লামায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মিরিঞ্জা পাহাড়ে রিসোর্ট নির্মাণের অভিযোগ, সংঘর্ষের আশংকা

45

॥ লামা প্রতিনিধি ॥
জায়গার মূল্য বেড়ে যাওয়ায় লামা উপজেলায় বেড়েই চলেছে জায়গা নিয়ে বিরোধ। গত এক মাসে বিভিন্ন স্থানে অন্তত জায়গা নিয়ে ১৫-২০টির মত অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। সর্বশেষ উপজেলার মিরিঞ্জা পাহাড় চূড়ায় পর্যটন এলাকার মো. দুলাল মিয়া নামে এক ব্যক্তির জায়গা জবর দখলে নিতে স্থাপনা নির্মাণ করছেন প্রতিপক্ষ রিংরাও ম্রো গং। একের পর এক আদালতের আদেশ উপেক্ষা করেই তারা স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে জায়গা জবর দখলের চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। তাের মাঝে যে কোন মুহুর্তে আবারও ঘটতে পারে অপ্রীতিকর ঘটনা। জায়গা জবর দখলের হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগী দুলাল মিয়া।
অভিযোগে জানা যায়, মো. দুলাল মিয়া ও তার পিতা নুরুল ইসলামের নামে উপজেলার ২৯৩নং ছাগল খাইয়া মৌজার আর/২৬৭ ও আর/১৩১ মূলে মিরিঞ্জা এলাকায় ১০ একর তৃতীয় শ্রেণীর জায়গা আছে। বন্দোবস্তি পাওয়ার পর থেকে ওই জায়গায় বিভিন্ন ফলজ বনজ বাগান সৃজন করে ভোগ করে আসছেন তিনি। এর মধ্যে কিছু অংশ জায়গায় চংতাই মুরুং নামের এক ব্যক্তি নিজের জায়গা মনে করে কিছু গাছ বাগান সৃজন করেন। পরে ভুল বুঝতে পেরে স্থানীয় ভাবে গাছ বাগানের বিষয়ে ২০১৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী চংতাই মুরুং একটি নাদাবী নামা প্রদানের পাশাাপাশি ৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ গ্রহন করে জায়গা ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে দুলাল মিয়া ১৩১নং হোল্ডিং থেকে ৫০ শতক জমি পাশের ইনলাং ম্রোকে লাগিয়ত দেন। সম্প্রতি এ জায়গার উপর পাশের রিংরাও ম্রোদের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। তারা এ জায়গা জবর দখল করার জন্য বিভিন্ন পায়তারা শুরু করেন। এ ধারাবাহিকতায় গত ১৫ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে প্রতিপক্ষরা খামার বাড়ি ভাংচুর ও ২০ আগস্ট লোকবল নিয়ে সৃজিত বাগানের গাছ কাটার চেষ্টা করেন। এ সময় বাধা প্রদান করলে দুলাল মিয়াকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করেন তারা। পরে এ ঘটনায় দুলাল মিয়া উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি ফৌজদারী অভিযোগ করেন (যাহার নং ৫৯/২৪)। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে আদালত ওই জায়গার উপর ১৪৫ ধারা মতে স্থিতিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেন। এতে প্রতিপক্ষরা ক্ষিপ্ত হন। এক পর্যায়ে মামলা প্রত্যাহার না করলে প্রতিপক্ষরা দুলাল মিয়াকে প্রাণে হত্যা করবে বলে হুমকি দেন। হুমকির শিকার হয়ে দুলাল মিয়া গত ২০ নভেম্বর লামা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। এতেও তারা থেমে থাকেনি, তারা প্রতিনিয়ত স্থাপনা নির্মাণ কাজ অব্যাহ রাখেন। এক পর্যায়ে গত ৩১ অক্টোবর অপর মামলা নং ১২৫/২০২৪ দায়ের করলে আদালত ওই জায়গার উপর স্থিতিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন বিজ্ঞ আদালত। এ মামলায় অভিযুক্ত বিবাদীরা হলেন–মিরিঞ্জা পাড়ার বাসিন্দা চংতাই ম্রো’র ছেলে সামুয়েল ম্রো ও ডানিয়েল ম্রো, সিংনম ম্রোর ছেলে রিংরাও ম্রো, অহাচন্দ্র ত্রিপুরার ছেলে রুবেন ত্রিপুরা ও নুনারবিল পাড়ার বাসিন্দা আবদুল মালেক মুন্সির ছেলে মোহাম্মদ সুলতান।
এদিকে ভুক্তভোগী দুলাল মিয়া জানান, সর্বশেষ বান্দরবান জজ কোর্ট এর আদেশের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) পুলিশ স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য বিবাদীদের নোটিশ করেন। কিন্তু তারা আদালতের নিষেধাজ্ঞাও মানছেন না। এর আগেও উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে একে একে তিনবার নোটিশ করা হয় কিন্তু তারা স্থিতাবস্থা বজায় না রেখে স্থাপনা নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত রিংরাও ম্রো বলেন, স্থিতিতাবস্থার আদেশের নোটিশ পাওয়ার পর আমরা কাজ বন্ধ রেখেছি। সুলতান মাহমুদ বলেন, আমরা রিংরাও থেকে ৩০ বছরের জন্য লীজ নিয়েছি। আমরা জমির মালিক নই। আদলতের আদেশ পাওয়ার পর কাজ বন্ধ রেখছি। বর্তমানে আমাদের বিরোদ্ধে কাজ করার যে অভিযোগ আনছে তা সত্য নয়। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
এ বিষয়ে লামা থানা পুলিশের সহকারি উপ-পরিদর্শক মো. ফারকুর রহমান জানায়, আদালতের নির্দেশনা মতে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে বিরোধীয় জায়গায় বিবাদীদেরকে স্থাপনা নির্মাণ কিংবা কোন ধরণের কাজ না করতে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। এরপরও রিংরাও ম্রোরা নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।