॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
রাঙ্গামাটির ভয়াবহ পাহাড় ধসের মর্মান্তিক ঘটনার ৭ বছর পূর্ণ হলেও মৃত্যুকুপের নীচে মানুষর বসবাস করেনি বরং বেড়েছে। ২০১৭ সালের ১৩ জুনের রাতে টানা তিনদিনের ভারী বৃষ্টি আর বজ্রপাতে রাঙ্গামাটিতে ঘটে যায় স্মরণ কালের পাহাড় ধসের ঘটনা। ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় ৫ জন সেনা সদস্যসহ নারী পুরুষ ও শিশুসহ ১২০ জনের প্রাণহানী ঘটে। এর মধ্যে শহরের মানিকছড়িতে একটি সেনা ক্যাম্পের নিচে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কের উপর ধসে পড়া মাটি অপসারণ করতে গিয়ে পুনরায় পাহাড় ধসের মাটি চাপা পড়ে নিহত হন ঐ ক্যাম্পের দুই কর্মকর্তাসহ ৫ সেনা সদস্য।
রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মানিকছড়ি শালবাগান অংশে ১০০ মিটার রাস্তা সম্পূর্ণ ধসে গিয়ে দীর্ঘ ৯দিন সারা দেশের সাথে রাঙ্গামাটির সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে। বছর ঘুরে দিনটি ফিরে এলে রাঙ্গামাটিবাসীর মনে দেখা দেয় আতঙ্কের সেই ভয়াল স্মৃতি। আর এই ঘটনার ৭ বছর পরও এবার বর্ষা মৌসুম শুরু হলে ভারীবৃষ্টির আগাম সতর্কতায় সে আশংকায় সকলকে ভাবাচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের হিসাবে রাঙ্গামাটি সদরে ৬৬ জন, জুরাছড়ি উপজেলায় ৬জন, বিলাইছড়ি উপজেলায় ২জন, কাপ্তাই উপজেলায় ১৮জন এবং কাউখালী উপজেলায় ২১ জন মিলে মোট ১১৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে শিশু-৩৩, মহিলা-৩২, পুরুষ ৪৮ জনের মরদেহ পাওয়া যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে অন্য যে কোন পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে ২০১৭ সালের ১৩ জুনের পাহাড় ধসের ঘটনা সেরকম ছিলনা। রাঙ্গামাটি ব্যাপক প্রানহানীর সাথে ব্যাপক ভৌত অবকাঠামো ভীষনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাহাড়ে ঘরবাড়ী আছে এমন পাহাড়ও যেমন ভেঙ্গেছে, তেমনী ঘরবাড়ী ছিলনা এমন অসংখ্য পাহাড়ও ভেঙ্গে পড়ে। আবার ঝোপ জঙ্গল গাছপালাতে ভরপুর এমন পাহাড়ও ভেঙ্গে পড়ে। এক কথায় সব রকম পাহাড়েই মাটি ধস ধসে পড়ে। এটার ব্যাপ্তি, বিস্তৃতিও গভীরতা অনেক বেশী ছিল।
টানা তিনদিনের প্রবল বর্ষনে পাহাড় ধসে রাঙ্গামাটির এত লোকের প্রাণহানি, ঘরবাড়ি, সড়ক যোগাযোগ, বিদ্যুতের এতবড় ক্ষতি হবে সেদিন কেউ ভাবতে পারেনি। সেদিন মুহূর্তেই সব দিক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল পর্যটন শহর রাঙ্গামাটি।
২০১৭ সালে রাঙ্গামাটির ভয়াল পাহাড় ধ্বসের ঘটনার ৭ বছর পার হলেও এখনো অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। পাহাড়ের নীচে মানুষের বসবাস কমেনি বরং আগের চেয়ে আরো বেশী বেড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো আজও বাস করছেন পাহাড়ের গায়ে। গেল ৭বছর আগে পাহাড়ের নীচে যেসব স্থানে ঘরবাড়ি ছিলো না সেখানে নতুন করে স্থাপনা তৈরী করে বসবাস করছে মানুষ। এতে শহরের বেশকিছু স্থানে পাহাড়ের পাদদেশে আবারো অসংখ্য বাড়ি-ঘর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তারা চায় সরকারের পক্ষ থেকে স্থায়ী পূর্ণবাসন।
পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় বসবাসকারীদের বর্ষা মৌসুমে ভারী বৃষ্টিপাতের সময় অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হলে পাহাড় ধসের প্রাণহানি রোধ করা সম্ভব বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।