রাঙ্গামাটিতে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনী প্রচার শেষ, প্রচারণায় এগিয়ে নৌকা

121

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
সারা দেশের ন্যায় রাঙ্গামাটিতেও উৎসাহ উদ্দিপনা ও উৎসব মুখর পরিবেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা শেষ হয়েছে। জেলার একমাত্র (২৯৯নং) আসনে এবার তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন-আওয়ামী লীগের প্রার্থী দীপংকর তালুকদার, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মিজানুর রহমান এবং সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রার্থী অমর কুমার দে। অনিবন্ধিত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি থেকে হেভীওয়েট প্রার্থী দিলেও পরবর্তীতে অজানা কারণে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়। আর শেষ মুর্হুতে প্রত্যাহার করে নেয় জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থীও। এতে নির্বাচনের হাওয়া কিছুটা ভাটা পড়ে।
অন্যদিকে, দেশের বৃহত্তর এবং প্রাচীন দল আওয়ামী লীগ। গত ৫ বছরে দেশের উন্নয়নে দলটির বেশ জনপ্রিয়তা বেড়েছে। তাছাড়া রাঙ্গামাটি আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে লড়াই করছেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, চারবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং পাহাড়ের জনপ্রিয় ব্যক্তি সবার দাদা দীপংকর তালুকদার। আর তার সাথে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক ডাকসাইটের নেতা বর্তমানে সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রার্থী অমর কুমার দে এবং সদ্য গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল তৃণমূল বিএনপির মিজানুর রহমান।
স্থানীয় এলাকাবাসীদের মতে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী লড়াইয়ে এই তিনজনের মধ্যে দীপংকর তালুকদারের নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় এগিয়ে। তিনি সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাঙ্গামাটি জেলাসহ ১০ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মানুষের ভালোবাসা পেতে, আস্থা ও বিশ^াস বাড়াতে পথসভা, জনসংযোগ ও প্রচারপত্র বিলি করেছেন দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে। আর এরই ধারাবাহিকতায় নৌকার প্রার্থী হিসেবে তিনিই বিজয়ী হবেন।
তবে পার্বত্য এলাকার আঞ্চলিক সংগঠনের কারণে পরিস্থিতি বলছে ভিন্ন কথা। এখানে যেমন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির একটা বিশাল সমর্থক গোষ্ঠি রয়েছে, অন্যদিকে রয়েছে ইউপিডিএফ (প্রসিত) গ্রুপ। তেমনি দেশের আরেক বিশাল রাজনৈতিক দল বিএনপিরও সমর্থক গোষ্ঠি রয়েছে। আর বিএনপি ভোট বর্জন করতে মাঠে লিফলেট বিতরণসহ ডাক দিয়েছে হরতালের। আর ভোট বর্জনকে সমর্থন জানিয়ে ইউপিডিএফ (প্রসিত) গ্রুপ নির্বাচন বর্জন করতে বলা হচ্ছে। এই তিনটি গোষ্ঠি নির্বাচনে অংশ না নিলেও তাদের ভোট ব্যাংক যেদিকে পড়বে সেই প্রার্থী বিজয়ী হবে। যে কারণে আওয়ামী লীগ এই লড়াইটাকে হালকাভাবে নিচ্ছে না।
অপরদিকে সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রার্থী অমর কুমার দে কিছুটা নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা ও মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ভোট ভিক্ষা চাইলেও তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মিজানুর রহমান কচ্ছপ গতিতে এগিয়েছেন। তার প্রচার প্রচারণা তেমন নেই বললেই চলে। জেলার বিভিন্ন স্থানে অমর কুমার দে নিজেই প্রচার প্রচারণা চালিয়েছেন। মানুষের কাছে ভোট ভিক্ষা চেয়েছেন। বিভিন্ন স্থানে তার প্রচারণামূলক ব্যানার, পোস্টার শোভা পাচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে মিজানুর রহমান নীরব। তার নির্বাচনী প্রচারণা তেমন চোখে পড়েনি।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী দীপংকর তালুকদার বলেন, যারা প্রতিদ্বদ্বিতা করছেন তারা সকলেই যোগ্য। যোগ্য না হলে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হতেন না। তাই কোনো প্রার্থীকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, আমরা চাই না এখানে ভিন্ন কিছু হোক। সকলে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় জিততে। আমার ক্ষেত্রেও তাই। এর আগে দু’বার আমি জনসংহতি সমিতির প্রার্থী এবং বিএনপির প্রার্থীর কাছে হেরেছি। তাই এই নির্বাচন হালকাভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রার্থী অমর কুমার দে বলেন, আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছি। আওয়ামী লীগ দলীয় নমিনেশন না দেওয়ায় আমি সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের হয়ে নির্বাচনী যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছি। তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষ আমার সাথে আছে। আমি জনগণের কাছে গিয়ে পৌঁছেছি। মানুষ পরিবর্তন চায়। তাই আমি বিজয়ী হবো এ আসনে। মানুষ আমাকে অবশ্যই ভোট দেবেন।
তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী হাফেজ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, রাঙ্গামাটি জেলায় পুরো দেশের তুলনায় উন্নয়ন হয়নি। স্বাধীনতার পর থেকেই প্রতিটি সরকারের সময় অবহেলায় ছিল এই জেলা। যোগাযোগ ব্যবস্থার দুরাবস্থার কারণে বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে এই জনপদ। একই সঙ্গে অনিয়ন্ত্রিত সন্ত্রাসীগোষ্ঠী এই জনপদকে হুমকির মুখে রেখেছে। আমাদের এই জেলা দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে সহায়তা করে যাচ্ছে। অথচ, এই জনপদের জীবনমান উন্নয়নে আজও কোনো মাস্টারপ্লান হয়নি। তাই আমি নির্বাচিত হলে মানুষ যদি আমাকে ভোট দেয়া তা হলে পাহাড়ী এই জনপদে মাষ্টার প্লান করে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। মানুষ পরিবর্তন চায়, দীপংকর এবং আঞ্চলিক পরিষদের বাইরে নতুন নেতৃত্ব চায়। সেই জায়গায় তৃণমূল বিএনপি নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। কিংবদন্তি নেতা নাজমুল হুদার দলে যোগ দিয়ে আমি গণমুখী এই দলের অগ্রযাত্রার সঙ্গী হতে চাই।