ম্যালেরিয়ার টিকা টেষ্ট হিসাবে দেশে প্রথম ব্যবহার হবে লামা ও আলীকদম উপজেলার ১০ হাজার মানুষের মাঝে

21

॥ লামা প্রতিনিধি ॥
“সবার জন্য টিকা এবং সবার জন্য ঔষধ” (এমভিডিএ) বাংলাদেশে ও ম্যালেরিয়া নির্মূলে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি স্বাস্থ্য গবেষণা বিষয়ক”অবহিতকরণ ও প্রেস ব্রিফিং” সোমবার (১ এপ্রিল) লামা উপজেলা পরিষদ হলরুমে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন মোর্শেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গবেষণা বিষয়ক উপস্থাপনা করেন অধ্যাপক মোঃ আবুল ফয়েজ, সাবেক মহাপরিচালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও প্রধান গবেষক।
ম্যালেরিয়ার সংক্রম থেকে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষকে বাঁচাতে যুক্তরাজ্যের বিশ্বখ্যাত অক্সপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবিত দ্যা আর টুয়েন্টি ওয়ান ম্যাট্রিক্স-এম ম্যালেরিয়া ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করা হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত এই টিকা ইতোমধ্যে ৭৭% উচ্চ কার্যক্ষমতা বলে প্রমাণিত হয়েছে। এটি ম্যালেরিয়ার জন্য উদ্ভাবিত দ্বিতীয় টিকা এবং এটি উৎপাদন করেছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট।
গবেষণাটি বাস্তবায়নের জন্য বান্দরবান জেলার লামা এবং আলীকদম উপজেলার ১শত গ্রামের প্রায় ১০হাজার মানুষকে নির্বাচিত করা হবে এবং এই ১শত গ্রামের ১০হাজার মানুষকে দৈবচয়নের মাধ্যমে সমানভাবে মোট চারটি ক্লাস্টার বা গ্রুপে ভাগ করা হবে।
জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচী (কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল-সিডিসি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই গবেষণায় ডেভ কেয়ার ফাউন্ডেশন, মাহিদল – অক্সফোর্ড রিসার্চ ইউনিট, ব্যাংকক, থাইল্যান্ড ও জেনার ইনস্টিটিউট, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য ও সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ – সিআইপিআরবি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, বিআইটিআইডি ও ব্র্যাক সম্পৃক্ত রয়েছে।
ম্যালেরিয়া নির্মূলে গবেষণা (এমভিডিএ): “সবার জন্য টিকা এবং সবার জন্য ঔষধ”, বাংলাদেশ নিয়ে বিস্তারিতঃ
পটভূমি: সাধারণত বনে বা পাহাড়ে গেলে অনেক মশা আমাদের কামড়ায়। ম্যালেরিয়া জীবাণু মশার শরীরে বাস করে এবং এনোফিলিস মশার কামড়ের মাধ্যমে তা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। এতে আমাদের ম্যালেরিয়া রোগ হয়।
ম্যালেরিয়া জীবাণুবাহী মশা কামড় দেয়ার সাত থেকে ষোল দিন পর ম্যালেরিয়ার উপসর্গ দেখা দেয়: কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, মাথা ব্যথা, বমি ভাব, বমি, ক্লান্তিভাব এবং শরীর ব্যথা। সময় মতো চিকিৎসা না নিলে মারাত্মক ম্যালেরিয়া হতে পারে যা প্রাণঘাতী। জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির বর্তমানে চলমান সেবাগুলো হলো:
