॥ থানচি প্রতিনিধি ॥
সলিনা ত্রিপুরা ও রেসমতি ত্রিপুরা দুইজনের বয়স ২৮শে ছুই ছুই, গুগাতি ত্রিপুরা ৪৫ এ তিন গৃহীনি বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার বিদ্যামনি পাড়ায় বসবাস। প্রতিদিন সুপেয় পানির জন্য প্রায় ১ কিলোমিটার দুরত্বে উঁচু পাহাড়ি পথ বেয়ে মগকক্রী ঝিড়ির শাখা মরা ঝিড়ি নামে খ্যাত ঝিড়ি থেকে পানি সংগ্রহ করেন। ঝিড়ির পাথরের গর্ত থেকে ফোঁটা ফোঁটা করে চুঁইয়ে পড়া পানিই একমাত্র ভরসা তার। এক কলসি পানির জন্য দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হয়। শুধু সুপেয় পানি নয়, নিত্যব্যবহার্য পানিরও অভাব।
থানচি উপজেলার সদর হতে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে বলিপাড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডে অবস্থান বিদ্যামনি ত্রিপুরা পাড়া। এ পাড়ায় রয়েছে মারমা, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠি হলে ও ১ পরিবার খুমি, ১ পরিবার চাকমা, ১ পরিবার বাঙালির সব মিলিয়ে ৭০ পরিবারের বসবাস এক সম্প্রীতি গ্রাম নামে খ্যাতি রয়েছে।
শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই সলিনা, রেসমতি, গুগাতি এর মতো পানির সংকটে পড়েছেন পুরো গ্রামের মানুষ। শুধু এ পাড়ায় নয়, এ পাড়ার পাশে ক্রাইডিং ম্রো পাড়া, চিচাক ম্রো পাড়াসহ তিনটি গ্রামে শতাধিক পরিবারের প্রায় ৫ শতজন মানুষ পানির সংকটে ভুগছেন। শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় ঝিড়ির শুকিয়ে গেছে। ঝিড়িতে বিভিন্ন জায়গায় অল্প অল্প জমে থাকা পানি ও ঝিড়ির পাথরের গর্ত থেকে ফোঁটা ফোঁটা চুঁইয়ে পড়া পানি দিয়েই চলে এসব পাড়ার মানুষ।
সরেজমিনের গিয়ে সলিনা ও রেসমতি সাথে কথা হয় তারা দুইজনের বলেন, “সকালে পানি নিতে পারিনি, কারণ অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল। বিকালে জুমের কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরে দেখি রান্নার পানি নেই। তাই এখন আসতে হয়েছে। এভাবে প্রতিদিন পানির জন্য কষ্ট করতে হচ্ছে।
গুগাতি ত্রিপুরা বলেন, ঝিরির ক্ষুদ্র একটি উৎস থেকে বাঁশের ভাঙা খোল বসিয়ে ফোঁটা ফোঁটা করে চুঁইয়ে পড়া পানি সংগ্রহ করতে হয়। একটি কলসি ভরতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লেগে যায়। এক কলসি পানির জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। কেউ একবার পানি সংগ্রহ করার পর, আবার নতুন করে অপেক্ষার পালা শুরু হয়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মহিলাদের দীর্ঘ লাইন লেগে থাকে। এই পানিতেই রান্না, গোসল ও গৃহস্থালির সব কাজ চালাতে হয়।
বিদ্যামনি পাড়া বাসিন্দা থানচব বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক যোহন ত্রিপুরা বলেন, আমাদের গ্রামটি ১৯৯৬ সালে স্থাপিত হওয়ার সময় মগকক্রী ঝিড়িতে প্রচুর পানি ছিল। প্রকৃতি পরিবর্তনের ২০১৫ সালে স্থানীয় একটি এনজিও সংস্থা মগকক্রী এর শাখা ঝিড়ির আগায় গ্রাম থেকে দুই আড়াই কিলোমিটার দুরত্ব থেকে গ্রাভিটি ফ্লো সিস্টেম (জিএফএস) পাইপের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানীয় ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। গ্রাভিটি ফ্লো সিস্টেম (জিএফএস) পাইপ বসানো স্থানের ঝিড়িতে পানির জমে থাকার স্থানের কোন প্রকার জুম চাষ করবোনা, গাছ কাটা হবে না, পাথর উক্তোলন করবোনা, জুমের আগুন লাগাবোনা বলে গ্রামের ৭০ পরিবারের সিন্ধান্ত ছিল। কিন্তু গত ২০২৩ সালে মৌজা হেডম্যান অনুমতি ক্রমে একজন গ্রামবাসী সিন্ধান্তকে বৃদ্ধাগুল দেখিয়ে জুম কাটে এবং বাগান করে উক্ত স্থানের সম্পুর্ন পানির শুকিয়ে যায়। ফলে গ্রাভিটি ফ্লো সিস্টেম (জিএফএস) পাইপ, বিশুদ্ধ পানিয় জমানো ট্যাংকি সব নষ্ট হয়ে যায়। ফলে পানির অভাব ফের দরজা এসে দাঁড়াই।
বিদ্যামনি পাড়ার প্রধান যাদুরাম ত্রিপুরা বলেন, আমাদের গ্রামে এনজিও সংস্থা জায়কার ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের ২০২৩ সালে গভীর নলকুপের বসানো জন্য শ্রমিক এসেছিল আমরা তাদের (শ্রমিক)দের থাকার খাওয়াসহ জায়গা দিয়েছিলাম অর্ধেক কাজ করে আমাদের কিছু না বলে চলে যায় তারা।
যোগাযোগ করা হলে উপজেলার জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী অ: দা: স্বপন চাকমা বলেন, গ্রামবাসী আমাদের নিকট আবেদন করা হলে এবং সরকারের রাজস্ব খাতে ১০ হাজার টাকা জমা দিলে দুই একটি গভীর নলকুপ ডিপওয়েল বসানো ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। আমি দুইটি উপজেলার দায়িত্ব থাকায় অত্র উপজেলার সব জায়গা নজরে পড়ে না।