॥ বিশেষ প্রতিবেদক॥
রাঙ্গামাটির কাউখালীতে উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাজাই মং মারমার বাড়িতে হামলার ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাত অনেককেই আসামি করা হয়েছে। তবে মামলায় অভিযুক্ত আসামিরা গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকেই এলাকা ছাড়া। সেখানে ২১ সেপ্টেম্বর বিএনপি নেতার বাসায় মামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতাদের মামলা জড়ানোকে ‘দুরভিসন্ধি’ বলছে আসামিরা।
এজাহার সুত্রে মামলায় আসামীরা হলেন, কাউখালী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বেতবুনিয়া মডেল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অংক্যজ চৌধুরী, কাউখালী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি অভিমং চৌধুরী, কাউখালী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি থুইসি মারমা, কাউখালী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান ও ছাত্রলীগ নেতা বাপ্পী মারামাসহ আরো ১৫/২০জন অজ্ঞাতনামা আসামী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, গত ২১ সেপ্টেম্বর কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের মহাজনপাড়া এলাকায় উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাজাই মং মারমার বাড়িতে রাতে মামলার ঘটনা ঘটে। এ মামলার পর থানায় একটি মামলা হয়; সেই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে হামলা, ভাঙচুর ও মেরে ফেলার হুমকির অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেতবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অংক্যজ চৌধুরী জানান, এই ঘটনার সাথে আমি জড়িত নয়। ঘটনার দিন আমি চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে অবস্থান করছিলাম। আমাকে উদ্দেশ্য-প্রনোদিতভাবে এই হামলার ঘটনার সাথে জড়ানো হচ্ছে। আমি চেয়ারম্যান হিসেবে সফলতার সাথে যথাযত দ্বায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। এই মামলা মাধ্যমে আমাকে চেয়ারম্যানের দ্বায়িত্ব পালনে বাধাগ্রস্থ করতেই উদ্দেশ্য-প্রনোদিতভাবে মামলা দেওয়া হয়েছে। এটি দুরভিসন্ধিমূলক।’
অংক্যজ দাবি করেন, নিজ বসতবাড়ি নিজেই (সাজাই মং) ভাংচুর চালিয়েছে। যা আমরা এলাবাসী মারফত জানতে পেরেছি। এই ঘটনা ঘটিয়ে সাজাই মং জনগণ ও প্রশাসনকে বুঝাতে চাইছে, সে নিজ গ্রামে বাড়িতে নিরাপদ নয়। তিনি জানান, বেতবুনিয়া কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রজেক্ট (সিএইচসিপি) নামে একটা এনজিও সংস্থা রয়েছে। তিনি সেখানে দখল নিয়ে বসবাস করার জন্য সেই কোয়ার্টারে উঠতে চাইছেন।
কোয়ার্টার এবং অফিসসহ জায়গা বর্তমানে পরিমান প্রায় ৫ কোটি টাকা মতন মূল্য। মূলত তিনি নিজেই নিজের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটিয়ে উক্ত জায়গাটা দখল করতে চাইছেন। বর্তমানে তিনি নিজ দলে কোণ ঠাসা নেতা, তাই এই পরিকল্পনা মাধ্যমে সে সবার দৃষ্টি এবং নিজেকে ফোকাস করতে চাইছেন। দলের কাছে গ্রহণ যোগ্যতা ও সিম্প্রীতি বাড়ানো উদ্দেশ্য এই ঘটনা ঘটিয়েছেন।
মামলার আরেক আসামী কাউখালী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি অভিমং চৌধুরী জানান, আমরা ৫ আগষ্টরে পর থেকে এলাকা ছাড়া। কখনো আত্নীয়-স্বজনের বাড়িতে, কখনো চট্টগ্রাম, কখনো ঢাকা। বর্তমানের এলাকার বাহিরে রয়েছি। সরকার পতন পরবর্তী আমাদের কাউখালী উপজেলায় বিএনপি’র হামলায় ছাত্র ও যুবলীগের ২জন নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনার পর হতে আমরা উপজেলার নেতাকর্মীরা আরো ভয়ভূতির মধ্যে রয়েছি। এলাকায় ঢুকার সাহস পাচ্ছি না। এই অবস্থায় আমরা বিএনপি নেতা সাজাই মং মারমার বাড়িতে গভীর রাতে হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগ হাস্যকর। মূলত রাজনৈতিকভাবে প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে ও হয়রানি করার জন্য নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মামলা দেওয়া হয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্য-প্রনোদিত।
ছাত্রলীগের সভাপতি থুইসি মারমা বলেন, সরকার পতনের পর থেকে আমিসহ আমার নেতাকর্মীরা এলাকায় থাকতে পারছি না। বিএনপি নেতাকর্মীদের হুমকি-ধামকি ও হামলার ভয়ে আমরা অদ্যবধি পর্যন্ত আমরা পালাতক। সাজাই মং মারমার বাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় আমি এবং আমার ছাত্রলীগের কোন নেতার্কমী জড়িত নয়। আমাদের ধারণা নিজেই নিজের বাড়িতে ভাংচুরের ঘটনা ঘটিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য এ নাটক সাজানো হয়েছে। সম্পূর্ণ রাজনৈতিকভাবে প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে ও হয়রানি করার জন্য আমার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, বিএনপি নেতা সাজাইমং মারমার বাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনার কয়েকদিন আগে তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে একাউন্টে একটি আঞ্চলিক সংগঠনের বিরুদ্ধে বেশ কিছু লেখালেখি করেন। অনেকেই ধারণা করছেন, লেখা-লেখির কারনে হয়তোবা তারা এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে।
মামলার বাদী বিএনপি নেতা সাজাই মং মারমা জানিয়েছেন, বেতবুনিয়া কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রজেক্ট (সিএইচসিপি) নামে এনজিও সংস্থা কারো ব্যক্তিগ সম্পত্তি নয়। এটি দখল করার কোন প্রশ্নই আসে না। এনজিও সম্পত্তি দখল ও নিজেই নিজের বাড়িতে ভাংচুর করার অভিযোগ হাস্যকর, ভিত্তিহীন। তিনি আরো বলেন, আমার বাড়িতে হামলার ঘটনায় উপরোক্ত আসামীগণ জড়িত। আমার আঞ্চলিক দলের সাথে কোন বৈরতা নেই। আঞ্চলিক দলের নেতাকর্মীরা হামলা করেনি। তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৮ বছর শেখ হাসিনা সরকারের আমলে কোনো বিএনপি নেতাকর্মী কাউখালী উপজেলাসহ বেতবুনিয়াতে রাতে ভালোভাবে ঘুমাতে পারেনি। কোনো না কোনোভাবে মামলা হামলার স্বীকার হয়েছে। এর আগেও ২০০৯ সালে আামার সাথে একই ঘটনা ঘটেছে। আমি আমার বাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চাই।
কাউখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজীব চন্দ্র কর জানান, কাউখালী উপজেলা বিএনপি নেতা সাজাই মং মারমার বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলামান রয়েছে।
উল্লেখ্য: গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পরিবর্তন পরবর্তী এই প্রথম আওয়ামী লীগ নেতা কমীদের বিরুদ্ধে রাঙ্গমাটির কাউখালী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।