রাজস্থলীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিশুদ্ধ পানির সংকট, দুর্ভোগে কোমলমতি শিক্ষার্থী

46

॥ মো. আজগর আলী খান, রাজস্থলী ॥
রাঙ্গামাটি রাজস্থলীতে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে গভীর নলকূপ না থাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছে অধিকাংশ স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-কর্মচারীরা। এমন দৃশ্য দেখা যায় রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলার ২নং গাইন্দ্যা ইউনিয়নের চিংখ্যং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সুপেয়ে পানির ব্যাবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা দুর্ভোগে রয়েছেন।
পানি পান করার জন্য তাঁদের যেতে হয় বিদ্যালয়ের পাশের ছড়া থেকে পানি নিয়ে আনতে হয় কলসি ভরে। উপজেলার ২নং গাইন্দ্যা ইউনিয়নের চিংখ্যং পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টিউবওয়েলের অভাবে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট।
চিংখ্যং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক নুচিংমং মারমা বলেন, প্রায় ২০/২৫বছর পূর্বে বিদ্যালয়ের টিউবওয়েলটি বিকল হয়। পরে স্থানীয় মেকানিকের মাধ্যমে মেরামত করে পানি তোলার ব্যাবস্থা করা হয়। কিছু দিন যেতে না যেতে বিকল হয়ে যায়। সেজন্য বিদ্যালয়ের পাশের ছড়া থেকে পানি এনে পান করতে হয়।
তিনি আরো বলেন, তাঁর বিদ্যালয়ে দপ্তরি না থাকায় অনেক সময় শিক্ষার্থীরা কলসিতে করে পানি এনে পান করে। এবিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসে জানিয়েও কোন কাজ হয়নি। প্রধান শিক্ষক আরো বলেন, তার বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫০/৬০ জন। সকল শিক্ষার্থী প্রায় উপস্থিত থাকে। কিন্তু নলকুপ না থাকায় ছাত্রছাত্রীরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, শরীরের রক্ত সঞ্চালন ও শরীরের কার্যক্রমকে সক্রিয় রাখার ক্রেত্রে পানির একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এছাড়া শরীরের চাহিদা মোতাবেক পানি পান করতে না পারায় শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা হয়। চাহিদা অনুযায়ী পানি পান না করলে কিডনীজনিত সমস্যাও হতে পারে।
এ ব্যাপারে রাজস্থলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাজুরুল ইসলাম বলেন, রাজস্থলী উপজেলায় সরকারি ৫৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ বিদ্যালয়ে নেই কোনো গভীর নলকূপের ব্যবস্থা। যার ফলে স্কুলে আসা কোমলমতি শিশুরা খাবার পানির অভাবে নানা দুর্ভোগে পড়ে। কেউ কেউ পানির জন্য ছুটে বেড়ায় আশপাশের বাড়িগুলোতে। এসব জায়গায় পানি না পেলে তারা বিশুদ্ধ পানির বদলে অনেক সময় অনিরাপদ উৎস থেকে (খাল, ঝর্ণা জিরি ছড়া পুকুর থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করে। ফলে শিশুরা আক্রান্ত হয় বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে। এ বিষয়ে
উপজেলা উপ-সহকারি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আরাফাত হোসেন জানান, উপজেলার অধিকাংশ স্কুল পুরোনো। এই সমস্ত স্কুলে অনেক আগে গভীর নলকূপ বসানো হয়েছিল। তবে অনেকগুলো গভীর নলকূপ ব্যবহারের অভাবে বিকল হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় নলকূপ স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। যার ফলে স্কুলে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অথচ প্রতি ৫০ জন মানুষের জন্য একটি গভীর নলকূপ ও প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুপেয় পানি শতভাগ নিশ্চিত করার সরকারি নির্দেশনা রয়েছে।
উপজেলার কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে গভীর নলকূপের জন্য আবেদন জমা দিয়েছেন। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে পানির সংকটের বিস্তারিত তুলে ধরে দ্রুত সময়ের মধ্যে গভীর নলকূপ স্থাপন করার দাবি জানিয়েছেন। আমরা আবেদনের প্রেক্ষিতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন স্কুলে নলকূপের প্ল্যাটফর্ম আছে, নলকূপ নেই। আবার নলকূপ আছে, কিন্তু পানি ওঠে না। অনেকগুলো নলকূপ একেবারে অচল অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা কলসী কাদে ও কোমড়ে করে পানি আনতে দেখা যায়।
অপর দিকে শিলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অংথোয়াই মারমা জানান, আশপাশে কোথাও গভীর নলকূপ নেই। পানির জন্য অনেক সময় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।ঝিড়ি থেকে ৫০০ ফুট উপরে বিদ্যালয়। পানির উৎস খুজতে ৫০০ ফুট নিচে নামতে হয় শিক্ষার্থীদের।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সজীব কান্তি রুদ্র বলেন, ‘অধিকাংশ স্কুলের গভীর নলকূপ নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। অনেক জায়গায় আবার একেবারেই নেই। আমরা এ ব্যাপারে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে যোগাযোগ করেছি। কিছু বরাদ্ধ পেয়েছি, আশা করি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।