॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জমজমাট হয়ে উঠেছে দেশের কোরবানির পশুর বাজার। তবে এবছর ক্রেতাদের নজর কেড়েছে রাঙ্গামাটির পাহাড়ি গরু। স্বাস্থ্যবান ও প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা এসব গরুর চাহিদা বেড়েই চলেছে।
রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি, লংগদু, মাইনী, নানিয়ারচর, কাউখালী, এবং রাজস্থলীর ফারুয়া ইউনিয়নের গরুগুলোকে নিচ্ছেন অনেক ক্রেতা। প্রতিদিন ট্রলারে করে ৪০০ থেকে ৫০০ গরু রাঙ্গামাটি শহরে আনা হচ্ছে।
শহরের পৌর ট্রাক টার্মিনাল থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায়-বিশেষ করে চট্টগ্রামের রাউজান, হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া, পটিয়া, চন্দনাইশসহ আশেপাশের অঞ্চলে এসব গরু সরবরাহ করা হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পাহাড়ি গরুর বিশেষত্ব হলো এরা কোনো কৃত্রিম খামারে বড় হয়নি। বরং প্রাকৃতিক ঘাস, লতা-পাতা খেয়ে পাহাড়ি পরিবেশেই বেড়ে উঠেছে। ফলে এদের স্বাস্থ্য ভালো, মাংসের মানও উন্নত। অনেকেই মনে করেন, পাহাড়ি গরুতে কোনো ধরনের ক্ষতিকর ওষুধ বা ফিড ব্যবহার করা হয় না, যা ক্রেতাদের মধ্যে আলাদা আস্থা তৈরি করেছে।
তবে গরু পরিবহন ও বিক্রির ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। তারা অভিযোগ করেছেন, শহরের পৌর টার্মিনালে ও রাঙ্গামাটি চট্টগ্রাম সড়কে বিভিন্ন টোল আদায়কেন্দ্রে ইচ্ছেমতো টাকা দাবি করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট হারে টোল আদায়ের নিয়ম থাকলেও, সব স্থানে অতিরিক্ত টোল ও অবৈধ চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এতে করে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
এক ব্যবসায়ী জানান, রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে প্রতিটি ট্রলারে করে গরু আনতে এবং রাঙ্গামাটি থেকে গাড়ীতে করে তা অন্যত্র পরিবহনের সময় ৫০-৬০ হাজার টাকা শুধু অতিরিক্ত খরচ দিতে হচ্ছে। এসব খরচ গরুর দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। অন্য একজনের অভিযোগ, কোরবানী পশুর সরবরাহের সময় চাঁদাবাজি ও অতিরিক্ত টোল আদায় বন্ধ না হলে সাধারণ ক্রেতাদের নাগালে ভালো গরু পৌঁছানো কঠিন হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানান, অবৈধ টাকা আদায় বা চাঁদাবাজির বিষয়ে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোরবানির পশু পরিবহন ও বেচাকেনা নির্বিঘ্ন রাখতে প্রশাসন সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে।
রাঙ্গামাটি জেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ও জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের উপ- পরিচালক ডা তুষার কান্তি চাকমা বলেন, এবার রাঙ্গামাটি জেলায় ৫শত কোটি টাকার উপরে কোরবানী পশু ব্যবসা হতে পারে বলে তারা ধারনা করছেন। তিনি জানান, রাঙ্গামাটির ১০টি উপজেলায় ৬৮,৮৬৫টি গরু উৎপাদিত রয়েছে। জেলার ১৯টি কোরবানী পশুর হাটে এসব পাহাড়ি গরুর বিক্রয় হবে। কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ি গরুর বাজারে আরো চাঙা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
উপ-সহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা রতন কুমার দে জানান, রাঙ্গামাটি জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের মাধ্যমে জেলার ১৯টি কোরবানি পশুর হাটে মেডিক্যাল টিমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাঙ্গামাটির ১০টি উপজেলায় উপ সহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তারা প্রত্যেকটি পশুর হাটে মেডিক্যাল টিমের মাধ্যমে প্রাণী সম্পদ বিভাগের যত টুকু সেবা দেয়ার প্রয়োজন তা দিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি, এই মৌসুমে রাঙ্গামাটির পশু ব্যবসা জেলার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। রাঙ্গামাটি থেকে কোরবানী পশুর পরিবহন ও বিক্রির ক্ষেত্রে হয়রানি বন্ধ হলে ব্যবসায়ী ও ক্রেতা-উভয়েই লাভবান হবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।