লামা-আলীকদমে লাইসেন্স বিহীন করাতকলের হিড়িক, উজাড় হচ্ছে সবুজ বন

14

॥ লামা প্রতিনিধি ॥
পার্বত্য বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলায় পরিবেশ ধ্বংসের ভয়াবহ চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠছে। করাতকল লাইসেন্স বিধিমালা-২০১২ কে প্রকাশ্যে অমান্য করে অর্ধশতাধিক করাতকল বছরের পর বছর অবৈধভাবে চলছে। দিনে-রাতে হাজার হাজার ঘনফুট কাঠ চেরাই করে শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চকরিয়া, চট্টগ্রাম, ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাচার করা হচ্ছে। এতে সরকার হারাচ্ছে বিপুল রাজস্ব, আর অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে উজাড় হয়ে যাচ্ছে সবুজ বনভূমি।
বিধিমালা অনুযায়ী সংরক্ষিত বা রক্ষিত বনভূমির ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো করাতকল স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু লামা-আলীকদমে এসব করাতকল সংরক্ষিত বনাঞ্চলের একেবারে সীমান্তঘেঁষা স্থানে গড়ে উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাতামুহুরী, সাঙ্গু, তৈন, তৈনপা ও বমু সংরক্ষিত বন থেকে চুরি হওয়া কাঠই এসব করাতকলে প্রক্রিয়াজাত করা হয়।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, বনবিভাগের নীরব ভূমিকা। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, লামা বনবিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী অর্থের বিনিময়ে এই অবৈধ ব্যবসাকে প্রকাশ্যে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। বিশেষ করে ডলুছড়ি রেঞ্জের পাইথন বাজার এলাকায় বশির ও আলাউদ্দিন নামে দুই ব্যক্তি বছরের পর বছর লাইসেন্স ছাড়া করাতকল চালাচ্ছেন। আর এই করাতকল সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে মাত্র ১০০ গজ দূরে অবস্থিত!
স্থানীয় পরিবেশবাদী, সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো বহুবার বনবিভাগ ও প্রশাসনকে লিখিত- মৌখিকভাবে অবহিত করলেও কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রধান বন সংরক্ষকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি একাধিকবার উত্থাপিত হলেও আইন প্রয়োগে রহস্যজনক নীরবতা ও গড়িমসি প্রশ্ন তুলছে-অবৈধ করাতকল বন্ধে বনবিভাগ ইচ্ছাকৃতভাবে নিষ্ক্রিয় নাকি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের দালালিতে মদদ দিচ্ছে?
স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, অবিলম্বে এসব লাইসেন্সবিহীন করাতকল বন্ধ করতে হবে এবং বনবিভাগের সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় মাতামুহুরী, সাঙ্গু ও পার্বত্য অঞ্চলের সবুজ বনভূমি অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে।