॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
পিলার ছাড়া কোন বাড়ি নির্মাণের কথা বললে নিশ্চয় অবাক হবেন। রাজিও হবেন না তেমন বাড়ি নির্মাণে। অথচ আমাদের দেশেই আছে এমন এক মসজিদ সেখানে নেই কোন পিলার। শুধু চারদিকের দেয়াল দিয়ে তৈরী রাঙ্গামাটির কাপ্তাই কর্ণফুলি পেপার মিলস আবাসিক এলাকায় এই মসজিদ। যেখান থেকে নিয়ম করে দিনে পাঁচবার মুয়াজ্জিনের সুললিত কণ্ঠে উচ্চারিত হয় মহান আল্লাহর মহিমা আজান। তবে দৃষ্টিনন্দন পিলার ছাড়া এই মসজিদটির সংকট নিরসনে সরকার ও বিত্তশালীদের সহায়তা চাইলেন স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা।
জানা যায়, চারপাশে সবুজ নানান গাছপালার মাঝখানে অপুরুপ সুন্দর এই মসজিদ। রাঙ্গামাটির কাপ্তাই কর্ণফুলি পেপার মিলস আবাসিক এলাকায় পিলার বিহীন এই মসজিদটি বড় মসজিদ নামে পরিচিত। ১৯৬৭ সালে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শ্রমিক এনে কর্ণফুলী পেপার মিলস এর শ্রমিকদের জন্য মসজিদটি তৈরী করেন দাউদ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান আহমেদ দাউদ এইচ কে। মসজিদে সুনিপুর্ণ কারুকার্য মুসলিম ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবে সকলের নজর কাড়ে এই মসজিদটি। প্রচন্ড গরমেও সবুজের মাঝে মসজিদের ভিতরটা সবসময় থাকে শীতল।
১৩ হাজার বর্গফুটের মসজিদটিতে একসাথে ৪ থেকে সাড়ে হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লী এক সাথে নামাজ আদায় করতে পারে। মসজিদটিতে দৃষ্টিনন্দন প্রায় ৩৮টি বাতি রয়েছে। এছাড়া মসজিদের তিনপাশে রয়েছে ২৩টি জানালা, ৯টি দরজা। সেই সাথে মসজিদের উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব দিকদিয়ে প্রবেশপথ রয়েছে। মসজিদটির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে স্তম্ভ না থাকার কারণে মসজিদে মুসুল্লিরা যেখানেই দাঁড়াননা কেন প্রত্যেকেই খতিব কিংবা ইমামকে দেখতে পান। একসঙ্গে ১ হাজার ৭০০ মুসল্লি সালাত আদায় করতে পারেন এই মসজিদে।
তবে মুসলিম নির্দশনের ঐতিহ্য বহন করলেও বর্তমানে সংস্কারের অভাবে মসজিদটির বেহাল দশা। খসে পড়ছে সিলিং। বৃষ্টিতে পানি পড়ে মসজিদে। খসে পড়ছে দেয়ালের আস্তর। অর্থাভাবে সংস্কার করাও যাচ্ছে না। মসজিদটির বেহাল দশা হলেও এইখানে নামাজ পড়ে মনের শান্তির কথা জানান মুসল্লিরা। একইসাথে সরকার ও দানবীরদের কাছে মসজিদ সংস্কারে চাইলেন সহায়তা।
রাঙ্গামাটির কাপ্তাই কর্ণফুলি পেপারস মিলস বড় মসজিদের ইমাম এটি এম আব্দুল্লাহ ও কর্ণফুলি পেপারস মিলস বড় মসজিদের মুয়াজ্জিন মোঃ মহিউদ্দিন জানান, রাঙ্গামাটির কাপ্তাই কর্ণফুলি পেপারস মিলস বড় মসজিদের ব্যবহৃত মার্বেল টাইলস তৎকালীন করাচী থেকে আনা হয়। কর্ণফুলী পেপার মিলস একসময় খুবই জমজমাট থাকার কারনে অনেক মুসল্লী হলেও বর্তমানে পেপার মিলসটিতে শ্রমিক সংখ্যা কমে যাওয়ায় মুসজিদটিতে নামাজ আদায়ে মুসল্লিও অনেক কমে গেছে। ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি দেখতে দেশী-বিদেশী অনেক পর্যটক আসে। তবে আর্থিক সংগতি না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে মসজিদটির সংস্কার হয়নি। রং ওঠে গিয়ে দেয়ালে শ্যাওলা জমেছে। অনেক স্থানেই দেয়ালে ফাটল ও ভাঙন ধরেছে। বর্ষায় ছাদ চুইয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে মেঝেতে। বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে ঝরে পড়ে সিলিং। মেঝেতে পানি জমায় সালাত আদায়ে ভোগান্তিতে পড়েন মুসল্লিরা। খসে পড়া সিলিং আর মেঝের পানিতে পিছলে আহত হয়েছেন অনেক মুসল্লি। তাই আর্থিক সংকট নিরসনের দাবি পেশ ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের।
রাঙ্গামাটির কাপ্তাই কর্ণফুলি পেপার মিলস এর ঐতিহ্যবাহী স্তম্ভবিহীন এই মসজিদটির মৌলিকতা ধরে রেখে সংস্কার ও মসজিদটিকে প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার দাবি স্থানীয়দের।