থানচিতে উৎসব মুখর পরিবেশে সাংগ্রাই, বিঝু, বিষু সামাজিক উৎসব শুভ সূচনা

43

॥ থানচি প্রতিনিধি ॥
বান্দরবানের থানচি উপজেলার দুর্গম অঞ্চলগুলিতে মারমাদের সাংগ্রাই, ত্রিপুরাদের বিষু, চাকমাদের ফুল বিজুর মধ্য দিয়ে বৈসাবি উৎসব শুভ সূচনা হলো পাহাড়ের উৎসব মূখর পরিবেশ। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পহেলা বৈশাখ এক নিয়মে পালন করলেও পাহাড়ে পালন করা হয় ভিন্নভাবে। ৮ দিনব্যাপী ব্যাপক উৎসবে পাহাড় তখন আনন্দে মাতহারা হয়ে ওঠে।
শনিবার (১২ এপ্রিল) ভোরে সূর্য উঠার আগের থানচি উপজেলার বলিপাড়া বাজারের শংঙ্খ নদীর তীর ও তার আশপাশের বিভিন্ন খাল ও ছড়ায় গঙ্গাদেবীর উদেশ্যে বাহারী রঙের ফুল দিয়ে প্রার্থনা করে বৈসাবি উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুভ সূচনা করে চাকমা, তংচংগ্যা সম্প্রদায়, যেটি ফুল বিজু নামেও পরিচিত। এর আগের সকাল থেকে পুরো এলাকার জুরে বর্ণাঢ্য গণশোভাযাত্রা করেন তারা। রবিবার (১৩ এপ্রিল) মারমা সম্প্রদায় ও পরশু সোমবার ত্রিপুরা ও ম্রো সম্প্রদায়ের গণশোভাযাত্রা রয়েছে এবং সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন আয়োজকরা। এছাড়াও ঐতিহ্য জলখেলি অনুষ্ঠান রয়েছে।
এবারে উপজেলা জুড়ে ভরত পাড়া, রায়মোহন পাড়া, কমলা বাগান পাড়া, জ্ঞানলাল পাড়া ও ব্রহ্মদক্ত পাড়াসহ ৫টি গ্রামে তরুন তরুনীদের উদ্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে দিনটিকে উদযাপন করা হয়েছে।
চাকমা লোকরীতির বিশ্বাস, পুরাতন বছরের দুঃখ গ্লানি ও পাপাচার থেকে মুক্তির জন্য গঙ্গা দেবতার উদ্দেশে ফুল ভাসিয়ে পুরাতন বছরকে বিদায় জানালে নতুন বছর সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধির বার্তা দেবে। তাই ফুল বিজুর দিন ভোর থেকে বাড়ির পাশের নদী ও খালে গিয়ে প্রার্থনারত হয়ে পুরাতন বছরকে বিদায় জানায় চাকমা সম্প্রদায়ের বিভিন্ন বয়সী নরনারী। তবে এখন ফুল বিজু শুধুমাত্র চাকমা সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ নেই। মারমা, ত্রিপুরা ও স্থানীয় বাঙালীসহ অংশ নিচ্ছেন ফুলবিজুতে।
ফুল ভাসানো শেষে তরুণ তরুণীরা মেতে ওঠেন আনন্দ উৎসবে। নদীতে স্নান শেষে বাড়ি গিয়ে বায়োজ্যেষ্ঠদের প্রণাম করে ছোটরা। ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সাজসজ্জা শেষে প্রস্তুতি চলে অতিথি অ্যাপায়নের। চাকমা পল্লীগুলোতে চলছে বিভিন্ন গ্রামীণ খেলাধুলাও। কিন্তু এবারে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম ধরণে পালন করেছেন দিনটিকে। নিজ নিজ গ্রামে ছাড়াও আনুষ্ঠানিকতাভাবে পালন করেছেন দিনটিকে।
চাকমা সমাজের যুব নেতা রনিজ চাকমা,কিরন জ্যোতি চাকমাসহ অনেকে বলেন, গত বছরে আমরা উৎসবটি গ্রাম পর্যায়ে করেছি, তবে এবারে বড় আকারে করতে যাচ্ছি। এ বছরে আবারো নতুন রুপে আনন্দ রূপ নিয়েছে। আগামী বছরে উৎসবটি উপজেলা জুড়ে আরো বিশাল আকারে আয়োজন করা চিন্তা ভাবনা আছে । পুরোনো সব গ্লানি মুছে দিতে গঙ্গা মায়ের উদেশ্যে আমরা ফুল ভাসিয়ে উৎসবটি পালন করে থাকি।আগামীকাল থেকে যে যার গ্রামে পালন করা হবে মূল বিঝু।
থানচি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নাছির উদ্দিন মজুমদার বলেন, পাহাড়ে বিভিন্ন ভাষা ভাষী সম্প্রদায়ের পৃথক পৃথক ভাবে বাংলার নববর্ষ, সাংগ্রাই, বিঝু, বিষু পালিত হচ্ছে। সুতারাং পুলিশ সর্বদায় সকল উৎসবের আইন শৃংঙ্খলা ও নিরাপত্তা জন্য প্রস্তুত আছি।