মশার কামড় থেকে বাচাঁর জন্য কীটনাশকযুক্ত মশারী ব্যবহার এবং অন্যান্য প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, বাড়ির কাছের স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে দ্রুত ম্যালেরিয়া রোগ নির্ণয় এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করা, মারাত্মক ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা প্রদান।
বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ সাল নাগাদ ম্যালেরিয়া নির্মূল করা। তবে ধারণা করা হচ্ছে যে, কেবল চলমান সেবা দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নাও হতে পারে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন চলমান সেবার সাথে “সবার জন্য ম্যালেরিয়ার টিকা এবং ঔষধ” প্রয়োগ দ্রুততম সময়ে ম্যালেরিয়া নির্মূলের জন্য একটি ভালো পদক্ষেপ হতে পারে।
বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ডেভ কেয়ার ফাউন্ডেশন ও অন্যান্য সংস্থা থাইল্যান্ডের মাহিদল অক্সফোর্ড রিসার্চ ইউনিটের সহযোগিতায় ম্যালেরিয়া নির্মূলে টিকা এবং ঔষধের কার্যকারিতা নির্ণয়ের জন্য লামা ও আলিকদম উপজেলায় একটি গবেষণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
গবেষণা এলাকা: গবেষণাটি বান্দরবান পাবর্ত্য জেলার লামা এবং আলিকদম উপজেলার সবচেয়ে বেশি ম্যালেরিয়া সংক্রামক ১০০টি পাড়া/গ্রামে করা হবে।
সার্বিক সহযোগীতায় গবেষক হিসাবে আছেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা: লামা ও আলিকদম উপজেলা। ভর্তির জন্য প্রয়োজন হলে রোগী রেফার করা হবে: উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্স লামা ও আলিকদম, বান্দরবান পার্বত্য জেলা।
বাংলাদেশে ২০২৩ইং সালে ১৬,৫৬৭ জন ম্যালেরিয়া রোগীর মধ্যে ১০,০০১ (৬০.৪%) জন বান্দরবান পাবর্ত্য জেলায়, যার মধ্যে ২৪২২ জন লামা এবং ২৬৩২ জন আলিকদম উপজেলায়। ম্যালেরিয়া রোগের সর্বোচ্চ সংক্রমণ দেখা যায় বর্ষা মৌসুমে (জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে)।
গবেষণার প্রাথমিক উদ্দেশ্য: এই গবেষণাটি হলো ম্যালেরিয়া নির্মূলের জন্য নতুন টিকার কার্যকারিতা নিয়ে। “সবার জন্য টিকা এবং সবার জন্য ঔষধ” প্রয়োগে ম্যালেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধের কার্যকারিতা যাচাই করা।
প্রাথমিক ভাবে ১০০ পাড়া/গ্রামে এই গবেষণা পরিচালিত হবে যেখানে বার্ষিক প্যারাসাইট সূচক >৫ প্রতি ১০০ জন জনসংখ্যা। গবেষণায় অর্ন্তভূক্ত আনুমানিক জনসংখ্যা প্রায় প্রতি গ্রাম/পাড়ার ১০,০০০ জনসংখ্যা রেঞ্জ ৫০-৫০০।
পদক্ষেপ- এক মাস পর পর মোট তিন বার টিকা এবং এক বছর পর টিকার বুষ্টার ডোজ। এক মাস পর পর তিন দিন করে মোট তিনবার ঔষধ।
