মধ্যরাতে শুরু হচ্ছে এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম জলরাশি রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের মাছ শিকার

65

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
দীর্ঘ ৪ মাস বন্ধ থাকার পর ১লা সেপ্টেম্বর থেকে এশিয়ার বৃহত্তম এই কৃত্রিম জলরাশি রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের মাছ শিকার শুরু হচ্ছে। সরকারী সিদ্ধান্ত মোতাবেক রাঙ্গামাটির জেলার ব্যবসায়ীরা ৩১শে সেপ্টেম্বর রাত ১২টা থেকে হ্রদের জাল ফেলা শুরু করবে। আর মধ্যরাত থেকে চিরচেনা রূপে ফিরছে কাপ্তাই হ্রদ। দীর্ঘ ৪ মাস পর কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার শুরু হওয়ায় রাঙ্গামাটির ব্যবসায়ীদের মাঝে কর্ম ব্যস্ততা বৃদ্ধি পাবে।
রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন, পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধি নিশ্চিতকরণসহ কাপ্তাই হ্রদের প্রাকৃতিক পরিবেশকে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির সহায়ক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের আদেশে দীর্ঘ ৪ মাস বন্ধ থাকার পর ১ সেপ্টেম্বর থেকে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের মাছ শিকার শুরু হচ্ছে। সরকারী সিদ্ধান্ত মোতাবেক রাঙ্গামাটির জেলার ব্যবসায়ীরা ৩১ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা থেকে হ্রদের জাল ফেলা শুরু করবে। ১লা সেপ্টেম্বর সকাল ৬টায় রাঙ্গামাটির বিএফডিসির ৪টি অবতরণ ঘাটে মাছ অবতরণ শুরু হবে।
আর মাছ শিকার শুরু হওয়ায় সকাল থেকে রাঙ্গামাটির বিএফডিসির অবতরণ ঘাটে মৎস্য ব্যসায়ী ও কর্মচারীদের মাঝে কর্ম তৎপরতা ও প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরবে। খুলে দেয়া হবে শহরের সকল বরফ কল। জেলে ও মাছ ব্যসায়ীদের কর্ম তৎপরতা শুরু হওয়ায় রাঙ্গামাটি শহরের মাছের বাজারগুলোতেও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে। অবতরণ ঘাটে এসব মাছের শুল্কহারসহ প্রয়োজনীয় কাজ শেষে দেশের বিভিন্নস্থানে বাজারজাতকরণ করা হবে।
এ বিষয়ে কাপ্তাই মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি নবী হোসেন জানান, শনিবার মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার শুরু হতে যাচ্ছে। এতে করে দীর্ঘ চার মাসের বেশির সময় পর কাজে ফিরছেন আমাদের জেলে-ব্যবসায়ীরা। সবার মাঝে উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করছি, এ বছর কাপ্তাই হ্রদের মাছের গুনগত মান ভালো হবে। তিনি আরো বলেন, গত কয়েক বছর ধরে কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি না পাওয়ায় হ্রদে সকল ধরনের মাছের আকার ছোট ছিল এবং প্রথম এক মাসের মধ্যে সব মাছ আহরণ শেষ হয়ে যেতো। এবার কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি হওয়ায় পুরো বছর জুরে মাছ আহরণ করতে সক্ষম হবেন। এতে লাভবান হবেন ব্যবসায়ীরা।
রাঙ্গামাটি বিএফডিসির ব্যবস্থাপক কমান্ডার মোঃ আশরাফুল আলম ভূইয়া বলেন, ইতোমধ্যেই বিএফডিসির পক্ষ থেকে সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। রাঙ্গামাটি শহরের প্রধান বিপণনকেন্দ্রসহ অন্যান্য বিপণনকেন্দ্রগুলোর অবতরণ ঘাটগুলো আগেই প্রস্তুত করা হয়েছে। রবিবার ভোর থেকে অবতরণ ঘাটে মাছ নিয়ে আসবেন জেলেরা। এরপর এই মাছের শুল্কহার আদায় শেষে বাজারজাত করবেন ব্যবসায়ীরা। এবার রাঙ্গামাটি কাপ্তাই হ্রদে মাছের সুষ্ঠু প্রাকৃতিক প্রজনন, বংশ বিস্তারের কারণে মাছের উৎপাদন আগামী দিনের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলেও জানান রাঙ্গামাটি বিএফডিসির ব্যবস্থাপক।
এশিয়ার বৃহত্তম এই কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদে ৬৬টি দেশিও প্রজাতির ও ৬টি বহিরাগত প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। আর হ্রদের মিঠা পানির মাছ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই রাঙ্গামাটি এই কাপ্তাই হ্রদে মাছের প্রকৃতিক প্রজনন ধরে রাখতে কাপ্তাই হ্রদের মৎস্য সম্পদ রক্ষাসহ বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে দ্রুত কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালে জল বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষে রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে সৃষ্টি করা হয় ২৫৬ বর্গমাইল আয়তনের কৃত্রিম এই কাপ্তাই হ্রদ। পরবর্তীতে এই হ্রদ হয়ে উঠে মিঠাপানির মাছের সবচেয়ে বড় ভান্ডার। দেশের অন্যতম বৃহৎ এই কৃত্রিম হ্রদে দেশীয় রুই প্রজাতির মাছের বড় একটি অংশ দেশের বিভিন্ন স্থানে যোগান দেয়া হয় এখান থেকে।
#