॥ সুমন্ত চাকমা, জুরাছড়ি ॥
রাঙ্গামাটি জেলার জুরাছড়ি উপজেলার দুর্গম বনযোগীছড়া বাজারে অবস্থিত প্রায় ৫০ বছরের পুরাতন মসজিদটি জুরাছড়ি জোনের উদ্যোগে নতুন রূপে পুনঃনির্মাণ করে দেয়া হয়েছে।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে নবনির্মিত মসজিদটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন, জুরাছড়ি জোন কমান্ডার লেঃ কর্নেল রাশেদ হাসান সেজান এসপিপি, পিএসসি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, জোন উপ-অধিনায়ক মেজর মোহাম্মাদ মুশফাক আমিন চৌধুরী পিএসসি, যক্ষাবাজার আর্মি ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর মুহাম্মদ সিফাত রায়হান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বায়েজীদ-বিন-আখন্দ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সুরেশ কুমার চাকমা, জুরাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ইমন চাকমা, বনযোগীছড়া ইউপি চেয়ারম্যান সন্তোষ বিকাশ চাকমা, মৈদং ইউপি চেয়ারম্যান সাধনা নন্দ চাকমা, দুমদুম্যা ইউপি চেয়ারম্যান শান্তি রাজ চাকমা, রির্সোস সেন্টারের ইন্সেট্রাক্টর মোঃ মরশেদুল আলম, স্থানীয় হেডম্যান করুনা ময় চাকমাসহ স্থানীয় হেডম্যান, কার্বারীগণ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় জুরাছড়ি জোন কমান্ডার লেঃ কর্নেল রাশেদ হাসান সেজান বলেন, মসজিদ কেবল নামাজ আদায়ের স্থান নয়, এটি একটি সামাজিক ও ধর্মীয় কেন্দ্র। এই মসজিদ মুসলিম সমাজের আত্মিক চেতনা জাগ্রত করার পাশাপাশি পার্বত্য অঞ্চলের সামাজিক সম্প্রীতি ও ঐক্য সুদৃঢ় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে নির্মিত এ মসজিদটি দীর্ঘ ব্যবহারের ফলে সময়ের সাথে সাথে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে এবং প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মুসল্লিদের জনা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যায়। এলাকার মানুষ নামাজ আদায়ের জন্য মারাত্মকভাবে সমস্যায় পড়ছিলেন। স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের এই দাবি পূরণে জুরাছড়ি জোন আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসে এবং মসজিদটির পুনঃনির্মাণ কার্যক্রম হাতে নেয়।
জোনের উদ্যোগ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় মসজিদটি সম্পূর্ণভাবে সংস্কার করা হয় আধুনিক টিনশেড, ফ্যান, পানি সরবরাহের ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা যুক্ত করে মসজিদটিকে মুসল্লিদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ প্রার্থনার স্থানে রূপ দেওয়া হয়েছে।
এই জোন সর্বদা ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য বজায় রাখার লক্ষো সকল ধর্মের অনুষ্ঠান ও কার্যক্রমে অবদান রেখে আসছে। কেবল মসজিদ নির্মাণ, সংস্কার বা উন্নয়ন নয়; পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বিহারসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয় ও কর্মকাণ্ডেও এই জোন সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে।
বিভিন্ন সময়ে পূজা-পার্বণ, বৌদ্ধ পূর্ণিমা, ওয়াজ মাহফিল, ধর্মীয় উৎসব কিংবা স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসমূহে জোনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কার কাজে সহায়তা, অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা প্রদান, আর্থিক সহায়তা, প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ এবং স্থানীয় জনগণের সাথে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় সাধন।
এই ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে একদিকে যেমন সকল ধর্মাবলম্বী জনগণের মধ্যে শান্তি, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ জোরদার হচ্ছে, তেমনি অপরদিকে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় জনগণের পারস্পরিক আস্থা ও সৌহার্দাপূর্ণ সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হচ্ছে। সার্বিকভাবে এই উদ্যোগসমূহ এলাকায় দীর্ঘমেয়াদী শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।”
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও জুরাছড়ি জোনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং ভবিষ্যতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংরক্ষণ ও উন্নয়নে একসাথে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এলাকার সাধারণ মুসলিম জনগোষ্ঠী মসজিদটির পুনঃনির্মাণে ব্যাপকভাবে আনন্দিত হয়েছেন। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা মনে করেন, বহুদিন পর আবারও তারা সুন্দর ও আরামদায়ক পরিবেশে নামাজ আদায়ের সুযোগ পাচ্ছেন।