রাঙ্গামাটির আসামবস্তী বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহারে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন

10

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
দেশের সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে রাঙ্গামাটিতে যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় বৌদ্ধ বিহার ও শাখা বন বিহারগুলোতে উদযাপিত হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা।
বৌদ্ধ ধর্মীয় ভিক্ষুরা তিন মাস বর্ষাবাসের শেষ দিনটিতে প্রবারণা পূর্ণিমা হিসেবে উদযাপন করে। প্রবারণা হল আত্মশুদ্ধি ও অশুভকে বর্জন করে সত্য ও সুন্দরকে বরণের ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এরপর থেকে দীর্ঘ একমাস ধরে আয়োজন চলে প্রধান ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর দানোৎসব।
প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সকালে রাঙ্গামাটির আসামবস্তী বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহারে প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে বুদ্ধবিম্ব দান, সংঘদান, অষ্টপরিষ্কার দান ও হাজার প্রদীপ দানসহ নানাবিধ দান এবং রাঙ্গামাটি বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহার অধ্যক্ষ ভদন্ত করুনা পাল ভিক্ষু এর থের অভিষিক্ত হওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
রাঙ্গামাটি বড়ুয়া জনকল্যান সংস্থা ও রাঙ্গামাটি বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহারের সাবেক সাধারন সম্পাদক তপন কান্তি বড়ুয়ার সঞ্চালনায় ধমীয় অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন, পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের উপদেষ্টা সদস্য ভদন্ত ধর্মর্কীতি মহাথের। মঙ্গলচরণ করেন, সংঘরাম বৌদ্ধ বিহারের ভদন্ত সুবলংকর ভিক্ষু।
উক্ত পুণ্যানুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, আর্মি সিকিউটি ইউনিট (এএসইউ) কমান্ডার লেঃ কর্নেল মোহাম্মদ আল মামুন, রাঙ্গামাটি সদর জোন কমান্ডার লেঃ কর্নেল এরশাদ হোসাইন চৌধুরী, পিএসসি, রাঙ্গামাটি জেলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান, জেলা পুলিশ সুপার ড. ফরহাদ হোসেন, বৈষম্য বিরোধী নাগরিক সমাজের সমন্বয়ক আনোয়ার আজিম, সহ সমন্বয়ক জুঁই চাকমা ও রাঙ্গামাটি জেলা যুবদলের সাধারন সম্পাদক আবু সাদাৎ মোহাম্মদ সায়েম।
পঞ্চশীল প্রার্থনা করেন, রবীন্দ্র লাল বড়ুয়া, উদ্বোধক হিসাবে বক্তব্য রাখেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. সুপ্রিয় বড়ুয়া। প্রধান আলোচক হিসাবে বক্তব্য রাখেন, অধ্যাপক অর্নিবান বড়ুয়া। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, রাঙ্গামাটি বড়ুয়া জনকল্যান সংস্থা ও রাঙ্গামাটি বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহারের সাবেক সভাপতি প্রদীপ বড়ুয়া, সাবেক সাধারন সম্পাদক তপন কান্তি বড়ুয়া, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অরুপ মুৎসুদ্দী, রাঙ্গামাটি বড়ুয়া জনকল্যান সংস্থা ও রাঙ্গামাটি বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটির আহবায়ক ত্রিদিব বড়ুয়া, সদস্য সচিব ধীমান বড়ুয়া, সদস্য নির্মল বড়ুয়া মিলন ও শরিয়তপুর থেকে আগত শিক্ষক নাজনিন নাহার পাতা।
আর্মি সিকিউটি ইউনিট (এএসইউ) কমান্ডার লেঃ কর্নেল মোহাম্মদ আল মামুন বলেন, আমরা এই পূণ্যাময় দিনে এখানে আপনাদের সাথে সামিল হতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। আমাদের দেশে যে সব ধর্মের মানুষ সম্প্রীতির সাথে আমরা একসাথে আছি এবং আপনাদের বৌদ্ধ ধর্মের যে সাম্য-মৈত্রীর যে শিক্ষা এটা আমরা সবাই অনুসরন করতে পারছি এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। আপনারা আশির্বাদ করবেন আমাদের জন্য এবং আমরাও আমাদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা এবং আশির্বাদ থাকবে আপনারা যাতে সবাই সুখি হউন, সকল প্রাণীর যাতে মঙ্গল হয়।
রাঙ্গামাটি সদর জোন কমান্ডার লেঃ কর্নেল এরশাদ হোসাইন চৌধুরী, পিএসসি, বলেন, আমরা যে ধর্মই পালন করিনা কেন, প্রতিটি ধর্মই ভাল, কোন ধর্মে খারাপ কাজ বা খারাপ কথা বলেনি। আজকে রাঙ্গামাটি বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহারের শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন উপলক্ষে আসতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি, আমি আনন্দিত। আপনারা সুস্থ ও সুন্দরভাবে মন খুলে নিজ-নিজ ধর্ম পালন করুন।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, যত ধর্ম আছে সকল ধর্মে মধ্যে আপনি কোন ধর্মে পাবেন না মানুষের জন্য খারাপ বা অকল্যাণকর, ধর্ম মানেই কল্যাণকর, প্রতিটি ধর্মই জীবণাচরনের সুশৃঙ্খল ব্যাখ্যা দেয়া আছে। কিভাবে একটা মানুষ সঠিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারে, নিজেকে গড়ে তুলতে পারে সেই ব্যাখ্যা আছে। আমি মনে করি আজকে যে প্রবারণা পুর্ণিমা অনুষ্ঠিত হয়েছে ভিক্ষুগণ দিক নির্দেশনা দিয়েছেন, কিভাবে আপনারা চলবেন সেই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন।
রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশ সুপার ড. ফরহাদ হোসেন বলেন, সবাইকে শুভ প্রবারণা পূর্ণিমার সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমি অত্যান্ত আনন্দিত আপনাদের এই সুন্দর পরিবেশটা দেখে, যে পরিবেশটা আমাকে একটি মানষিক পরিতৃপ্তি দিয়েছে, পূণ্যময় আবহ যেটা বলা যায়, সে আবহ আমি এখানে দেখতে পাচ্ছি।
এসময় রাঙ্গামাটি বড়ুয়া জনকল্যান সংস্থা ও রাঙ্গামাটি বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটির উপদেষ্টাগণ, সদস্যগণ, শত-শত দায়ক-দায়ীকা, উপাসক-উপাসিকাবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।