বিশ্ব পর্যটন দিবসে আকর্ষনীয় রাঙ্গামাটি পর্যটন ঝুলন্ত ব্রীজ পানির নীচে, হতাশ পর্যটকরা

92

॥ মিল্টন বাহাদুর ॥
প্রতিবছর পালন করা হয় বিশ্ব পর্যটন দিবস। কিন্তু বিশ্ব পর্যটন দিবসের এই দিনেও পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির পর্যটনের আইকন হিসেবে বাংলাদেশসহ বিশ্ব জুড়ে পরিচিত আকর্ষণীয় ঝুলন্ত ব্রীজটি পানির নিচে তলিয়ে আছে। টানা অর্ধ মাসেরও বেশি সময় ধরে ব্রীজটি কাপ্তাই হ্রদের পানির নিচে ডুবে থাকায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও হতাশ। কিন্তু পর্যটনের এই আকর্ষনীয় ঝুলন্ত ব্রিজটি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার এই সমস্যার স্থায়ী কোনো সমাধান করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
প্রকৃতির রূপের ভাণ্ডার রাঙ্গামাটি জেলার ঝিরি, ঝর্ণা, সবুজ উপত্যকা, কাপ্তাই হ্রদ, মাচাং ঘর পলওয়েল পার্ক, আরন্যক রির্সোট, সুভলং ঝর্না যে কাউকে বিমোহিত করে তুলে। পাহাড়ি ঝর্ণার স্বচ্ছ জলের ধারায় গা ভেজাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাঙ্গামাটিতে ছুটে আসেন পর্যটকরা। একেক ঋতুতে একেক রকম রূপে সাজে পাহাড়ের প্রকৃতি। এর মাঝে রাঙ্গামাটি ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ এই ঝুলন্ত ব্রীজ। যে কোন পর্যটক রাঙ্গামাটিতে বেড়াতে আসলেই পর্যটনের ঝুলন্ত ব্রীজ না দেখে যেতে চান না। কিন্তু পর্যটনের এই ব্রীজটি কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্ধ মাসেরও বেশী সময় ধরে পানির নীচে ডুবে থাকায় হতাশ ভ্রমণপিপাসুরা।
চট্টগ্রাম থেকে ঘুরতে আসা সালাউদ্দিন বলেন, ঝুলন্ত সেতু দেখতে এসেছি। এখন দেখি ব্রীজটি পানির নীচে ঝুলছে। শুনেছি প্রতি বছর এই সময়ে ব্রীজটি পানির নীচে তলিয়ে যায় তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি ব্রীজের সংস্কার করে পানিতে যাতে না ডুবে এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। তাছাড়া রাঙ্গামাটিতে ঘোরাঘুরি করার আর কিছুই দেখছিনা। শহরের ভিতর যেসব দেখার সব দেখা শেষ হয়ে গেছে। তাই হতাশ হয়ে বাসায় ফিরতে হচ্ছে।
কক্সবাজার থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক নিবিলাস দাশ বলেন, রাঙ্গামাটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন এই ব্রীজটি এভাবে পানিতে ডুবে থাকবে এটা আশা করা যায় না। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা শুধু এই ব্রীজটিই দেখতে আসেন। কিন্তু তাদের হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। আর এই একটি পর্যটনের ঝুলন্ত ব্রীজ পুরো রাঙ্গামাটিকে উপস্থাপন করে। এভাবে ব্রীজটি ডুবে যাওয়া রাঙ্গামাটির পর্যটন শিল্পের জন্য ক্ষতিকারক। কর্তৃপক্ষের এটা নিয়ে ভাবা উচিত বলে আমি মনে করি।
রাঙ্গামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, ঝুলন্ত সেতুর পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। আর কিছুদিনের মধ্যে পানি কমে গিয়ে চলাচলে উপযোগী হলে তা সংস্কার করে ঝুলন্ত ব্রীজটি চলাচলে সবার জন্য আবারো উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। আর এই ঝুলন্ত ব্রীজটি প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পানি নিচে তলিয়ে যায়। তাই ব্রীজটি উঁচুতে স্থানান্তরের ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
এদিকে, দীর্ঘদিন পর্যটনের এই ব্রীজটি পানিতে ডুবে থাকার কারণে ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। পর্যটক না থাকায় ট্যুরিস্ট বোট চালক থেকে শুরু করে ঝুলন্ত ব্রীজ এলাকায় বসা ভ্রাম্যমাণ পাহাড়ি পণ্যের দোকানদার সবার মুখেই হতাশার ছাপ পড়েছে। অন্যদিকে পর্যটনের ঝুলন্ত সেতুটি সংস্কার ও সেতুটি আরো উঁচুতে স্থানান্তরসহ পর্যটন এলাকাটি পর্যটকদের জন্য আরও সৌন্দর্য্য বাড়াতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আগত পর্যটকসহ স্থানীয়রা।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, রাঙ্গামাটি শহরের একদম শেষ প্রান্তে অবস্থিত দুটো পাহাড়কে সংযুক্ত করে ১৯৮৫ সালে নির্মিত হয় এই ‘ক্যাবল স্টে ব্রিজটি’। প্রায় ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্যরে এই ব্রীজটি দাঁড়িয়ে আছে মোটা ক্যাবল এবং দুই প্রান্তের চারটি পিলারের ওপর। ব্রীজটির নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানই এই ব্রীজটির নকশা ও নির্মাণ করেছে বলে পর্যটন কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু সেই সময় হ্রদের পানির উচ্চতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটিই ব্রীজটি স্থাপনের উচ্চতা নির্ধারণে সমস্যা করে। ফলে নির্মাণ কাজ শেষে উদ্বোধনের দুই বছর পরই ১৯৮৭ সালে বর্ষা মৌসুমে ব্রীজটি পানির নিচে ডুবে যায়। সেই থেকে প্রায় নিয়ম করেই যে বছর ভারী বৃষ্টিপাত হয় সেই বছরই পানির নিচে ডুবে যায় ব্রীজটি। পাশাপাশি কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পানি সংরক্ষণ করে রাখার জন্য যখন বাঁধের স্লুইসগেটগুলো বন্ধ করে রাখা হয় তখনো অতিরিক্ত পানির কারণে ডুবে যায় পর্যটনের আকর্ষণীয় এই ব্রীজটি।