কাপ্তাই নতুনবাজার আনন্দ মেলা পশুর হাট: পাহাড়ি গরুর চাহিদা বেশি

18

॥ ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই ॥
বুধবার (৪ জুন) সকাল ১০টা। সবেমাত্র ক্রেতারা আসতে শুরু করেছে। সেই সকাল হতে বিক্রেতারা গরু নিয়ে বসে আছে। এটি রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলায় নতুনবাজার সংলগ্ন আনন্দ মেলা মাঠের দৃশ্য। কাপ্তাই উপজেলায় একটি মাত্র পশুর হাট। যেখানে পাহাড়ী গরুর বেশ দেখা মিলে। চাহিদাও আছে।
প্রতিবছর কোরবান এলে আশেপাশের কয়েকটি উপজেলা হতে লোকজন আসে এই হাটে পাহাড়ি গরু ক্রয় করতে। আর বিক্রতেরাও পাহাড়ি বিভিন্ন উপজেলা হতে গরু নিয়ে আসে এই হাটে।
এসময় কথা হয় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বনগ্রাম হতে কোরবানির গরু ক্রয় করতে আসা আবু বক্কর, মো: সেলিম এবং রমিজ উদ্দিন এর সাথে। তাঁরা সকলেই জানান, পাহাড়ি গরু ক্রয় করতে আসছি। প্রশ্ন করা হল পাহাড়ি গরু কেন? এক কথায় উত্তর দিল পাহাড়ি গরু পাহাড়ে থেকে লতা, পাতা, ঘাসসহ ন্যাচারেল খাবার খায়। যার ফলে তাদের চর্বি কম থাকে। কম চর্বি যুক্ত গরু ভালো হয়। এবং মাংস সুস্বাদু হয়। এসকল গরুর শরীরে কোন ধরনের মোটাতাজাকরণ ইনজেকশন দেয়া হয়না। এক কথায় পাহাড়ি গরু সেরা।
কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন এর খুরশিদ আলম, সোবহান উদ্দিন এবং আবু কাওসারও এদিন এসেছে এই হাটে। তাঁরা জানালেন, এতদিন বৃষ্টি থাকায় গরু কিনতে আসতে পারি নাই। আজকে আসলাম সকাল ৯টায়। ৭০ হাজার টাকা দিয়ে একটি পাহাড়ি গরু কিনেছি। যেটা বাহির হতে কিনলে লাখ টাকার মতো হতো।
এসময় কথা হয় গরু ব্যবসায়ী রফিক, জহির, কুদ্দুস ও কালাম এর সাথে। তাঁরা জানান, এই বছর হাঁটে গরু কম। হাটে গরু কম উঠার একমাত্র কারণ হল আগের মত পাহাড়ি সম্প্রদায়ের লোকজন আর গরু লালন পালন করতে আগ্রহী নয়। তারা তাদের নিজস্ব জমিতে কলা, আম, আনারস, লিচু সহ বিভিন্ন মিশ্র ফল চাষে আগ্রহী হওয়ার ফলে গরু লালন পালন কমিয়ে দিয়েছে। যার ফলে এবার কোরবানির গরু হাটে পাহাড়ি গরু গত বছরের চেয়ে তুলনামূলক কম উঠেছে। তবে দাম নাগালের মধ্যে রয়েছে।
নতুনবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদিন বলেন, কাপ্তাই উপজেলার একমাত্র কোরবানি পশুর হাট এই আনন্দমেলা মাঠ। এখানে তুলনামূলক অন্যান্য হাট হতে দাম কম হওয়ায় এছাড়া পাহাড়ি গরু হাটে আসায় এই পশুর হাটের চাহিদা রয়েছে। তবে গত কয়েকদিন বৃষ্টি থাকায় ক্রেতা সমাগম কম হলেও আমরা আশা করছি আজ (বুধবার) হতে এই পশুর হাট জমে উঠবে।
কাপ্তাই উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড: এনামুল হক হাজারী বলেন, প্রাণী সম্পদ বিভাগের ৩ সদস্যের একটি টিম সবসময় কাপ্তাই কোরবানি পশুর হাটে কাজ করছে। কোন পশুর সমস্যা হলে আমরা চিকিৎসা সেবা প্রদান করছি।
প্রসঙ্গত; কাপ্তাই নতুন বাজার আনন্দ মেলা মাঠে প্রতি বছর কোরবানি গরুর হাঁট বসে। রাঙ্গামাটি জেলার দূর্গম বিভিন্ন উপজেলা থেকে কাপ্তাই হ্রদ ধরে ইঞ্জিন চালিত বোটে করে পাহাড়ি গরু আনা হয় বিক্রয় করার জন্য। কাপ্তাই উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে মিনি ট্রাকযোগে রাঙ্গুনিয়া, রাউজান সহ বিভিন্ন উপজেলায় নেয়া হয় এই সব গরু।