॥ নন্দন দেবনাথ ॥
কে হচ্ছেন রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এই নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা কল্পনা। বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য একজনকে ব্যক্তির দ্বারা রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ পরিচালিত হবে এমনটাই দাবী উঠেছে। রাঙ্গামাটির সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা বলেন, ৭টি সম্প্রদায় যে কোন সম্প্রদায় থেকে যোগ্যতা সম্পন্ন লোককে চেয়ারম্যান করা হোক। সেই ক্ষেত্রে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ নিয়ে অনেকের নাম ভেষে উঠলেও আসলে কে হচ্ছেন রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এই নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে কৌতুহলের শেষ নেই।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের আইনে বলা হয়েছে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের ধারা-৪ উপধারা(৩) এ উপজাতীয় ৭টি সম্প্রদায়কে স্বীকৃতি দেয়া আছে, তার মধ্যে, চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, পাংখোয়া, লুসাই এবং খেয়াং এবং উপধারা (৪) চেয়ারম্যান উপজতীয়গনের মধ্য হইতে নির্বাচিত হইবেন এমটাই উল্লেখ্য রয়েছে। তবে এই আইনে কোন ভাবেই বাঙ্গালী সম্প্রদায় থেকে দেয়া যাবে না। তাই আমরা ধরেই নিতে পারে উপজাতীয় ৭টি সম্প্রদায় হতে যে কেউ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হবেন।
সে ক্ষেত্রে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে আগামীর চেয়ারম্যান হিসাবে সাবেক সেনা বাহিনীর উর্দ্ধতন কর্মকর্তা তুষার কান্তি চাকমা, রাঙ্গামাটি কৃষি বিভাগের সাবেক ডিডি কাজল তালুকদার, সাবেক চেয়ারম্যান রবীন্দ্র লাল চাকমাসহ মারমা কমিউনিটি সম্প্রদায় থেকে কয়েকজনের নাম আসলেও কেউ নাম প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানিয়েছেন।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী ১৯৮৯ হতে ২০২৪ পর্যন্ত ৯ বার পরিষদ পুনর্গঠণ করা হয়েছে। তার মধ্যে চেয়ারম্যান চাকমা সম্প্রদায় থেকে ৭ জন এবং মারমা সম্প্রদায় থেকে ২ জনকে সহ মোট ৯ জনকে চেয়ারম্যান পদে মনোনীত করা হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, পাংখোয়া, লুসাই এবং খেয়াং সম্প্রদায় থেকে কোন প্রকার চেয়ারম্যান মনোনীত করা হয়নি। তাই এখন দাবী উঠেছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৭টি সম্প্রদায় থেকে একজন চেয়ারম্যান মনোনয়ন দেয়ার।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী ১৯৮৯ হতে ২০২৪ পর্যন্ত ৯ বার পরিষদ চেয়ারম্যান পদে মনোনীত যারা হয়েছেন তাদের মেয়াদকাল ছিল ১। গৌতম দেওয়ান (চাকমা সম্প্রদায় থেকে) ২৫ জুন ১৯৮৯ হতে ১৭ জুন ১৯৯২ ইং পর্যন্ত। ২। পারিজাত কুসুম চাকমা (চাকমা সম্প্রদায় থেকে) ১৭ জুন ১৯৯২ হতে ৪ মার্চ ১৯৯৬ ইং পর্যন্ত। ৩। রবীন্দ্রলাল চাকমা (চাকমা সম্প্রদায় থেকে) ২০ মার্চ ১৯৯৬ হতে ৫ মার্চ ১৯৯৭ ইং পর্যন্ত। ৪। চিংকিং রোয়াজা (মারমা সম্প্রদায় থেকে) ৫ জুলাই ১৯৯৭ হতে ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০০২ ইং পর্যন্ত। ৫। ড. মানিকলাল দেওয়ান (চাকমা সম্প্রদায় থেকে) ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০০২ হতে ১২ জুন ২০০৭ ইং পর্যন্ত। ৬। জগৎ জ্যোতি চাকমা (চাকমা সম্প্রদায় থেকে) ১৫ জুলাই ২০০৭ হতে ২৫ মে ২০০৯ ইং পর্যন্ত। ৭। নিখিল কুমার চাকমা (চাকমা সম্প্রদায় থেকে) ২৫ মে ২০০৯ হতে ২৯ মার্চ ২০১৫ ইং পর্যন্ত। ৮। বৃষকেতু চাকমা (চাকমা সম্প্রদায় থেকে) ২৯ মার্চ ২০১৫ হতে ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত। ৯। অংসুইপ্রু চৌধুরী (মারমা সম্প্রদায় থেকে) ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ হতে ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত।