ম্যালেরিয়া টিকা-ম্যালেরিয়ার এই টিকা যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবন করেছে এবং ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদন করছে। এটি ফ্যালসিপ্যারাম ম্যালেরিয়ার জন্য উদ্ভাবন করা ২য় টিকা। গবেষণার দ্বিতীয় ধাপে এই টিকার উচ্চ কার্যক্ষমতা পাওয়া গেছে (৬ মাস: ৭৭%), যা প্রায় এক বছর পরে বুস্টার ডোজের পরে (এক বছর: ৭৭%)। টিকাটি ইতিমধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রি-কোয়ালিফাই (অনুমোদন) করা হয়েছে।
গবেষণার ডিজাইন: গবেষণার জন্য নির্বাচিত গ্রাম গুলোকে চারটি গ্রুপে ভাগ করা হবে। ক্লাস্টার-এলোমেলো ওপেন-লেবেল নিয়ন্ত্রিত হস্তক্ষেপ ট্রায়াল ক্লাষ্টার-এলোমেলো (শটারীর ন্যায়) ওপেন-লেবেল নিয়ন্ত্রিত হস্তক্ষেপ ট্রায়াল পাড়াগ্রাম।
দৈবচয়ন/পাটারী জধহফড়সরুবফঃ সবার জন্য টিকা-সবার জন্য ঔষধ+ চলমান সেবা। সবার জন্য টিকা+ চলমান সেবা সবার জন্য ঔষধ+ চলমান সেবা।
গ্রুপ- ১: “সবার জন্য টিকা এবং সবার জন্য ঔষধ” প্রয়োগ ও চলমান সেবা (২৫টি গ্রাম)- এই গ্রাম গুলিকে টিকা ও ঔষধের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। এই গ্রামের সবাই:
এক মাস পর পর মোট ৩ বার টিকা পাবেন ও ঔষধ খাবেন এবং এক বছর পর টিকার বুস্টার ডোজ নেবেন। নিয়ম মেনে সব ঔষধ খেতে হবে এবং টিকার সব ডোজ নিতে হবে। ম্যালেরিয়া নির্ণয়ের জন্য ৬ মাস পর পর মোট পাঁচবার, প্রতিবারে তিন ফোঁটা করে রক্ত নেয়া হবে। প্রতিজনের জন্য দেয়া গবেষণার ঔষধ অন্য কাউকে দেয়া যাবে না এবং অন্যকে দেয়া ঔষধও কেউ খেতে পারবেন না। গবেষণার ঔষধ নেয়ার সময়, স্বাস্থ্যকর্মী বা গবেষণার কর্মীর পরামর্শ ছাড়া বাইরের কোন ঔষধ কিনে খাওয়া যাবে না। নিয়ম মেনে সব ঔষধ খেতে হবে এবং টিকার সব ডোজ নিতে হবে। ম্যালেরিয়া নির্ণয়ের জন্য ৬ মাস পর পর মোট পাঁচবার, প্রতিবারে তিন ফোঁটা করে রক্ত নেয়া হবে। প্রতিজনের জন্য দেয়া গবেষণার ঔষধ অন্য কাউকে দেয়া যাবে না এবং অন্যকে দেয়া ঔষধও কেউ খেতে পারবেন না। গবেষণার ঔষধ নেয়ার সময়, স্বাস্থ্যকর্মী বা গবেষণার কর্মীর পরামর্শ ছাড়া বাইরের কোন ঔষধ কিনে খাওয়া যাবে না। মশার কামড় থেকে বাচাঁর জন্য কীটনাশকযুক্ত মশারী এবং অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা চলমান থাকবে। এই গবেষণা সফল করার জন্য পরিবার, পাড়া বা গ্রামের সবাই অংশগ্রহণ করবেন।
গ্রুপ- ২: “সবার জন্য টিকা” প্রয়োগ ও চলমান সেবা (২৫টি গ্রাম): এই গ্রাম গুলো ম্যালেরিয়ার টিকার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। এই গ্রামের সবাই এক মাস পর পর মোট ৩ বার টিকা পাবেন এবং এক বছর পর টিকার বুস্টার ডোজ পাবেন। নিয়ম মেনে টিকার সব ডোজ নিতে হবে। ম্যালেরিয়া নির্ণয়ের জন্য ৬ মাস পর পর মোট পাঁচবার, প্রতিবারে তিন ফোঁটা করে রক্ত নেয়া হবে। গবেষণার ঔষধ নেয়ার সময়, স্বাস্থ্যকর্মী বা গবেষণা কর্মীর পরামর্শ ছাড়া বাইরের কোন ঔষধ কিনে খাওয়া যাবে না। মশার কামড় থেকে বাচাঁর জন্য কীটনাশকযুক্ত মশারী এবং অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা চলমান থাকবে। এই গবেষণা সফল করার জন্য পরিবার, পাড়া বা গ্রামের সবাই অংশগ্রহণ করবেন।
