পার্বত্য অঞ্চলে সেনাবাহিনীর অবদান অনস্বীকার্য

147

॥ নন্দন দেবনাথ, রাঙ্গামাটি ॥
বাংলাদেশের আয়তনের প্রায় এক দশমাংশ এলাকা (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) নিয়ে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম। দেশের ৬১টি জেলার চেয়ে ভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরা আই পার্বত্য চট্টগ্রাম। এখানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস। তাদের ভাষা ধর্মীয় ও সামাজিক রীতিনীতি, ভাষাগত বৈচিত্র, তাদের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, প্রথাগত রীতিনীতি রয়েছে ভিন্ন। এই তিন পার্বত্য জেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি খ্যাত সাজেক পর্যটন এলাকা, রাঙ্গামাটি ঝুলন্ত ব্রীজ, খাগড়াছড়ির আলুটিলা, বান্দরবান এর নীলগিরি, বগালেক ও তাজিংডং পাহাড় দেশ বিদেশের মানুষকে বিমোহিত করে। এই এলাকা গুলোকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরেূপ দিতে পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর থেকে সরকারের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর অবদান অনস্বিকার্য।
শান্তি চুক্তির পরবর্তী সময়ে সরকারের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থিতিশীলতা রক্ষার পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা এই অঞ্চলের আপামর জনসাধারণের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, খাদ্য সমস্যা, মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত স্থানীয় ব্যক্তিবর্গদের চিকিৎসা সেবা, দরিদ্র ব্যক্তিবর্গদের আর্থিক অনুদান প্রদান করে স্বাবলম্বী হতে সহযোগিতা করা, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা, দুর্গম এলাকায় পানির সমস্যায় জর্জরিত স্থানীয়দের কষ্ট লাঘবে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা এবং বেকার ব্যক্তিবর্গের কর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্র কারখানা স্থাপন করে আসছে।
পার্বত্য শান্তি চুক্তির দীর্ঘ ২৬ বছর পরও পার্বত্য অঞ্চলে রক্তের হলি খেলায় মেতে উঠছে অবৈধ অস্ত্রধারীরা। পার্বত্য চুক্তির পর থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে এবং প্রয়োজনে নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করছে। পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষায় সেনাবাহিনী তাদের নানামুখী কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। পার্বত্য অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার বন্ধ ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সেনাবাহিনীর অপারেশন উত্তোরণ জোরদার সহ পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের আত্মসামাজিক উন্নয়নে কাজ করতে সেনাবাহিনীর বিকল্প নেই বলে জানান রাঙ্গামাটির সাধারণ মানুষ।
১৯৯৭ সালে পার্বত্য তিন জেলাতে যোগাযোগের উপযোগী রাস্তা ছিল ২ হাজার ৮০৩ কিলোমিটার, বর্তমানে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের তত্ত্বাবধানে নির্মিত সড়ক যোগাযোগের পরিধি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৯৪৯ কিলোমিটার। শান্তিচুক্তির পূর্বে তিন জেলায় হাসপাতাল-ক্লিনিক ছিল মাত্র ২৪টি, এখন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও কমিউনিটি পর্যায়ে ক্লিনিক স্থাপিত হয়েছে ২৭০টির বেশি। যাত্রী ছাউনি ও ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে ২০টি। সীমান্ত সড়ক নির্মানেও ভূমিকা অপরিসীম বলে জানিয়ে সাধারণ মানুষ।
শান্তিচুক্তির পরবর্তী সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থিতিশীলতা রক্ষার পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা এই অঞ্চলের আপামর জনসাধারণের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, খাদ্য সমস্যা, মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত স্থানীয় ব্যক্তিবর্গদের চিকিৎসা সেবা, দরিদ্র ব্যক্তিবর্গদের আর্থিক অনুদান প্রদান করে স্বাবলম্বী হতে সহযোগিতা করা, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা, দুর্গম এলাকায় পানির সমস্যায় জর্জরিত স্থানীয়দের কষ্ট লাঘবে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা এবং বেকার ব্যক্তিবর্গের কর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্র কারখানা স্থাপন করে আসছে।
এছাড়া তিন পার্বত্য জেলার অরক্ষিত সীমান্ত এলাকাকে নজরদারির আওতায় আনতে বাংলাদেশ সরকারের আহবানে সাড়া দিয়ে দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল ও উপজাতি সন্ত্রাসীদের প্রতিকূল অবস্থান মোকাবেলা করে সীমান্ত সড়ক নির্মাণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিবেদিত প্রাণ হয়ে দায়িত্বপালন করছে।
পার্বত্য দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল গুলোতে জনগনের পানীয় জলে সমস্যা সমাধানে সেনাবাহিনী নিরলস ভাবে কাজ করে যচ্ছে। দুর্গম সাজেকের বিভিন্ন এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সমস্যা নিরসনে সেনাবাহিনীর অবদান অনস্বীকার্য।
পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গমতার কারণে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা সরকারের পক্ষে দুরহ হয়ে পড়েছে। উপজেলা সদর হাসপাতাল থেকে দুর্গম এলাকা যোগাযোগ ব্যবস্থা পায়ে হাটা ও পাহাড়ী অঞ্চল হওয়া অনেকেই বিনা চিকিৎসা জীবন দিতে হয়েছে। সেইখানে সেনাবাহিনীর দুর্গম এলাকার ক্যাম্প গুলোতে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা নিয়ে সাধারণ পাহাড়ীরা তাদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করেছে।
রাঙ্গামাটির দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চল সাজেকের বিভিন্ন এলাকায় শুস্ক মৌসুমে পানীয় জলের অভাবে ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের পাশে প্রথমে দাঁড়িয়েছে সেনা বাহিনী। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে দুর্গম এলাকার ডেলিভারী রোগী, আহত রোগী সহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত ও আক্রান্ত সাধারণ জনগনকে হেলিকপ্টার যোগে চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রে পৌছে দিয়েছে সেনা বাহিনী।
করোনা কালীন সময়ে পার্বত্য এলাকার সাধারণ মানুষের বাড়ী বাড়ী গিয়ে খাবার পৌছে দেয়ার কাজে নিয়জিত ছিল সেনাবাহিনী। এছাড়া ও যে কোন দূর্যোগে খাদ্য শস্য নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে ছিল পাহাড়ের সেনাবাহিনী।
পার্বত্য অঞ্চলে দুর্গম এলাকার মানুষের উন্নয়নে আগামী দিনগুলোতে সরকারের পাশাপাশি সেনাবাহিনী আরো অধিকতর ভূমিকা রাখবে এমনটাই মনে করেন সচেতন মহল।