২৩ নাবিক নিয়ে অজানা গন্তব্যে জলদস্যূদের কাছে জিম্মি এমভি আবদুল্লাহ

23

॥ ডেস্ক রিপোর্ট ॥
চারদিন পেরিয়ে গেলেও ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক ও ক্রু সমেত জলদস্যূ কবলিত বানিজ্যিক জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’র কোন কূলকিনারা হয়নি। মঙ্গলবার ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজটিকে সোমালিয়ার গারকাদ বন্দর থেকে ২০ নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করার পর গতকাল শুক্রবার সোমালিয়ান দস্যূরা সেটিকে নিয়ে অজানা গন্তব্যের দিকে রওনা হয় ।
ইতিমধ্যে ২৩ নাবিকসহ জাহাজটিকে দ্বিতীয় পক্ষের হাতে হস্তান্তর করে জলদস্যুদের প্রথম গ্রুপটি জাহাজ থেকে নেমে গেছে। গতকাল পর্যন্ত তাদের সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি জাহাজটির মালিক পক্ষের। তারা কোন মুক্তিপন দাবিও এখন পর্যন্ত করেনি। এসব তথ্য জানিয়েছে জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম গ্রুপ। কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘দস্যুরা এখনো যোগাযোগ করেনি। তবে আমরা বসে নেই। আলোচনার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারী সংগঠনগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ হচ্ছে।
জাহাজটির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিডেটের প্রধান নির্বাহী মেহেরুল করিম জানিয়েছেন, সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ’র চিফ অফিসার ক্যাপ্টেন মো. আতিক উল্লাহ খান গতকাল শুক্রবার সাড়ে ৩টার দিকে ই-মেইলে সর্বশেষ অবস্থান জানিয়েছেন। ক্যাপ্টেন মো. আতিক উল্লাহ খান মেইলে জানান, বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) জাহাজটি সোমালিয়ার উপকূল গারকাদের কাছে নোঙর করা হয়েছিল। একদিন বিরতির পর আবার চলতে শুরু করেছে । শুক্রবার সকালে জলদস্যুদের নির্দেশে নোঙর তুলে ফেলা হয়েছে। এরপর জলদস্যুরা জাহাজটি চালাতে নির্দেশ দেয়। বর্তমানে জাহাজটি গারাকাদ উপকূল থেকে উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এস আর শিপিং লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুেল করিম জানান, ক্যাপ্টেনের ইমেইল অনুযায়ী জাহাজের সব নাবিক ও ক্রু সুস্থ আছেন। দস্যুরা তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছে না এবং এখনো পর্যন্ত কোনো ধরনের আর্থিক দাবি-দাওয়া নিয়েও কথা বলেনি। জাহাজ নিয়ে তাদের পছন্দ মত কোনো নিরাপদ অবস্থানে পৌঁছানোর পরই হয়তো দস্যুরা মুক্তিপণ দাবি করতে পারে। এদিকে, জলদস্যুদের হাতে জিম্মি এমভি ‘এমভি আবদুল্লাহকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্স (ইইউএনএভিএফওআর) পর্যবেক্ষণে রেখেছে বলে জানা গেছে। এই কার্যক্রমের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন আটলান্টা’। ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের উত্পাত এড়াতে এবং প্রতিহত করতে কাজ করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অপারেশন আটলান্টা। এর অন্তর্ভুক্ত একটি জাহাজই ‘এমভি আবদুল্লাহকে’ ছায়ার মতো অনুসরণ করছে।
ইইউএনএভিএফওআর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আটলান্টার সংগ্রহ করা তথ্যমতে জাহাজে অন্তত ১২ জন জলদস্যুকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যদিও ছিনতাইয়ের সময় ২০ জন সশস্ত্র ব্যক্তির কথা বলা হয়েছিল। যুক্তরাস্ট্রের সংবাদ মাধ্যম এবিসি নিউজের প্রতিবেদনে জানা গেছে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) মেরিটাইম সিকিউরিটি ফোর্সের একটি যুদ্ধজাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’র পিছু নিয়েছে। এদিকে ভারতীয় নৌবাহিনী গতকাল জানিয়েছে, জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে সহায়তা করতে কাছাকাছি এলাকায় একটি ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ ও একটি দূরপাল্লার সামুদ্রিক টহল উড়োজাহাজ অবস্থান করছে। গতকাল শুক্রবার ভারতীয় নৌবাহিনীর এক বিবৃতির বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানিয়েছে, সোমালিয়ান দস্যূরা জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগে সাহায্য চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন এমভি আবদুল্লাহর ক্যাপ্টেন। সাহায্যের আবেদন পেয়ে জাহাজটির কাছে প্রথমে তাদের একটি নজরদারি বিমান গিয়েছিল। কিন্তু ওইদিন (১২ মার্চ) বিমানটি নাবিকদের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেনি। মূলত এমভি আবদুল্লাহর দিক থেকে কোনো উত্তর আসেনি। এরপর ছিনতাই হওয়া জাহাজটিকে ১৪ মার্চ অবরুদ্ধ করে তাদের যুদ্ধজাহাজ। তখন নাবিকদের অবস্থান ও পরিস্থিতি নিরূপণ করে যুদ্ধজাহাজটি। কিন্তু দস্যুদের কিছু করতে পারেনি ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ। ফলে ছিনতাই হওয়া জাহাজটির পিছু নেয় ভারতীয় নৌ সেনারা। সোমালিয়ার জলসীমায় পৌঁছানো পর্যন্ত বাংলাদেশি জাহাজটির কাছাকাছি অবস্থান করে ভারতের যুদ্ধজাহাজ।
ছিনতাই করা জাহাজ দিয়ে ছিনতাই!:ভারত মহাসাগর থেকে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে কিভাবে হামলা নিয়ন্ত্রন নিয়েছে দস্যূরা সে বিষয়ে তথ্য দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী। গতকাল শুক্রবার এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী জানিয়েছে, সোমালি জলদস্যুরা গত বছরের ডিসেম্বরে মাল্টিজ-পতাকাবাহী কার্গো জাহাজ ছিনতাই করেছিল। আর সেই জাহাজটিই তারা দুই দিন আগে ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশের পতাকাবাহী একটি কার্গো জাহাজ দখলে নিতে ব্যবহার করতে পারে। এখন পর্যন্ত জলদস্যুরা নাবিকদের ওপর কোনো ধরনের শারীরিক নির্যাতন করেনি। তবে অস্ত্রের মুখে তাদের কথা মেনে চলতে বাধ্য করছে। নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ:গত ৪ মার্চ এমভি আবদুল্লাহ মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে হামরিয়াহ বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়। পথে ১২ মার্চ মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরে ছিনতাই হয়। কয়লা বহনকারী জাহাজটির নাবিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনাম চৌধুরী জানিয়েছেন, কয়লা একটি বিপজ্জনক কার্গোপণ্য। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় কয়লা নিজ থেকেই বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। তাই কয়লাবাহী কার্গো জাহাজের তাপমাত্রা ২৪ ঘণ্টা মনিটর করতে হয়। জিম্মি হওয়া জাহাজটির তাপমাত্রা মনিটর করে যদি নিয়ন্ত্রণে রাখা না হয়, তাহলে বিস্ফোরণের আশঙ্কা রয়েছে। অর্থাত্ নাবিকরা প্রকৃতপক্ষেই বিপদজ্জনক অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে, কেএসআরএমের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, জাহাজটির কেঅ্যান্ডআর ইন্স্যুরেন্স করা আছে। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিও জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে কাজ করছে।