॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত প্রথম দৈনিক সংবাদপত্র ‘গিরিদর্পণ’-এর সম্পাদক একেএম মকছুদ আহমেদ আর নেই। তার মৃত্যু রাঙ্গামাটি নয়, পুরো বাংলাদেশের মানুষের মনে দাগ কেটেছে। তার দীর্ঘ জীবদ্দশায় অসংখ্য সাংবাদিকের সাথে তার হৃদ্যতা ছিল। তেমনি সাংবাদিকেরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক জানিয়ে আবেগ ভরা স্টেটাস দিয়েছেন।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে’র যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “পার্বত্য সাংবাদিকতার কিংবদন্তির বিদায়। ওপারে ভাল থাকুন মকছুদ ভাই (একেএম মকছুদ আহমেদ)।”
দীর্ঘ ৫৬ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে মকছুদ আহমেদ পার্বত্য চট্টগ্রামে পেশাদার সাংবাদিকতার গোড়াপত্তন করেন। রাঙ্গামাটিতে শিক্ষকতা করতে এসে ষাটের দশকে সাংবাদিকতায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদীর মাধ্যমে হাতেখড়ি হওয়ার পর তিনি দেশের শীর্ষ দৈনিক ইত্তেফাকে কাজ করেন। সত্তরের দশক থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের উত্তাল সময়ের খবর তিনি শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও ছড়িয়ে দিতেন। রয়টার্স, বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা, এএফপি-র মতো প্রতিষ্ঠানেও কাজ করেছেন তিনি। তাঁর হাতে গড়া দৈনিক গিরিদর্পণ ও সাপ্তাহিক বনভূমির মাধ্যমে তিনি অনেক সাংবাদিক তৈরি করেছেন।
মহসীন কাজী তাঁর পোস্টে আরও উল্লেখ করেন, ২০২১ সালে করোনাকালে বান্দরবানে সাংবাদিকদের এক অনুষ্ঠানে তিনি মকছুদ আহমেদকে সাংবাদিকতায় একুশে পদক দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুরও সেই দাবির সঙ্গে একমত হয়ে বিষয়টি সর্বোচ্চ পর্যায়ে উত্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এমনকি, মন্ত্রী নিজেও একসময় দৈনিক গিরিদর্পণে সাংবাদিকতা করতেন বলে স্বীকার করেন।
মহসীন জানান, মকছুদ আহমেদ একুশে পদকের জন্য আশাবাদী ছিলেন। সরকারি নিয়মানুযায়ী তাঁর সিভিও নেওয়া হয়েছিল এবং তাঁকে বিষয়টি নিশ্চিতও করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর নামটি চূড়ান্ত তালিকায় না থাকায় তিনি কষ্ট পেয়েছিলেন।
মৃত্যুর একদিন আগে একেএম মকছুদ আহমেদ নিজের পত্রিকা গিরিদর্পণে ‘একুশে পদক সোনার হরিণ?’ শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি একুশে পদকের জন্য তাঁর আবেদন ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন। একইসঙ্গে, মফস্বল ও রাজধানী থেকে একজন করে সাংবাদিককে একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করার আবেদন জানান।
কাজী মহসীন লিখেছেন, “জীবদ্দশায় মকছুদ ভাই স্বীকৃতি না পেলেও তিনি দেশের এক দশমাংশ আয়তনের পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার মানুষের হৃদয়ে সাংবাদিকতার দিকপাল তথা কিংবদন্তি হয়ে থাকবেন।”