টানা বৃষ্টিতে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধ্বস, আশ্রয় কেন্দ্রে ১৪১ জন

13

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
রাত থেকে টানা বৃষ্টি ও সকাল থেকে বর্জ্রপাতের ফলে রাঙ্গামাটির সাধারণ মানুষের মাঝে আতংক দেখা দিয়েছে। শনিবার সকালে বৃষ্টি না থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে আবারো বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আতংক ছড়িয়েছে রাঙ্গামাটিবাসীর মাঝে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে রাঙ্গামাটির বিভিন্ন উপজেলা স্কুল, বসতবাড়ী ও ফসলী জমি প্লাবিত হয়েছে। রাঙ্গামাটি চট্টগ্রাম সড়কের সাপছড়ি, কলাবাগানসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধ্বসের ফলে সড়ক যোগাযোগ সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। পরে সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মীরা তাৎক্ষণিক রাস্তার মাটি সরিয়ে দিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করে।
অন্যদিকে প্রবল বৃষ্টিতে রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলায় কাউখালী-ঘিলাছড়ি সংযোগ সড়ক ধসে পড়ায় বিছিন্ন হয়ে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ। রোববার (১ জুন) সকালে এই ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। শনিবার রাত থেকে জেলায় প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে কাউখালী-ঘিলাছড়ি সংযোগ সড়ক দুই ভাগে বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রবল বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢলের কারণে সড়কের দু’পাশ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় মূলত সড়কটি বিছিন্ন হয়ে যায়। বর্তমানে এইং সড়ক দিয়ে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই এলাকায় বসবাসরতরা চরম বিপাকে পড়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন উপজেলার সড়ক ও পাহাড় ধ্বসের ফলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রাঙ্গামাটি শহরের টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১৪১ জন আশ্রয় গ্রহণ করেছে। রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাঙ্গামাটি শহরের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে চলছে মাইকিং। পাহাড়ের পাদদেশে থাকা লোকজনকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করছে। রাঙ্গামাটি শহরে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের ৪টি মোবাইল টিমের সাথে স্বেচ্ছাসেবক টিম কাজ করছে।
জুরাছড়ি উপজেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রূপময় চাকমা জানান, গত কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণে পাহাড়ী ফলের কারণে উপজেলার মৈদং ইউনিয়নের জামুরাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শীলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে।
বনযোগীছড়া ইউপি চেয়ারম্যান সন্তোষ বিকাশ চাকমা বলেন, টানা বৃষ্টিপাতে জুরাছড়ি, বনযোগীছড়া, মৈদং ও দুমদুম্যা ইউনিয়নে বসত ঘর প্লাবিত এবং ধান্য জমিসহ বিভিন্ন শাক-সবজি পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে। রাস্তাঘাট প্লাবিত হওয়াই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছে। এদিকে ৫দিন ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন তাকায় জনজীবনে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত আসমা জানান, রাঙ্গামাটি পৌর শহরে বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধ্বসের আশংকায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী জনগনকে দুটি আশ্রয় কেন্দ্রে উঠিয়ে আনা হয়েছে। তিনি বলেন, রাঙ্গামাটি সদর উপজেলায় এখনও পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্র লোকনাথ মন্দিরে ২০টি পরিবারের ৮২ জন আশ্রিত রয়েছে। এছাড়া রাঙ্গামাটি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে ১০ পরিবারের ৪৫ জন আশ্রিত রয়েছে। দুটি আশ্রয় কেন্দ্রে মোট ১২৭ জনের জন্য আজ রাত এবং আগামীকাল সকাল পর্যন্ত খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য স্যালাইন, প্যারাসিটামল, ফ্লাজিল সরবরাহ করা হয়েছে।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্ল্যাহ জানান, রাঙ্গামাটিতে যে কোন দূর্যোগ মোকাবেলায় প্রশাসন সর্বাত্মক প্রস্তুত রয়েছে। প্রবল বর্ষণের ফলে যাতে কোন প্রকার প্রাণহানীর ঘটনা না ঘটে তার জন্য প্রতিটি এলাকায় স্বেচ্চাসেবক টিম গঠন করা হয়েছে। যে কোন দূর্যোগ দেখলে জেলা প্রশাসনের রেসকিউটি টিমের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক টিম মাঠে রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের প্রবল বর্ষণে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মানিকছড়ি শালবাগান অংশে ১০০ মিটার রাস্তা সম্পূর্ণ ধসে গিয়ে দীর্ঘ ৯ দিন সারাদেশের সঙ্গে রাঙ্গামাটির সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলো।