খাগড়াছড়িতে বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে লটকন চাষ

12

॥ খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি ॥
কয়েক বছর আগেও পাহাড়ের বনজঙ্গলে জংলি গাছ হিসেবে জন্মাত লটকন। বেশিরভাগ গাছের ফল পেকে পড়ে থাকতো গাছের নিচে। কেউ কেউ নিতান্ত শখের বশে নিজেরা খাওয়ার জন্য বাড়ির আশেপাশে লাগাতেন দুই একটা গাছ। কিন্তু বর্তমানে জেলায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে লটকন। লটকন বিক্রি করে অনেকে করছেন আয়।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১অর্থবছরে জেলায় ছোট-বড় বাগান আকারে ১২৬ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল। আর উৎপাদন হয়েছে ১৪০০ মেট্রিকটন। ২০২১-২২ অর্থ বছরে চাষ হয়েছে ১৩৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছে ১৮৬৩ মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে চাষ হয়েছে ১৫০ হেক্টক জমিতে আর উৎপাদন হয়েছে ২৭৮২ মেট্রিক টন। আর ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে চাষ হয়েছে ১৭৩ হেক্টর জমিতে গত বছরের চাইতে বেশি হবে এমনটি আশা করা করা হছে।
বাগানিরা জানায়, লটকন গাছে অনেক লাভ, গাছ লাগানোর পর বেঁচে গেলে আর পরিশ্রম করতে হয় না। গোবর আর জৈব সার ছাড়া অন্য কোন রাসায়নিক সারের প্রয়োজন পড়ে না। মাটির উর্বরতাই লটকন গাছের মূল উপাদান। ছায়াযুক্ত জায়গা লটকন গাছের জন্য উপযুক্ত স্থান।
সম্প্রতি খাগড়াছড়ি শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষনা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, গাছের গোড়া থেকে শুরু করে ডালপালা পর্যন্ত ঝুলছে থোকায় থোকায় ফল। প্রতিটি পুষ্প মঞ্জুরিতে ঝুলছে রয়েছে ৫ থেকে ৫০টি ফল। কাঁচা ফলের রঙ সবুজ এবং পাকা ফলের রঙ হালকা হলুদ। ভেতরে দুই থেকে চারটি বীজ রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, খাগড়াছড়ির লটকনের জন্য ফেনী, নোয়াখালি, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে চাহিদা রয়েছে। খাগড়াছড়ির উৎপাদিত লটকন রসালো, সুন্দর এবং সুস্বাদু হওয়ার জন্য সব জায়গায়ই এখন এর চাহিদা রয়েছে।
ফল ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান হাসান বলেন, খাগড়াছড়ির ফল সমতলে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। কেননা পাহাড়ের ফল ফরমালিন মুক্ত এবং সুস্বাদু। প্রতি কেজি পাইকারি ৫০-৬০ টাকায় কিনে নোয়াখালী ও ফেনীতে নিয়ে গিয়ে ৮০-১২০ টাকায় বিক্রি করছি।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার জংলিটিলা এলাকার লটকন বাগানের মালিক অনিমেষ চাকমা (রিংকু) বলেন, তার বাগানে ৫০০টি গাছ থেকে বানিজ্যিকভাবে বিক্রি করছেন ১৫ বছর ধরে। তবে তিনি খুচরা বিক্রি করেন না। বাগানের লটকন তিনি বাইরের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন। তবে বাজার ফান্ড, পৌরসভা এবং জেলা পরিষদের অতিরিক্ত টোল এবং বর্তমান দেশের সার্বিকপরিস্থিতির কারনে এই বছর বাইরের ব্যবসায়ীরা আসবে কি না, এই নিয়ে চিন্তায় আছেন।
আলুটিলা এলাকার চাষী রক্তিম ত্রিপুরা বলেন, ছায়াযুক্ত একটি পাহাড়ের খাদে জুম চাষ ভালো হতো না। তাই অনেকটা অপরিকল্পিত ভাবে ১১ বছর আগে ৫৬টি লটকন গাছ লাগিয়েছিলাম। তেমন পরিচর্চা না করেও গাছ ৪ বছর হওয়ার পর থেকে ফলন আসা শুরু করেছে। এরপর থেকে বাণিজ্যিক ভাবে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে আসছি তবে এ বছর দেশের পরিস্থিতির কারনে বেপারির কাছে বিক্রি করে দিবো। অনেক এসেছে আশা করি এই বছর ভালো দামে বিক্রি করতে পারবো।
পানছড়ি পুজগাং এলাকার অনন্ত চাকমা এ বছর এখন পর্যন্ত লটকন ঘরে বসে বেপারিদের কাছে বিক্রি করেছেন ২৬ হাজার টাকায়। এতেই তিনি খুশি। কেননা তার বাড়ির পাশে ১১টি লটকন গাছ থেকে লটকন বিক্রি করে তিনি এই টাকা পেয়েছেন। তার বাগানের গাছে এখনো অর্ধেক বেশি লটকন আছে। তবে সে ফল গুলো বিক্রি করবেন বাজারে নিয়ে গিয়ে।
খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষনা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আবদুল্লাহ আল মালেক বলেন, খাগড়াছড়ির মাটি এবং আবহাওয়া লটকন চাষের জন্য উপযোগী। লটকন চাষে তেমন কোন পরিচর্চার প্রয়োজন পরে না। পাহাড়ের যে কোন জায়গায় লাগালেই ভালো ফলন দেয়।