গ্রুপ- ৩: “সবার জন্য ঔষধ” প্রয়োগ ও চলমান সেবা (২৫টি গ্রাম): এই গ্রাম গুলো ম্যালেরিয়ার ঔষধের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। এই গ্রামের সবাই এক মাস পর পর মোট ৩ বার ঔষধ খাবেন, নিয়ম মেনে সব ঔষধ খেতে হবে। ম্যালেরিয়া নির্ণয়ের জন্য ৬ মাস পর পর মোট পাঁচবার, প্রতিবারে তিন ফোঁটা করে রক্ত নেয়া হবে। প্রতিজনের জন্য দেয়া গবেষণার ঔষধ অন্য কাউকে দেয়া যাবে না এবং অন্যকে দেয়া ঔষধও কেউ খেতে পারবেন না। গবেষণার ঔষধ নেয়ার সময়, স্বাস্থ্যকর্মী বা গবেষণার কর্মীর পরামর্শ ছাড়া বাইরের কোন ঔষধ কিনে খাওয়া যাবে না। মশার কামড় থেকে বাচাঁর জন্য কীটনাশকযুক্ত মশারী এবং অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা চলমান থাকবে। এই গবেষণা সফল করার জন্য পরিবার, পাড়া বা গ্রামের সবাই অংশগ্রহণ করবেন।
গ্রুপ-৪: চলমান সেবা (২৫টি গ্রাম): এই গ্রাম গুলো ম্যালেরিয়ার চলমান সেবার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। এই গ্রামের সবাই মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য কীটনাশকযুক্ত মশারী এবং অন্যান্য চলমান প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার ব্যবহার অব্যাহত রাখবেন বাড়ির কাছের স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে দ্রুত ম্যালেরিয়া রোগ নির্ণয় করা এবং দ্রুত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করবেন। কেউ যদি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়, স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ অনুযায়ী নিয়ম মেনে ম্যালেরিয়ার জন্য দেয়া সব ঔষধ খাবেন। ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীকে স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা করাবেন। ম্যালেরিয়া নির্ণয়ের জন্য ৬ মাস পর পর মোট পাঁচবার, প্রতিবারে তিন ফোঁটা করে রক্ত নেয়া হবে। এই গবেষণা সফল করার জন্য পরিবার, পাড়া বা গ্রামের সবাই অংশগ্রহণ করবেন। ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। এই টিকা এবং ঔষধ নিরাপদ বলে প্রমানিত। তবে, টিকা দেয়ার স্থানে অন্যান্য টিকার মত লালচে ফোলা ভাব ও ব্যথা হতে পারে। সঙ্গে হালকা জ্বর, ঝিমুনি ভাব ও কদাচিৎ খিঁচুনি হতে পারে, যা সাধারণভাবে যে কোন টিকা গ্রহণেই হতে পারে। ঔষধ গ্রহণের পর বমি ভাব, পেটে সমস্যা, ঝিমুনি বা দূর্বলতা দেখা দিতে পারে। অধিক পরিমাণে পানি পান করলে কিছুদিন পর এসব সমস্যা কেটে যাবে। জেনে রাখুন: ম্যালেরিয়ার সকল টিকা ও ঔষধ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাওয়া যাবে। প্রতিবার টিকা ও ঔষধ নেয়ার সময় এবং নিয়মিত ফলোআপে আসলে যথাযথ সম্মানী দেয়া হবে। সব সময় যে কোন স্বাস্থ্য সমস্যায় স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ ও সহায়তা পাওয়া যাবে।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী কারা?
