আলীকদমে রহস্যজনক মৃত্যু: দুই পর্যটকের লাশ উদ্ধার, নিখোঁজ-১; প্রশ্ন অনেক

24

॥ হাসান মাহমুদ, আলীকদম ॥
গত ১১ জুন আলীকদমের শামুক ঝর্ণা দেখতে পর্যটক গ্রুপের ২২ জনের মধ্যে এক জনের লাশ ১২ জুন ভোর ৪টার সময় পাওয়া গিয়েছিলো ফরেস্ট অফিস ঘাটে। নিখোঁজ ছিলো ২জন। শুক্রবার (১৩ জুন) সকাল ১০টায় উপজেলার তৈন খাল এলাকার আমতলী ঘাট থেকে স্মৃতি আক্তার (২০) নামে নিখোঁজ হওয়া আরো একজনের লাশ থেকে উদ্ধার করা হয়। এখন পর্যন্ত মোঃ হাসান চৌধুরী শুভ (২৯) নামের একজন নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ মোঃ হাসান চৌধুরী শুভ ছিলেন, ট্যুর গ্রুপের কো-হোস্ট। স্মৃতি আক্তার ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার মোঃ হাবিবুর রহমান ও রুপিয়া আক্তারের কন্যা। উদ্ধার হওয়া স্মৃতি আক্তার লাশ তাঁর সফরসঙ্গী পর্যটকরা শনাক্ত করেছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ০৯/০৬/২০২৫ তারিখে ৩৩ সদস্যের একটি পর্যটক দল “ট্যুর এক্সপার্ট গ্রুপ” এর মাধ্যমে আলীকদমে আসে। এই ট্যুর গ্রুপের এডমিন ছিলেন, বর্ষা আক্তার। ১১ জুন ৩৩ জনের দলটি দুটি দলে ভাগ হয়ে গত ১১ জন চলে যায় ক্রিসতং অভিযানে এবং ২২ জনের দলটি উপজেলার তৈন খাল এলাকার সামুক ঝিরি ঝর্ণা দেখতে যায়। ঝর্ণা দেখতে গিয়ে হঠাৎ বারী বর্ষনের ফলে পাহাড়ি ঝিরিতে প্রবল শ্রোতের সৃষ্টি হয়। আর এই পাহাড়ি শ্রোতের কবল পড়ে নিখোঁজ হয় তিন পর্যটক।
আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুলাহ আল মুমিন নিখোঁজ পর্যটকের খোঁজে উদ্ধার অভিযান অব্যহত রয়েছে। আলীকদম থানা সূত্রে জানা গেছে উদ্ধার হওয়া স্মৃতি আক্তারের লাশ ময়না তদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
৩জন পর্যটকের মৃত্যু কি শুধুই কাকতালীয়?
থানায় হাজির হওয়া পর্যটকরা জানিয়েছেন, ঝর্ণা দেখতে গিয়ে হঠাৎ বারী বর্ষনের ফলে পাহাড়ি ঝিরিতে প্রবল শ্রোতের সৃষ্টি হয়। আর এই পাহাড়ি শ্রোতের কবল পড়ে নিখোঁজ হয় তিন পর্যটক। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে নানা প্রশ্ন।
১. এডমিনের পূর্ব ইতিহাস ও রহস্য:
বিগত ২০২২ সালের ১২ আগস্ট আলীকদম উপজেলার তৈনখাল এলাকার সাইংপ্রা ঝর্ণা দেখতে গিয়ে মোহাম্মদ আতাহার ইসরাক রাফি নামে এক পর্যটকের মৃত্যু হয়েছিল। আশ্চর্যজনক ভাবে, সে সময় রাফির স্ত্রী বর্ষা আক্তার ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। এই বর্ষা আক্তারই এবারের ৩৩ জনের ট্যুর গ্রুপের মূল অ্যাডমিন। প্রশ্ন উঠছে, কেন দুটি ঘটনাই বর্ষা আক্তারের গ্রুপের সাথে ঘটলো? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ মন্তব্য করছেন, আর কত লাশ চাই বর্ষা আক্তারের?
২. গাইডের অনুপস্থিতি:
থ¬ানায় উপস্থিত হওয়া ১৯ জন পর্যটকের দেওয়া ভাষ্য অনুযায়ী, ৩৩ জন পর্যটকের জন্য মাত্র একজন ট্যুরিস্ট গাইড ছিলেন, যার নাম সিদ্ধার্থ তঞ্চঙ্গ্যা। ঘটনার তিন দিন পরও সিদ্ধার্থ তঞ্চঙ্গ্যা কেন থানায় হাজির হতে পারেননি, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
৩. বিবস্ত্র মরদেহ উদ্ধারের কারণ:
সবচেয়ে বেশি চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে উদ্ধার হওয়া দুটি মরদেহের সম্পূর্ণ বিবস্ত্র অবস্থা। প্রশ্ন উঠছে, পাহাড়ি ঝিরি বা খালের প্রবল স্রোত থাকলেও তা কি একটি মরদেহকে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে ফেলতে পারে? অনেকে মনে করছেন, এর পেছনে অন্য কোনো রহস্য থাকতে পারে এবং তা তদন্তের দাবি রাখে।
৪. পুলিশের ভাষ্য:
বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিলাম আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির্জা জহির উদ্দন এর সাথে। তিনি জানান, পাহাড়ি ঝিরি খালের নদীপে প্রবল শ্রোত, গাছপালা ও পাথর থাকে। হতে পারে প্রবল শ্রোতের কারণে মরদেহগুলি বিবস্ত্র হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, তদন্ত অব্যহত থাকবে। মরদেহগুলি ময়না তদন্তের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। প্রাকৃতির কারণ ছাড়া অন্য কোন কারণ থাকলে তা ময়না তদন্তে উঠে আসবে।
আলীকদমে পর্যটকদের একের পর এক এই ধরনের মৃত্যু এবং এর সাথে জড়িত নানা প্রশ্ন স্থানীয় প্রশাসন ও পর্যটন শিল্পের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনাগুলোর রহস্য উন্মোচন এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।