মিয়ানমারে থেমে থেমে গুলির শব্দঃ সীমান্ত দিয়ে যেকোনো সময় ঢুকতে পারে ২৩ জান্তা সেনা

22

॥ ডেস্ক রিপোর্ট ॥
মিয়ানমারের রাখাইনের মন্ডু জেলা শহর থেকে টহলে বের হওয়া ২ শতাধিক জান্তা বাহিনীর সদস্যের ওপর আরাকান আর্মির কমান্ডো হামলা হয়েছে। এরপর পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া ১৭৭ জান্তা সদস্যকে নাইক্ষ্যংছড়ি সদরস্থ ১১-বিজিবির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। গত সোমবার থেকে তাদের মানবিক কারণে সবরকম সেবা দেওয়া হচ্ছে। জান্তা সদস্যদের অবস্থানের কারণে মঙ্গলবার থেকে ওই স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম রয়েছে বন্ধ।
এদিকে, গত সোমবার বিকেলে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে আহত নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের মেম্বার সাবের আহমদের কোমরের পেছনের অংশ থেকে একটি বুলেট বের করা হয়েছে। বুধবার (১৩ মার্চ) বিষয়টি নিশ্চিত করেন ভুক্তভোগী নিজেই। তিনি জানান, বুলেটটি বের করার পর তার প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব হচ্ছে। অপারেশন পেছনে হওয়ায় অনেক কষ্ট হয়েছে। এছাড়া অর্থ সঙ্কটে ওষুধ কিনতেও পারছেন না বলে জানান তিনি।
আজ বুধবার বিকেলে জামছড়ি সীমান্তের বাসিন্দা আবদুর রহিম, নুরুল আমিন, জহির আলম ও কালাম বকসু বলেন, সকালেও ওপারে গোলাগুলির ব্যাপক শব্দ জামছড়ি ও আশারতলী গ্রামের মানুষ শুনতে পেয়েছে। তারা কাঠ কাটতে যাওয়ার পথে সকাল ৭টার দিকে এ শব্দ শোনেন। পরে তারা ভয়ে বাড়ি ফিরে যান।
এদিকে পালিয়ে আসা জান্তার সদস্যদের একজনের টুয়ো মং (৪২) জানান, ১০ মার্চ বিকেলে তাদের ২ শতাধিক সদস্য বিদ্রোহী দমনে টহলে বের হন। পথিমধ্যে বিদ্রোহী সশস্ত্র আরকান আর্মির কমান্ডোরা অতর্কিত তাদের টহলদলের ওপর হামলা শুরু করলে তারা পাল্টা হামলা করে। রানী ও অংচাপ্রে নামক স্থানের দক্ষিণ-পশ্চিমে ২০ কিলোমিটার গহীন বনে এ ঘটনা ঘটায় তারা কঠিন সমস্যায় পড়েন। পরে কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করলে উপরের নির্দেশে তারা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।
২০০ সদস্যের মধ্যে ১৭৭ জন বাংলাদেশ সীমানা পার হলেও ২৩ সদস্য এখনও বাংলাদেশ সীমানা ঘেঁষে লুকিয়ে আছে বলে জানান টুয়ো মং। তারা যেকোন সময় বাংলাদেশে পালিয়ে আসবে বলে তিনি মনে করেন।

সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জান্তা সরকারের মোট ১৭৭ জন সদস্য নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের আশারতলী গ্রামের জারুলিয়াছড়ির আগা ও জামছড়ি সীমান্তের মাঝখান দিয়ে ৩ দফায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে। পরে নিরস্ত্রীকরণের মাধ্যমে দুপুরের পর ২৯ জনকে এবং রাতে ১৪৮ জনকে নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন বিজিবি স্কুলে নেওয়া হয়। যাদের মধ্যে আহত ৪ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্যদেরও খাদ্যসহ অন্যান্য মানবিক সহায়তা দিচ্ছে প্রশাসন ও বিজিবি।
সার্বিক বিষয়ে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মুজাহিদ উদ্দিন জানান, মিয়ানমার বাহিনীর ১৭৭ সদস্যকে নাইক্ষ্যংছড়িস্থ বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। তাদের বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কার্যক্রম জানানো হবে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ত্রিরতণ চাকমা জানান, বিজিবির প্রস্তাবেই জান্তা সেনাদের বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। সে কারণে স্কুলের শিক্ষা কাযর্ক্রম বন্ধ রয়েছে। আগামী ১০ রমজানের পর স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর-বিজিপি ৩৩০ সদস্য। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার উখিয়ার ইনানী নৌ-বাহিনীর জেটিঘাট দিয়ে তাদের মিয়ানমারে পাঠানো হয়েছিলো। এরপর ১১ মার্চ বাংলাদেশে পালিয়ে আসলো আরও ১৭৭ জন।