গ্রামের সকল জনসংখ্যাকে নিয়ে এই গবেষণাটি পরিচালনা করা হবে। যাঁদেরকে এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে: উক্ত গ্রামে যাঁরা বর্তমানে বসবাস করছেন, যাঁদের বয়স ৬ মাসের উপরে, যারা অবহিতকরণ সম্মতি দিবেন। যাদেরকে এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না: গর্ভবতী মহিলা, পরবর্তী বছর গর্ভধারণের জন্য পরিকল্পনা আছে এবং যিনি বাচ্চাকে দুধ খাওয়ান: তীব্র অসুস্থতা, যাদের চিকিৎসার প্রয়োজন।
গবেষণার ঔষধ/টিকা পূর্ববর্তী পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার ইতিহাস আছে।
পূর্ববর্তী অন্য ম্যালেরিয়া টিকা গ্রহণ করেছেন বা বর্তমানে অন্য কোন গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত যেখানে টিকা বা ঔষধ পাচ্ছেন। আসুন আমরা সবাই ম্যালেরিয়া টিকার গবেষণায় অংশগ্রহণ করি, সবাই মিলে আমরা চিরদিনের জন্য ম্যালেরিয়াকে রুখে দিতে চেষ্টা করি। তখন ম্যালেরিয়া আর কারও মৃত্যুর কারণ হবে না।
গবেষণার সাথে জড়িত সংস্থা গুলি:
জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচী, সিডিসি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম, ডেভ কেয়ার ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ, ব্র্যাক, সিআইপিআরবি, ঢাকা, বাংলাদেশ, মাহিদল-অক্সফোর্ড গবেষণা ইউনিট, ব্যাংকক, থাইল্যান্ড জেনার ইনস্টিটিউট অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য।
ডেভ কেয়ার ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ:
বাংলাদেশের একটি অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এই সংস্থা চিকিৎসা এবং জনস্বাস্থ্য গবেষণা পরিচালনা করে। স্বাস্থ্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা, স্বাস্থ্য শিক্ষামূলক প্রচার এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ বিষয়ে কাজ করে। প্রত্যন্ত গ্রামে বিভিন্ন সময়ে স্বাস্থ্য সেবা ক্যাম্প পরিচালনা করে।
সংস্থাটি লামা উপজেলা পরিষদ কনফারেন্স কক্ষে প্রেস ব্রিফিং করে। তারা এ সময় জানায়, ম্যালেরিয়া নির্মূলে গবেষণা (এমভিডিএ): “সবার জন্য টিকা এবং সবার জন্য ঔষধ” বাংলাদেশ। ম্যালেরিয়া নির্মূলে গবেষণা (এমভিডিএ): “সবার জন্য টিকা এবং সবার জন্য ঔষধ” বাংলাদেশ এর গবেষণা দলের উদ্যোগে আয়োজিত আজকের অবহিতকরণ সভায় উপস্থিত সকলকে স্বাগতম। প্রকৃতি ও জীবন একসাথে মিশে আছে লামা উপজেলায়। এখানকার এই সহ-অবস্থানে বড় বাঁধা ম্যালেরিয়া। যা জীবন-জীবিকা থামিয়ে দেয়। আপনারা সবাই অবগত আছেন যে, সারাদেশের মধ্যে পার্বত্য তিন জেলায় (বিশেষ করে বান্দরবান জেলায়) ম্যালেরিয়া সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি। সরকার পর্যায়ক্রমে ২০৩০ সাল নাগাদ ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
ম্যালেরিয়াবাহী মশার কামড় ও ম্যালেরিয়া থেকে বাঁচার জন্য বর্তমানে কীটনাশকযুক্ত মশারী ব্যবহার, দ্রুত ম্যালেরিয়া রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা নেয়া এবং স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শে প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা প্রদানের মতো কার্যক্রম চলছে। এই চলমান সেবা দিয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
