কুকি-চিনের উদ্ধার হওয়া ২০ হাজার ইউনিফর্ম ঘিরে নানা প্রশ্ন

6

॥ ডেস্ক রিপোর্ট ॥
চট্টগ্রামে নগরীতে পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) জন্য তৈরি করা ২০ হাজার ৩০০ পিস ইউনিফর্ম উদ্ধারের পর নানা তা নিয়ে নানা আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। নতুন করে প্রশ্ন সামনে এসেছে- পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা কত? এরই মাঝে কুকি-চিন নতুন করে পাহাড়ে বিস্তার ছড়াচ্ছে কি-না সেই উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
সচেতন মহল বলছে, সম্প্রতি চট্টগ্রাম থেকে কুকি চিনের পোশাক উদ্ধারের বিষয়টি হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। কুকি চিনের তৎপরতার বিষয়টি এখনই খতিয়ে দেখা উচিত। পাশাপাশি পোশাক উদ্ধারের বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠাকি বিবৃতি না আসায় বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
এর আগে গত শনিবার (১৭ মে) রাতে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি এলাকার ‘রিংভো অ্যাপারেলস’ নামে একটি পোশাক কারখানা থেকে এসব ইউনিফর্ম জব্দ করা হয়। অভিযানকালে কারখানার মালিকসহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । তবে পোশাক জব্দ ও গ্রেপ্তারের ৭ দিন পর ঘটনাটি জানাজানি হয়েছে গত রোববার। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বীকার করা হয়নি।
গ্রেপ্তাররা হলেন, সাহেদুল ইসলাম, গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দার। এদের মধ্যে সাহেদুল ইসলাম ওই কারখানার মালিক। অন্যরা এসব ইউনিফর্ম তৈরির কার্যাদেশ এনেছিলেন।
বায়েজিদ থানা পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় গত ১৮ মে চার জনকে আসামি করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। নগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় গ্রেপ্তার তিন জন ছাড়াও রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ের মংহ্লাসিং মারমা (৩৭) নামের এক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত মার্চ মাসে ইউনিফর্মগুলো তৈরির কাজ দিয়েছিলেন গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দার। তারা মংহ্লাসিং মারমা প্রকাশ মং নামের একজনের কাছ থেকে ২ কোটি টাকা চুক্তিতে ইউনিফর্ম তৈরির কাজ নেন। মংহ্লাসিংকে কেএনএফ সদস্যরা তাদের কাপড়ও দিয়ে যায় । চলতি মাসে এসব কাপড় সরবরাহের কথা ছিল।
এত বিপুল ইউনিফর্ম কেন তৈরি করা হচ্ছিল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরাও। পাশাপাশি টাকার উৎস নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর এমদাদুল ইসলাম বলেন, সম্ভবত কুকিচিন ভূ-রাজনীতির কোনো একটা ফাঁদে পা দিয়েছে, কারণ তাদেরকে কেউ না কেউ অর্থ যোগান দিচ্ছে। সংখ্যার দিক থেকে যদি প্রতিজনে ২টা করে ইউনিফর্ম তৈরি হয় তাহলে তারা প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার সদস্য নিয়ে আগাচ্ছে। কেএনএফ বড় কোন পরিকল্পনা সাজাচ্ছে কিনা তা খোঁজা দরকার।
অন্য দিকে কেএনএফের বিপুল পরিমাণ ইউনিফর্ম উদ্ধারের ঘটনায় তোলপাড় চলছে। তাই, বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা বলছে সেনাবাহিনী।
সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনের পরিচালক ব্রি জে নাজিম উদ দৌল্লাহ বলেন, টোটাল বম কমিউনিটির জনসংখ্যাই হচ্ছে ১০ থেকে ১২ হাজার। সে ১২ হাজারের মধ্যে ছোট বাচ্চা আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই শামিল। সেক্ষেত্রে এ ৩০ হাজার ইউনিফর্ম কেএনএফের কিনা সেটা অবশ্যই খুঁজে দেখার সুযোগ আছে। আমরা বিষয়টি অত্যন্ত সিরিয়াসলি নিয়েছি।
এদিকে এ বিষয়ে গার্মেন্টসটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল কোন কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে কর্মীরা জানান, গেলো মার্চ থেকে এসব ইউনিফর্ম তৈরির কাজ হচ্ছিল কারখানায়। যার ক্রেতা ছিল গোলাম আজম এবং নিয়াজ হায়দার নামের দুই ব্যক্তি। তাদেরও গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
কারখানাটির কর্মীরা বলেন, এই মালগুলো কি চোরের না ডাকাতের আমরা তো জানি না, ওরা আইনা দিছে আমরা কাজ করছি। কোম্পানি তো আর জানে না এগুলো কোনো একটা অবৈধ সংগঠনের। কিছু ফেব্রিক আর কিছু অর্ডার নিয়ে আমাদের কাছে আসে, আসার পর আমাদের মালিক সুইংয়ে আমাদেরকে দেয় আমরা দীর্ঘ দেড় থেকে দুই মাস পর্যন্ত সুইং করি।