বর্তমান সরকারের আমলে সকল বৈষম্য দুর করতে সারা দেশে গণজোয়ার উঠেছে। এই গণজোয়ারের মধ্যে বিভিন্ন বিদ্যালয়, বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠান সহ সর্ব ক্ষেত্রে বৈষম্য দুর করতে আন্দোলন চলছে। তেমনি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সম্প্রদায় গুলো থেকেও পার্বত্য জেলা পরিষদ গুলোতেও বৈষম্য দুর করার দাবী উঠেছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের এই দাবীর প্রেক্ষিতে রাঙ্গামাটির কিছু নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলা হলে তারা জানান ৭ টি সম্প্রদায় যে কোন সম্প্্রদায় থেকে যোগ্যতা সম্পন্ন লোককে চেয়ারম্যান করা হোক।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য ও রাঙ্গামাটি সুশীল সমাজের প্রতিনিধি নিরূপা দেওয়ান বলেন, বর্তমান সরকারের আমালে সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য দুর হচ্ছে। তেমনি রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের নির্বাচন হোক আমরা সেটা চাই তবে এখন নির্বাচন দেয়া কোন ভাবেই সম্ভব নয়। তাই আমরা মনে করি একজন গ্রহণযোগ্য মানুষকে পার্বত্য অঞ্চলের মিনি পার্ল্লামেন্ট রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত করা হোক। সেটা নৃ গোষ্ঠী যে কোন সম্প্রদায় থেকে হতে পারে। এখানে শুধু চাকমা, মারমা থেকে আসবে তা না ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর যে কোন সম্প্রদায় থেকে যোগ্যতা অনুসারে চেয়ারম্যান হতে পারে।
মারমা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি মিন্টু মারমা জানান, আমরা চাই একজন যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষ রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হোক। রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের আইনে আছে রাঙ্গামাটির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকেই চেয়ারম্যান মনোনীত হবে। আমরা আশা করছি রাঙ্গামাটি ৭টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী যে সম্প্রদায়ের হোক না কেন শিক্ষিত ও যোগ্যতা সম্পন্ন লোকই বর্তমান সরকার চেয়ারম্যান মনোনীত করবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলার সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক মোঃ সোলায়মান বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের কল্যাণে পার্বত্য অঞ্চলের জেলা পরিষদ গুলোর নির্বাচনের কোন বিকল্প সমাধান নেই। পার্বত্য জেলা পরিষদগুলো গঠন করা হয়েছে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কিন্তু কোন ভাবেই এই সমস্যা সমাধান করা যায়নি। ইতিমধ্যে অর্তবর্তীকালীণ যে সকল পরিষদ গঠন করা হয়েছে। তা শুধু মাত্র বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের দলীয় লোকদেরকে পুর্নবাসন করেছে। এখানে সকল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়নি। তিনি বলেন, এই জেলা পরিষদ গুলো গঠন করতে হলে জনসংখ্যা অনুপাতে গঠন করতে হবে। তিনি আরো বলেন আইনে ৭টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের কথা বলা হলেও চাকমা ও মারমাদের আধিপত্য ছিলো বেশী। এখানে অন্য ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সম্প্রদায়কে পিছনে ফেলে রাখা হয়েছে। তিনি জেলা পরিষদ গুলোর বৈষম্য দুর করতে হলে সকল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে একটি গ্রহণযোগ্য পরিষদ গঠন করতে হবে।
সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পক্ষ মতামতের ভিত্তিতে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে একজন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী যে গোষ্ঠী গুলো থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়নি এমন গোষ্ঠী থেকে চেয়ারম্যান মনোননয়ন দেবে এমনটাই আশা করছেন সকলে।