॥ রুমা প্রতিনিধি ॥
বিয়ের দাওয়াতে যাওয়া এবং ফেরার পথে চাঁদের গাড়ি ও মোটর মাইকেল আটকিয়ে জোর পূর্বক চাঁদা আদায় করেছে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সশস্ত্র সদস্যরা।
শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বান্দরবানের রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের অবিচলিত পাড়া থেকে দুর্নিবার পাড়া মাঝে খানের জায়গায় এই চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনার শিকার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, একটি বিয়ের সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে প্রায় ৩০টি মোটর সাইকেল করে রুমা থেকে রোয়াংছড়িতে আসছিলো। রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের দূর্নিবার বম পাড়া থেকে আধা কিলোমিটার দুরে যেতে ওৎ পেতে থাকা জঙ্গল থেকে তিনজন হঠাৎ বের হয়ে মোটর মাইকেলগুলোকে রাস্তায় থামিয়ে আটকানো হয়। ইউনিফর্ম পরিধানে ওই তিনজনের হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র ছিল। এই অস্ত্রধারীরা ওই সময় প্রতি মোটর সাইকেলের কাছ থেকে পাঁচশ টাকা চাঁদা আদায় করে ছেড়ে দেয়া হয়।
দাওয়াতিরা বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে রোয়াংছড়ি থেকে রুমায় ফেরার পথে একই জায়গায় কেএনএফ সশস্ত্র সদস্যরা আবারও তিনটি চাঁদের গাড়ি প্রায় পঞ্চাশটি মোটর সাইকেলগুলো আটকে দেয়। মোটর সাইকেল চালকরা সকালে চাঁদা দিয়ে যাওয়ার কথা জানাইলে তাদের ছেড়ে দেয়।
আর প্রতি চাঁদের গাড়িটি থেকে এক হাজার করে তিনটি গাড়ির মোট তিন হাজার টাকা চাঁদা আদায় করে কেএনএফ সশস্ত্র সদস্যরা। ওই সময় বিচ্ছিন্নতাবাদী কেএনএফ সশস্ত্র সদস্যরা রুমা-রোয়াংছড়ি রাস্তাটি তাদের বলে বাইকার ও সাধারণ লোকজনকে জানিয়েছে।
রোয়াংছড়ি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ পারভেজ আলী বলেন, ঘটনাটি এইমাত্র শুনলাম। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
এদিকে ১৩ ডিসেম্বর দিনে দুপুরে বিচ্ছিন্নতাবাদী দল কেএনএফের ১২ সদস্যের সশস্ত্র দল রুমার পাইন্দু ইউনিয়নের পরুয়া পাড়ায় হানা দেয়। ক্যলুংখ্যং পাড়া থেকে পরুয়া পাড়ায় এক আত্মীয়ের কাছে বেড়াতে যাওয়া এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করেছে কেএনএফ সশস্ত্র সদস্যরা।
আহত ব্যক্তি পাইন্দু ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ক্যলুংখ্যং পাড়া বাসিন্দা শৈথোয়াইখয় মারমা ছেলে ছোসিংমং মারমা (৩৪)। মারাত্মক পিটিয়ে আহত করার পর তাকে শাসিয়ে বলা হয়, ঘটনাটি সেনাবাহিনী, পুলিশ ও কোনো মিডিয়া কর্মীদের জানালে সে (ছোমংসিং) যেখানে লুকিয়ে থাকুক মেরে ফেলা হবে। আহত ছোমংসিং মারমা বর্তমানে কোথায় আছে তা জানা যায়নি।
একই সময় পরুয়া পাড়াবাসী সবাইকে ঘর থেকে নামিয়ে এক জায়গায় জড়ো করায়। তখন তথাকথিত অভিযান নাম করে প্রত্যেক বাড়িতে উঠে জিনিসপত্র তছনছ করে দেয় বম পার্টি খ্যাত কেএনএফ সশস্ত্র সদস্যরা। বুধবার ও বৃহস্পতিবার পরুয়া পাড়াবাসী সবাইকে কোথাও যেতে দেয়নি কেএনএফ’র অস্ত্রধারীরা।
অন্যদিকে ১২ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে রোয়াংছড়ি সদর থেকে রুমায় ফেরার পথে রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নে ৯নং ওয়ার্ডের অবিচলিত পাড়া ও দুর্নিবার পাড়ার মাঝ পথে এলাকায় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের গাড়ি আটকিয়ে গাড়ি চালককে জঙ্গল পথে নিয়ে যেতে বাধ্য করে কেএনএফ অস্ত্রধারী সদস্যরা। অপ্রাসঙ্গিক কথা শুনিয়ে ২৫মিনিট আটকানোর পর ছেড়ে দেয়।
সদ্য সংঘটিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বম পার্টি খ্যাত কেএনএফ’র সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের এসব ঘটনার কারণে রুমা-রোয়াংছড়ি সড়কে যাতায়াতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এক অজানা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে সাধারন যাত্রীদের কাছে।
এসব চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন সময় পেশাজীবি নানা শ্রেণি মানুষের কাছে মুঠোফোনে কল করে চাঁদা দাবির বিষয়টি গত বৃহস্পতিবার উপজেলা আইন শৃঙ্খলা সভায় আলোচনা ওঠেছিল।