॥ খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি ॥
জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের কাছে পাহাড়ের অন্যতম সশস্ত্র সংগঠন প্রসীতের ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’র (ইউপিডিএফ) তিন পার্বত্য জেলায় স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রস্তাব পাহাড়ে উত্তাপ ছড়িয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন্ করার ষড়যন্ত্রমূলক প্রস্তাবের প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে মানববন্ধন হয়েছে। মানববন্ধনে বক্তারা একটি চিহিৃত সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের বৈঠকের বিস্ময় প্রকাশ করে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ইউপিডিএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল। পাহাড়ে হত্যা, অপহরণ এবং চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িত। যারা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে না এমন সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে কোন বৈঠক হতে পারে না। সমাবেশ থেকে পাহাড়ে ৪০ হাজার বাঙালি হত্যাকারী সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ ও জেএসএসসহ সকল সন্ত্রাসী সংগঠনের নিষিদ্ধ ঘোষনা ও সন্ত্রাসীদের বিচার দাবী করা হয়।
সোমবার (১২ মে) সকালে খাগড়াছড়ি পৌর শাপলা চত্বরে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ইউপিডিএফ এর সংগঠক মাইকেল চাকমার স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রস্তাব সংবিধান পরিপন্থী ও দেশদ্রোহীতার শামিল।তার এ বক্তব্য পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন্ করার ষড়যন্ত্রের নীল নকশার অংশ।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ন সম্পাদক আব্দুল মজিদ, পার্বত্য ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহাদাত হোসেন কায়েস, পার্বত্য ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম ও যুগ্ন সম্পাদক আব্দুস সালাম প্রমূখ।
মানববন্ধন থেকে মাইকেল চাকমার সংবিধান বিরোধী বক্তব্যের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ,পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রবিরোধী অপচেষ্টা প্রতিহত করতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ও আগামীতে যেকোনো বিচ্ছিন্নতামূলক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়।
পাহাড়ে সন্ত্রাস ও সহিংসতা বন্ধে ১৯৯১ সালে বিএনপির সরকারের আমলে সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রীর মন্ত্রী কর্ণেল (অব:) অলি আহমেদের নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনংসংহতির সমিতির সভাপতি ও বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতি রিন্দ্র বোধিপ্রিয় ওরফে সন্তু লারমার সাথে আলোচনা শুরু হয়।
তারই ধারাবাহিকতায় প্রায় দুই দশকের রক্তক্ষয়ী সংঘাত বন্ধে ১৯৯৭ সালে ২ রা ডিসেম্বরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে চীফ হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির রাজনৈতিক সংগঠন জ্যোতিরিদ্র বোধিপ্রিয় ওরফে সন্তু লারমর মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তির স্বাক্ষরের ধারাবাহিকতায় ১৯৯৮ সালের ১০ ফ্রেরুয়ারী খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিক তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর হাতে গেরিলা নেতা সন্তু লারমার অস্ত্র সমর্পনের মধ্য দিয়ে জনসংহতি সমিতির সদস্যরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার কথা থাকলেও ঐদিনই সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির ছাত্র সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বে চক্তি প্রত্যাখান করে কালো পতাকা প্রদর্শন ও ১৯৯৮ সালে ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বায়ত্বশাসন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) আত্মপ্রকাশ করে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি প্রত্যাখান করে প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বে পাহাড়ে জন্ম নেওয়া ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) শুরু থেকে চাঁদার জন্য অপহরণ,মুক্তিপন আদায় ও চাঁদাবাজিসহ নানা বিতর্কে জড়িয়ে আছে। রাঙামাটির নানিয়ারচরে ডেনমার্কের উন্নয়ন সংস্থা ড্যানিডার তিন কর্মকর্তাকে অপহরণ থেকে শুরু করে সর্বশেষ সর্বশেষ চলতি বছরে ১৬ এপ্রিল বৈসাবি উৎসবে খাগড়াছড়িতে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষার্থীকে অপহরণ সবই হয়েছে প্রসীত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ’ বিরুদ্ধে। বিগত ২৮ বছরের পার্বত্য চট্টগ্রামে পুন: স্বায়ত্ত শাসন প্রতিষ্ঠার দাবীতে আন্দোলনরত এই সংগঠনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অপহরণ, মুক্তিপন আদায় ও হত্যাসহ অপকর্মের অভিযোগের যেন অন্ত নেই।
ইউপিডিএফ’র সন্ত্রাসীদের হাতে রয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ। প্রায়ই প্রতিপক্ষের সাথে লিপ্ত হচ্ছে বন্দুক যুদ্ধে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর গত প্রায় ২৮ বছরে পিসিজেএসএস ও ইউপিডিএফ’র আধিপত্য লড়াইয়ে উভয়ের ৮শ’ শতাধিক নেতাকর্মী নিহত ও প্রায় দুই হাজার নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এছাড় জেএসএস’র (এমএন) ৪৭ জন ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকে অন্তত ১০ নেতাকর্মী প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হওয়ার তথ্য রয়েছে। সন্ত্রাসীদের রক্তের হোলিখেলা থেকে বাদ যাচ্ছে না নিরাপত্তা বাহিনী ও বাঙালিরাও।