॥ বিশেষ সংবাদদাতা ॥
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলিতে নব্যমুখোশ বাহিনীর কর্তৃক ইউপিডিএফ সদস্য নিপন চাকমাকে হত্যার প্রতিবাদে গণবিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারী) ইউপিডিএফের প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের নিরণ চাকমার স্বাক্ষরিত সংবাদ মাধ্যমে দেয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সুত্রে এই তথ্য জানা যায়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ইউপিডিএফের বাঘাইছড়ি ইউনিটের উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এর আগে শনিবার রাত সাড়ে ৯টার সময় নব্যমুখোশ বাহিনীর সন্ত্রাসীরা বঙ্গলতলী এলাকায় ইউপিডিএফ সদস্য নিপন চাকমাকে (৩৫) গুলি করে হত্যা করে।
রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারী) সকাল ১০টার সময়ে ইউপিডিএফের দলীয় পতাকায় আবৃত শহীদ নিপন চাকমার মরদেহ ভর্তি কফিন নিয়ে বঙ্গলতলি নুয়ো দোকান থেকে গণবিক্ষোভ মিছিল শুরু করা হয়। মিছিলটি এলাকার রাস্তা প্রদক্ষিণ করে বটতলা নামক স্থানে গিয়ে শেষ হয় এবং সেখানে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না, নিপন চাকমা মরলো কেন-প্রশাসনের জবাব চাই, গুলি করে আন্দোলন-বন্ধ করা যাবে না, আমাদের সংগ্রাম চলছে-চলবে’ ইত্যাদি শ্লোগান দেন।
সমাবেশে সোহেল চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফের বাঘাইছড়ি ইউনিটের সংগঠক আর্জেন্ট চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি বিরো চাকমা।
ইউপিডিএফ সংগঠক আর্জেন্ট চাকমা বলেন, শনিবার বঙ্গলতলীতে নব্যমুখোশ রাজাকাররা নিপন চাকমাকে গুলি করে হত্যা করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে এই যে একের পর এক হত্যাকাণ্ড চলছে এসব ঘটনা নব্যমুখোশ বাহিনীর সংঘটিত করছে।
আর্জেন্ট চাকমা বলেন, নিপন চাকমা জনগণের স্বার্থে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাই জনগণকেই তার হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
তিনি নব্যমুখোশ বাহিনীর প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যে হত্যাকাণ্ড চালানো হচ্ছে তার জন্য একদিন জনগণের কাছে কড়ায় গন্ডায় হিসাব দিতে হবে। তিনি অবিলম্বে নিপন চাকমার খুনিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
যুব নেতা বিরো চাকমা বলেন, পাহাড়িরা আজ শাসকগোষ্ঠির ষড়যন্ত্রের শিকার। শনিবার বঙ্গলতলীতে সহযোদ্ধা নিপন চাকমাকে হত্যা সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
তিন মাসের মাধ্যে অনেক সহযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, শনিবার রাত সাড়ে ৯টার সময় রাতের আঁধারে নব্যমুখোশ-রাজাকার সন্ত্রাসীরা সহযোদ্ধা নিপন চাকমাকে কাপুরুষের মতো গুলি করে হত্যা করেছে।
তিনি আরো বলেন, নিপন চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের অধিকার আদায়, অস্তিত্ব রক্ষা, ভূমি ও মা-বোনের ইজ্জত রক্ষার্থে লড়াই-সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি একজন বীর শহীদ। নিজেকে আত্মবলিদান দেয়ার মাধ্যমে তিনি অমর হয়ে থাকবেন। তিনি নব্যমুখোশ-রাজাকারদের জাতির কুলাঙ্গার উল্লেখ করে তাদের প্রতিহত করতে শপথ নেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
এ সময় বাঘাইছড়ি থানার ওসি (তদন্ত) ইন্সপেক্টর দোস্ত মোহাম্মদ এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ সমাবেশ স্থলে উপস্থিত হয়। পুলিশ কর্মকর্তা দোস্ত মোহাম্মদ উপস্থিত লোকজনের সাথে লাশের ময়নাতদন্ত বিষয়ে সংক্ষিপ্ত কথা বলেন। তিনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন। পরে ময়নাতদন্তের জন্য নিপন চাকমার মরদেহ পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
অপরদিকে, উক্ত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ইউপিডিএফ রবিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বাঘাইছড়ি উপজেলায় আধাবেলা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়।
উপজেলার বঙ্গলতলী, সাজেকসহ বিভিন্ন এলাকায় ইউপিডিএফের বিক্ষুব্ধ নেতা কর্মীরা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে ও গাছে গুলি ফেলে সড়ক অবরোধ করে রাখে। ফলে সড়কে যার চলাচল বন্ধ ছিল।
গণবিক্ষোভ ও আধাবেলা সড়ক অবরোধ সফল করায় ইউপিডিএফের বাঘাইছড়ি ইউনিটের সংগঠক অক্ষয় চাকমা এলাকার জনসাধারণসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি অবিলম্বে নিপন চাকমার খুনিদের গ্রেফতারপূর্বক বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।