থানচিতে বাড়ছে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব, চিকিৎসক সংকট

45

॥ থানচি প্রতিনিধি ॥
বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার চিকিৎসক সংকটের মধ্যে হঠাৎ ম্যালেরিয়া আক্রান্ত সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র দুই চিকিৎসকের মধ্যে একজন ট্রেনিংয়ে থাকায় রিতিমতো চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। এ সময়ের পর্যাপ্ত পরিমান চিকিৎসক পোষ্টিং দেয়ার দাবী করেছেন এলাকাবাসী।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালে জুন ও জুলাই দেড় মাসের মাসের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে’র মোট ৬৪জন ম্যালেরিয়া রোগীকে ভর্তি করে সুস্থ করেছেন। একই মাসের এনজিও সংস্থা ব্র্যাক কর্মীদের পাড়া পাড়ায় চিকিৎসা দিয়েছে ২২২ জন ম্যালেরিয়া রোগীকে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হতে সেবা দিতে না পেরে ইতিমধ্যে ৩ জনকে বান্দরবান জেলা ও একজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে রেফার করে সুস্থ হয়ে ফিড়েছে।
প্রতি বছর বর্ষাকাল শুরুতে জুন-অক্টোবর ৫ মাস বান্দরবানের থানচির দুর্গম এলাকায় দেখা দেয় ম্যালেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব বেশী দেখা দেয়। নানা প্রতিকূলতায় রোগীরা পাচ্ছেন না জরুরি চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ। দুর্গম এলাকায় যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ না হওয়ায় ও মোবাইলের নেটওয়ার্ক না থাকায় প্রায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এই এলাকাগুলো। তবে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন রোগী স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
চিকিৎসকদের মতে, বর্ষায় মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে পারে এ আশংঙ্খা ছিল। এদিকে থানচি উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের মোট ২৭৭টি গ্রামের মধ্যে ৬৬টি গ্রামকে ম্যালেরিয়া চিহ্নিত করে স্বাস্থ্য বিভাগ ম্যালেরিয়া জোন হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে।
রবিবার (১৪ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র পুরুষ ও নারী দুইটি ওয়ার্ডে অন্যান্য রোগীর মধ্যে ম্যালেরিয়া রোগী ৯ জন দেখা মিলেছে। চিকিৎসাধীন অবস্থা সিনিয়র নার্স লালসাংপার বম বলেন, পাহাড়ে বেশীর ভাগ মানুষ ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে বাড়ীতে সাধারণ ভাইরাস জ্বর ভেবে অনেকে বাড়ীতে (দেবতা ধরছে মনে করে) প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে দেবতাদের মোরগ, ছাগল, গরু খাওয়ানো হয়। সাথে বাজার থেকে পেরাসিটামল ট্যাবলেট ঔষধ সেবন করে অনেক দিন রেখে দেয়। রোগী অবস্থা আশংঙ্খা জনক খুবই দুর্বল হওযার পর উপরন্ত না পেয়ে আমাদের হাসপাতালে ভর্তি করেন। আমরা দুর্বল রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে অনেককে হাসপাতার স্থানান্তরও করতে হয়েছে। তবে এ বছরে কোন রোগীকে চিকিৎসা অভাবে মরতে হয়নি। যারা হাসপাতালের ভর্তি হয়েছে তাদের সুস্থ করে তোলার আমাদের কর্তব্য ও দায়িত্ব।
আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা: মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ২০২৩ সাল থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ছাড়াও আবাসিক চিকিৎসক ডা: মেহনাজ ফাতেমা তুলি ও আমি দুইজন, চলতি মাসের ডা: তুলিকে ট্রেনিংয়ে নিয়ে গেছে। আমি একজনকে ২৪ ঘন্টা ডিউটি দিতে হয়। কি করে সম্ভব প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, উর্ধতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া আমাদের কিছু করার নেই। আগামি অক্টোবর মাস পর্যন্ত বোধ হয় একাই সামাল দিতে হবে।
যোগাযোগ করা হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো: ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ জানান, আমি বর্তমানে চট্টগ্রামে ট্রেনিংয়ে আছি এক সপ্তাহ সময় লাগবে। গত জুন হতে উপজেলা গ্রামে গ্রামে ম্যালেরিয়া প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আবাসিক চিকিৎসক মাত্র দুইজন তার মধ্যে একজন ট্রেনিংয়ে। চিকিৎসক সংকটের কথা উর্ধতম কর্তৃপক্ষকে বার বার জানিয়ে দেয়ার পর ও আমাদের পোষ্টিং দিচ্ছে না। চিকিৎসক সমস্যা কারনে কোন একজন ম্যালেরিয়া রোগী যদি মারা যায় তাহলে আমরা দায়িত্ব থাকবো না। আমি রাসেল ভাইপারের সাপে কামরে ভ্যাকসিন টিকা পর্যাপ্ত পরিমান চাহিদা পত্র উর্ধতম কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হলেও এখনও ভ্যাকসিন টিকা দিচ্ছে না। আমাদের কর্মীরা পাহাড়ে পায়ে হেঁটে চিকিৎসা দিতে গেলে সাপের কামর দিতে পারে পাহাড়ে প্রচুর পরিমান সাপ রয়েছে জরুরীভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োজন। এ ছাড়াও বান্দরবান জেলা হাসপাতালে আমাদের একজন চিকিৎসক প্রেষনে রয়েছে তাকে পু:নরায় পাঠানো জন্য উর্ধতম কর্তৃপক্ষের নিকট এ সময়ের দাবী জানাচ্ছি।
যোগাযোগ করা হলে বান্দরবানের সিভিল সার্জেন্ট ডা: মো: মোহাবুবুর রহমান বলেন, থানচি উপজেলার চিকিৎসক সংকট কথা জেলার আইন শৃংঙ্খলার সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের রিপোর্ট দেয়া হয়েছে কিন্তু এখনও পর্যন্ত চিকিৎসক পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। থানচি থেকে প্রেষনে একজন চিকিৎসক রয়েছে তিনি বদলি হয়ে গেছে। প্রেষনে অপর একজনের আছে সেটি আমার জানা নেই খোঁজ নিয়ে জেলা সদরে প্রেষনে থাকলে শীঘ্রই থানচি উপজেলা পাঠানো হবে। সাপের কামরে ভ্যাকসিন ও শীঘ্রই পাঠানো হবে।
উল্লেখ্য: গত বছরে ১১ জুলাই থানচিতে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসক সংকটের কারনে ৩ জন শিশু প্রাণ হারিয়েছিল।