॥ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা ॥
ফ্যাসিবাদী আওয়ামীলীগের নেতাদের সাথে আতাত, স্পট নিলামের নামে সরকারকে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত ও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করার অভিযোগে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মঈন উদ্দিন এর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করেছে লামা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের পূর্বচাম্বী, আমতলী পাড়া, ডিগ্রীখোলা, ধূইল্যাপাড়া, কম্পনিয়া এলাকার লোকজন। অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন ইতিমধ্যে দুদক ও বান্দরবান জেলা প্রশাসন থেকে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করে এবিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক মিজ শামীম আরা রিনি মুঠোফোনে প্রতিবেদককে জানান, ‘দুদকে করা অভিযোগের অনুলিপি জেলা প্রশাসনকে দেয়া হয়েছে। এবিষয়ে জেলা প্রশাসনের একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে আহবায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
লামা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের পূর্বচাম্বী, আমতলী পাড়া, ডিগ্রীখোলা, ধূইল্যাপাড়া, কম্পনিয়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ২৭ জনের স্বাক্ষরিত এক অভিযোগে উল্লেখ করেন, বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে আওয়ামীলীগের কতিপয় নেতা যথাক্রমে- লোহাগাড়া উপজেলার দক্ষিণ সুখছড়ি গ্রামের মোঃ আবদুল আজিজ এর ছেলে দিদারুল ইসলাম জিসান গং, লামার আজিজনগর ইউনিয়নের পূর্বচাম্বী আমতলী এলাকার মৃত জয়নাল আবেদীন মেম্বার এর ছেলে মোঃ আবুল হোসেন গং এবং লামার সরই ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের ওয়ার্ড সভাপতি ও ইউপি মেম্বার নাছির উদ্দিন গং মিলে চাম্বী মৌজার মুসলিম পাড়ায় ডলুখাল হতে ২টি স্পটে অবৈধভাবে প্রায় ৮ লক্ষ ঘনফুট উত্তোলন করে। প্রায় ৪ বছর পূর্বে এই বালুগুলো পাচার করার জন্য মজুদ করে রাখা হয়েছিল। পরিবেশ অধিদপ্তরের বাঁধার কারণে বালুগুলো পাচার করা সম্ভব হয়নি।
অতীব দুঃখের বিষয় উল্লেখিত আওয়ামীলীগ নেতারা লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মঈন উদ্দিন এর সাথে আঁতাত করে অবৈধভাবে উত্তেলিত এই সকল বালুগুলো নামমাত্র মূল্যে স্পট নিলাম দেখায়। স্পট নিলামে বালুর প্রকৃত পরিমাণ উল্লেখ করে নিলাম দেওয়া হয়নি। ২টি স্পটে ৮ লক্ষাধিক ঘনফুট বালু মজুদ থাকলেও স্পট নিলামে বালুর পরিমাণ দেখানো হয়েছে মাত্র দেড় লক্ষ ঘনফুট। একটি সমঝোতার মাধ্যমে বালুর প্রকৃত পরিমাণ কমিয়ে স্পট নিলাম দেওয়া হয়েছে।
স্পট নিলামের ফলে এই এলাকায় অবাধে বালু পাচার করা হচ্ছে। অবৈধভাবে বালু পাচারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় লোকজনের সাথে বালু পাচারকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে। স্পট নিলামের নামে নামমাত্র মূল্যে ৮ লক্ষাধিক ঘনফুট বালু আওয়ামীলীগের নেতাদের দিয়ে দেওয়ায় সরকার প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে ও সরকারের কোন ধরনের নিয়মনীতিকে অনুসরণ করে নাই। উম্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে এই বালুগুলো বিক্রয় করার মৌখিক আবেদন জানানোর পরও তিনি আমাদের আবেদন আমলে নেয়নি। এবিষয়ে স্থানীয়রা উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের অনুরোধ করে।
লামা পরিবেশ রক্ষা পরিষদের আহবায়ক রুহুল আমিন বলেন, বালু নিলামের কারণে অবৈধ বালু উত্তোলন বেড়েছে। বর্তমানে লামা উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৩টি ইউনিয়নে কমপক্ষে ৪০টির অধিক স্থানে অবৈধ বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। অতিরিক্ত লোড নিয়ে অবৈধ বালুর পরিবহনে গ্রামীণ অবকাঠামো, ব্রিজ-কালভার্ট ও রাস্তাঘাট ভেঙ্গে গেছে। ইতিমধ্যে দুইটি ব্রিজ ধসে পড়েছে। আরো ৩টি ব্রিজ ধসে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মঈন উদ্দিন প্রতিবেদককে বলেন, অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। স্থানীয় লোকজনের সামনে সার্ভেয়ার দিয়ে পরিমাপ করে বালু স্পট নিলাম দেয়া হয়েছে।