খাগড়াছড়িতে সরকারী ভাবে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের কাজ চলছে, চার দফা বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

56

॥ খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি ॥
খাগড়াছড়িতে সরকারী ভাবে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের কাজ চলছে। বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্টান তাদের মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের এবিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করেছে।
এদিকে পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়িতে সাম্প্রতিক বন্যা পরবর্তী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ফুটে উঠেছে। গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামো, কৃষি খাত ও কাঁচা ঘরবাড়ি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে মানুষ ফিরলেও কাটেনি দুর্ভোগ। রেখে আসা ঘর-বসতির পুরোটাই যেন ধ্বংস্তুপ। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো সব হারিয়ে পথে বসার উপক্রম। এছাড়া বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর এখনো তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। পরপর চার বারের বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির মূখে খাগড়াছড়ি। জেলা সদর ছাড়াও দীঘিনালা, রামগড় ও মহালছড়ি উপজেলায় বন্যায় কবলিত হওয়ার সংখ্যা বেশি।
জেলা ত্রাণ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা সূত্র অনুযায়ী এই দূর্যোগে খাগড়াছড়ি জেলায় প্রায় ১ লক্ষাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। বন্যার পানিতে মারা গেছে এক কিশোরী। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে সৃষ্ট ক্ষতচিহ্ন দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৩৫ হাজার কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি বিনষ্ট হয়েছে। চেঙ্গী, মাইনী ও ফেনী নদীর তীরবর্তী বহু মানুষের ঘরবাড়ির টিন, আসবাবপত্র ও গবাদি পশু ভেসে নিয়ে গেছে। কেবল মানুষের পারিবারিক ক্ষতিই নয়; ভয়াল বন্যায় জেলার গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামো অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সূত্রে মতে, জেলায় ১০৭ কিলোমিটার রাস্তা, ১৪টি কালভার্ট ও ৩টি সেতুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া কৃষি খাতেও ৩ হাজার ১৮০ হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতির তথ্য দিয়েছে কৃষি বিভাগ। এরমধ্যে রোপা আমন, আউশ ও গ্রীস্মকালীন শাক-সবজি রয়েছে। ফলে ১৩ হাজার ৩ শত ৩০ জনেরও বেশি কৃষকের মাথায় হাত। শুধু কৃষি খাতে ক্ষয় ক্ষতির পরিমান ৬ কোটি ৬৬ লক্ষ, ৭৫ হাজার ৫ শত ৪০ টাকা। বন্যায় ১৫৬টি মংস্য খামার ধ্বংস ও ৫টি মাছের ঘের এবং ১হাজার ৫শত ৬৯টি পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। মংস্য বিভাগ সুত্রে এ খাতে ক্ষয় ক্ষতির পারমান ৬৫ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া বন্যার পানিতে ৬৫টি পুশুর খামার, ৮৫টি গরু ছাগল, ৫৬৬৫ টি হাঁস মুরগী বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এ খাতে ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ ১ কোটি ৩ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা। তবে বিভিন্ন মহল থেকে ধারণা করা হচ্ছে এ বন্যায় খাগড়াছড়িতে ক্ষতির পরিমাণ ছাড়িয়ে যাবে ১ হাজার কোটির বেশি।
এদিকে, জেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগাম রবিশষ্য চাষে প্রণোদনা দেয়া হবে। অন্যদিকে এলজিইডি‘র নির্বাহী প্রকৌশলী তৃপ্তি শংকর চাকমা বললেন, যোগাযোগ সচল রাখতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১০ কিলোমিটার সড়ক ও ১ টি সেতু মেরামত করা হয়েছে ।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মোঃ শহিদুজ্জামান জানান, জেলার ৯ উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার্তদের সহায়তায় জেলা প্রশাসন এ পর্যন্ত ৫০২ মেট্রিক টন খাদ্যশষ্য ও নগদ সাড়ে ১২ লাখ টাকা রবাদ্দ পেয়েছে। তিনি আরো জানান, ক্ষতিগ্রস্ত লোক জনের বাড়ী ঘর নির্মানের জন্য নগদ অর্থ ও ঢেউটিন বরাদ্ধ চেয়ে ত্রান মন্ত্রনালয়ে পত্র প্রেরন করা হয়েছে। অন্যদিকে সেনাবাহিনী, শিক্ষার্থী, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ত্রান সহায়তায় এগিয়ে এসেছে।