বিজ্ঞানিদের মতে, ম্যালেরিয়া নির্মূলে চলমান সেবার পাশাপাশি সবার জন্য ম্যালেরিয়ার টিকা এবং ঔষধ প্রয়োগ হতে পারে যুগোপযোগী পদক্ষেপ। সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ম্যালেরিয়া মুক্ত করতে, ম্যালেরিয়া নির্মূলের জন্য নতুন টিকার কার্যকারিতা নিয়ে “সবার জন্য টিকা এবং সবার জন্য ঔষধ” প্রয়োগে ম্যালেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধের কার্যকারিতা যাচাই করা” নিয়ে একটি গবেষণা কার্যক্রমের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এই গবেষণায়, ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ থেকে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষকে বাঁচাতে যুক্তরাজ্যের বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবিত দ্যা আর টুয়েন্টি ওয়ান ম্যাট্রিক্স-এম ম্যালেরিয়া ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করা হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত এই টিকার ইতোমধ্যেই ৭৭% উচ্চ কার্যক্ষমতা বলে প্রমাণিত হয়েছে। এটি ম্যালেরিয়ার জন্য উদ্ভাবিত ২য় টিকা এবং এটি উৎপাদন করছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট।
পার্বত্য অঞ্চলসহ, সমগ্র দেশ থেকে ম্যালেরিয়াকে বিদায় করতে টিকার কার্যকারিতা যাচাই করা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এ গবেষণায় কমিউনিটি সম্পৃক্ততার জন্য ব্যাপক কার্যক্রম রয়েছে। গবেষণাটি বাস্তবায়নের জন্য বান্দরবান জেলার লামা এবং আলীকদম উপজেলার ১০০টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষকে নির্বাচিত করা হবে এবং এই ১০০টি গ্রামের ১০ হাজার মানুষকে দৈবচয়নের মাধ্যমে সমানভাবে মোট চারটি ক্লাস্টার বা গ্রুপে ভাগ করা হবে। ১ম গ্রুপের ২৫টি গ্রামের সকলকে ম্যালেরিয়ার টিকা এবং ঔষধ উভয়ই প্রদান করা হবে। ২য় গ্রুপের ২৫টি গ্রামের সকলকে শুধুমাত্র ম্যালেরিয়ার টিকা প্রদান করা হবে। ৩য় গ্রুপের ২৫টি গ্রামের সকলকে ম্যালেরিয়ার ঔষধ প্রদান করা হবে। ৪র্থ গ্রুপের ২৫টি গ্রামে ম্যালেরিয়ার চলমান সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এই চারটি গ্রুপেই চলমান সেবা অব্যাহত থাকবে।
ম্যালেরিয়া নির্মূলে গবেষণা (এমভিডিএ): “সবার জন্য টিকা এবং সবার জন্য ঔষধ” বাংলাদেশ। নির্বাচিত এসব গ্রামে বসবাসরত ৬ মাসের কম বয়সী শিশু, গর্ভবর্তী মহিলা কিংবা এক বছরের মধ্যে গর্ভধারণের পরিকল্পনা করছেন এমন কেউ, বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মা, ম্যালেরিয়ার অন্য টিকা গ্রহণ করেছেন কিংবা ম্যালেরিয়ার অন্য কোন গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত হিসেবে টিকা পাচ্ছেন এমন কেউ, চিকিৎসা প্রয়োজন এমন মারাত্মক অসুস্থ কেউ, গবেষণার ঔষধ/টিকার পূর্ববর্তী পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার ইতিহাস আছে এরকম কেউ ব্যতীত বাকী সকলেই সম্মতি প্রদান সাপেক্ষে এই গবেষণায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
বাংলাদেশ সরকারের ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে পরিচালিত বিশ্বমানের (এঈচ অনুসরণে) এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য সরবরাহকৃত ম্যালেরিয়ার টিকা, ঔষধ ও চলমান সেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদান করা হবে এবং একই সাথে অংশগ্রহণকারীদের যথাযথ সম্মানী দেয়া হবে। অংশ নেয়া সকলেই গবেষণা চলাকালীন যে কোন স্বাস্থ্য সমস্যায় স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ ও সহায়তা পাবেন। জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচী (কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল- সিডিসি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়) এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই গবেষণায় ডেভ কেয়ার ফাউন্ডেশন, মাহিদল অক্সফোর্ড রিসার্চ ইউনিট, ব্যাংকক, থাইল্যান্ড ও জেনার ইনস্টিটিউট, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য ও সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ সিআইপিআরবি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, বিআইটিআইডি ও ব্র্যাক সম্পৃক্ত রয়েছে।