দখল আর দূষণে বিপর্যস্ত রাজস্থলীর বাঙ্গালহালিয়ার খাল

4

॥ মোঃ আজগর আলী খান, রাজস্থলী ॥
রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া বাজারের পাশে খালটি বাংলাদেশের পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়ার নিয়ার একটি খাল। খালটির দৈর্ঘ্য ১৫ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১৫ মিটার এবং খালটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাঙ্গালহালিয়া ডাক বাংলা পাড়ার খালটি রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকা হতে উৎপত্তি লাভ করেছে। অতঃপর এই খালের জলধারা রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে কর্ণফুলী নদীতে নিপতিত হয়েছে। কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়ন নারানগিরি মতি পাড়া দিয়ে প্রবাহকালে বেশ কয়েকটি ছোট খাল ও ছড়া এই খালের সাথে মিলিত হয়েছে। মৌসুমি প্রকৃতির এই খালে সারাবছর পানি প্রবাহ থাকে না। শুষ্ক মৌসুমে অনেকটা পানি শূন্য হয়ে পড়ে এই খাল। তবে বর্ষাকালে খালটিতে স্বাভাবিকের চেয়ে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। এসময় পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে যায় আশেপাশের ডাক বাংলা পাড়া, বাজার এলাকা।
দখল-দূষণে বিপর্যস্ত বাঙ্গালহালিয়া খাল ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নীরব সাক্ষী। বছরের পর বছর সংস্কারের অভাব আর অব্যাহত বর্জ্য নিক্ষেপের ফলে উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া বাজার ওপর দিয়ে বয়ে চলা এ খালের তার প্রকৃত রূপ হারাচ্ছে। এক সময়ে এই খালে কেন্দ্রিক গড়ে উঠেছিল রাজস্থলী উপচেলার ঐতিহ্যবাহী বাঙ্গালহালিয়া বাজার। কিন্তু বর্তমানে এসব বাজার থেকে প্রতিদিন বর্জ্য অবাধে ফেলার কারণে ছোট খাল টি ভরাট হয়ে আরো ছোট হয়ে আসছে। যখন-তখন বাজারের পাশেই বর্জ্য নিক্ষেপের কারণে দুর্গন্ধে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বর্জ্যরে দুর্গন্ধে এসব জায়গা দিয়ে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বাজারের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে প্যাথলজিসহ নানা স্থাপনা থেকে বর্জ্য এ খালেতে ইচ্ছামতো ফেলা হচ্ছে। এমনকি বাজারের গ্রামের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে কুড়িয়ে আনা বর্জ্যও ফেলা হয় এই খালে। ফলে খালের পানি দূষিত হয়ে নানা প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে।
বালু তোলার মেশিন ও খালের জায়গা দখল প্রতিদিন এ ছোট খাল থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে দুর্বৃত্তরা। কিন্তু এতদ স্বত্ত্বেও ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করা যাচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ বালু উত্তোলনকারী সিন্ডিকেট এতই বেপরোয়া যে, তারা কাউকে পরোয়াই করছে না। এছাড়া খালের বিভিন্ন স্পটে ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণেরও অভিযোগ রয়েছে।
বাঙ্গালহালিয়া বাজারে জন্ম ৭০ বছর বয়সী সানুচিং। তার শৈশবের সব স্মৃতি বর্ণনা করে জানালেন, এক সময় এই খালে স্রোত ছিল। এই খালে অনেক সুন্দর ছিল, খালে মাছ ধরে অনেকে জীবন-জীবিকা যেমন চালিয়েছেন তেমনি খাবারের পাতেও খালের মাছ ছিল একটি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু দূষণে বিপর্যস্ত এই খালে এখন মাছের দেখা পাওয়া মুশকিল।
ড্রেজার মেশিন বন্ধসহ খাল ড্রেজিংয়ের দাবি, খাল না থাকলে জীবন-জীবিকা, জীববৈচিত্র এবং সংস্কৃতি কোনো কিছুই থাকবে না। তাই খালকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। খালের একাধিক অংশে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। এতে নাব্যতা হারিয়ে খালের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে, খাল থেকে ড্রেজিংয়ে মাধ্যমে বালু উত্তোলন করায় দুই তীর ভেঙে যাচ্ছে। খাল বিলীন হয়ে যাচ্ছে খালের তীরবর্তী জমি বাজার ও ঘর-বাড়ি।
পরিবেশবাদীদের দাবি: বাঙ্গালহালিয়া খালটি ভয়াবহ দূষণের শিকার হচ্ছে। এতে খাল ক্রমে ভরাট হয়ে স্বাভাবিক নাব্যতা হারিয়ে গেছে। এ ছাড়া খালের দুই তীর দখল হয়ে সেগুলো ধীরে ধীরে সর্পিলাকার ধারণ করছে। বাঙ্গালহালিয়া খালকে বাঁচাতে হবে। একে অবিলম্বে পুনঃখনন করতে হবে। বাঙ্গালহালিয়া খাল দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এছাড়া এ খাল দূষণ রোধ করতে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এ বিষয়ে ৩২০নং কাকড়াছড়ি মৌজার ভারপ্রাপ্ত হেডম্যান চাথোয়াইমং মারমা বলেন, কিছু কিছু দখলদারী দীর্ঘদিন ধরে খালের ভিতরে অবৈধ ভাবে ঘর নির্মাণ করে আসছে। পাশাপাশি বালু উত্তোলন করে পরিবেশ নষ্ট করছে। ফলে খালের পানি বর্ষাকালে তীব্র স্রোতে বাজার ও আশপাশের এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়।