॥ রুমা প্রতিনিধি ॥
কোন কাজ না করে প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে-জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে। তার সাথে সোলার দেয়ার কথা জানিয়ে বিহারে দান বাক্সের টাকাও হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকল্প এলাকার স্থানীয় লোকজনের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে তৃতীয় পর্যায়ে গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার কাবিটা কর্মসূচির আওতায় বান্দরবানের রুমায় ১নং পাইন্দু ইউনিয়ন পরিষদের অনুকূলে ছয় লক্ষ ৬৩ হাজার ২৪৮ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। এ বরাদ্দ থেকে চারটি প্রকল্প নেয়া হয়। তার মধ্যে দুই লক্ষ ৭৩ হাজার ২৪৮ টাকার ব্যয়ে “চাইরাগ্র পাড়া হইতে সেঙ্গুম পাড়া পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার” প্রকল্প। এই প্রকল্প সভাপতি- ১নং পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা।
একই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের এক লক্ষ ৩০ হাজার টাকার ব্যয়ে-“প্রাংসা পাড়া হতে মুলপি পাড়া পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার” প্রকল্প। ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনে সদস্য উম্যানু মার্মা এই প্রকল্পের সভাপতি। এ দুইটি প্রকল্পের সভাপতিদ্বয় গত ৩০জুনের আগে চুড়ান্ত বিল উত্তোলন করেন।
সূত্রমতে, এসব টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কর্তৃক প্রকল্পের কাজ শতভাগ সম্পাদিত এ প্রতিবেদন দেয়ার পরে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তা অনুমোদনের সাপেক্ষে চুড়ান্ত বিল দেয়া হয়ে থাকে- প্রকল্প সভাপতি বা ঠিকাদারকে। অথচ প্রকল্পের সব টাকা উত্তোলন করে ৭০দিন পার হয়ে গেলেও রাস্তা সংস্কারের কাজ বিন্দু মাত্র বাস্তবায়িত হয়নি এখনো। এলাকায় এ দূর্নীতি অনিয়ম নিয়ে- চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে প্রকল্প এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে এ প্রতিবেদক দেখেন, চাইরাগ্র পাড়া থেকে সেঙ্গুম পাড়া যাওয়া এই রাস্তায় সংস্কারের কোনো কিছু চিহ্ন বাস্তবে লক্ষ্য করা যায়নি। রাস্তাটির জুরে গজিয়ে ওঠা গুল্ম, লতা-পাতা আগাছায় ঝোপ জঙ্গলে ভরা। বেশির ভাগ অংশে রাস্তা চেনাও কঠিন হয়ে যায়।
পায়ে হেঁটে রাস্তাটি সরে জমিনে দেখে ফেরার পথে কথা হয়- চাইরাগ্র পাড়া কারবারী মংচ মারমা’র সঙ্গে। তিনি বলেন, গত এক বছরে আজ অবধি চাইরাগ্র হতে সেংগূম এ রাস্তায় সরকারি-বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠান থেকে মাটি কাটা কিংবা জঙ্গল কাটার কোনটা কাজ করা হয়নি। এ রাস্তা উন্নয়নের জন্য কোন সংস্থা থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে কিনা তা কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
এদিকে সেঙ্গুম পাড়া প্রধান (কারবারী) মংওয়ে মার্মা (৫৭) বলেছেন, কেউ একজন এই রাস্তা সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেয়ার কথা তাঁকে জানিয়েছেন। তবে এর আগে কোথায় থেকে কত টাকা বরাদ্দ দিল, তা জানতেন না।
তার ভাষ্যমতে, গত বছর পাড়ার বৌদ্ধ বিহার নামে একটি সোলার দেয়ার কথা জানিয়ে নগদ তিন হাজার টাকা নেন- ১নং পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা। ওই টাকা কমিটি সদস্য ও ভান্তের সাথে পরামর্শ করে বৌদ্ধ বিহারে দান বাক্স থেকে নিয়ে গিয়ে চেয়ারম্যানকে দেয়া হয়ছিল।
কিন্তু নানা অজুহাতে কোনো সোনার দেয়নি। এ অবস্থায় সম্প্রতি একদিন রুমা বাজারে গিয়ে একটি দোকানে দেখা করে চেয়ারম্যানের নিকট জানতে চাওয়া হয়, বৌদ্ধ বিহার নামে কবে নাগাদ সোলার বরাদ্দ পাবে? এই প্রশ্নে তাঁর (সেঙ্গুম পাড়া কারবারী মংওয়ে মার্মা) উপর খানিকটা বিব্রত হন পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা। তখন চেয়ারম্যান তাঁক জানিয়েছেন, সোনার বা রাস্তা সংস্কারের পরিবর্তে আগামী আশ্বিনী পূর্ণিমার আগে জেনারেটর দেয়া হবে। বৌদ্ধ বিহারে দান বাক্সের টাকার মূল্য দিতে জানেননা উল্লেখ করে মংওয়ে মার্মা বলেন, চেয়ারম্যানের এসব ওয়াদা প্রতিশ্রুতি রাখেনা, বিশ্বাসযোগ্য না। তাই চেয়ারম্যানকে বলে এসেছিলেন, জেনারেটর লাগবেনা। বৌদ্ধ বিহারে দান বাক্স থেকে নিয়ে দেয়া টাকা ফেরত দিতে।
এক প্রশ্নের জবাবে সেঙ্গুম পাড়া প্রধান (কারবারী) মংওয়ে মার্মা বলেন, রাস্তা সংস্কার না করা নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিবেন না। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে সোনার টাকা আত্মসাৎ সহ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ দিয়েছিলেন এলাকাবাসীরা। কিন্তু প্রশাসন শেষ-মেষ নিরবে জনপ্রতিনিধির পক্ষে হয়ে যাওয়ায় কোনো সুবিচার বা কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। তাহলে অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে স্থানীয় ভোক্তভোগিদের উপকার বা কি হবে, প্রশ্ন করেন তিনি।
জানতে চাইলে টাকা নেয়ার কথা এড়িয়ে পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা বলেন, পাড়াবাসীর পরামর্শ ও চাহিদা মোতাবেক প্রকল্প টাকা থেকে বৌদ্ধ বিহারের জন্য জেনারেটর কিনে দেয়া হবে। রাস্তা সংস্কারের জন্য আরো ৩০ হাজার টাকা পাড়াবাসীকে দেয়া হবে, এ বিষয়ে পাড়া প্রধান মংওয়ে মার্মা সাথে কথা হয়েছে। আর পাড়াবাসী যদি শুধু রাস্তা সংস্কারের চায়, সব টাকা রাস্তা সংস্কারের জন্য দিয়ে দেবেন বলে উল্লেখ করেন চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা।
প্রকল্পের কাজ না করার বিষয়ে জানতে চাইলে ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য উম্যানু মার্মা বলেছেন এখনো প্রকল্পের সব টাকা পায়নি। তাছাড়া ছেলে চিকিৎসার জন্য বেশ কয়েকদিন ধরে রুমার বাইরে রয়েছেন। তবে প্রকল্পের সব টাকা পেলে কাজ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
যোগাযোগ করা হলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি জানার পর দ্রুত গতিতে প্রকল্প দুটির কাজ করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আশাকরি দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।