সন্ধ্যায় বিসর্জন দেওয়া হয়। এই সময় শত শত দর্শনার্থী পাহাড়ী বাঙ্গালী উপভোগ করে। প্রতিবছর জাঁকজমকভাবে পূজা উদযাপন করা হয়।
উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জিকু কুমার দে বলেন, ধর্ম যার যার উৎসব সবার” বাঙালি জাতির মহা উৎসব দুর্গাপূজা যা আদিকাল থেকে সার্বজনীন ভাবে পালন হয়ে আসছে। প্রতিটি ঘরে ঘরে মহা আনন্দ উৎসব পালন হয়। আসুন আমরা সবাই মিলে মুক্তি লাভের জন্য দুর্গতিনাশিনী মা দূর্গার কাছে প্রার্থনা করি।
রাজস্থলী ও চন্দ্রঘোনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, মণ্ডপগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত ছাড়াও প্রতি পূজা মণ্ডপে পুলিশি টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি মণ্ডপের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলে স্বেচ্ছাসেবক রাখা হয়েছে। পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশ থাকবে। এছাড়াও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কাপ্তাই জোনের অধীন ৩৮ বীর রাজস্থলী ক্যাম্পের ক্যাম্প অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান প্রতিটি পূজামন্ডপ পরিদর্শন করেন। অপর দিকে সকল ধর্মের মানুষকে নিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির সদস্যরাও মণ্ডপগুলোতে নিরাপত্তার কাজে যুক্ত থাকবে।