বান্দরবান আসনে পুনরায় নৌকার প্রার্থী হলেন বীর বাহাদুর ঊ শৈ সিং

54

॥ বান্দরবান প্রতিনিধি ॥
বান্দরবান আসনে পুনরায় নৌকার প্রার্থী হলেন বীর বাহাদুর ঊ শৈ সিং। রবিবার (২৬ নভেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বীর বাহাদুর উশৈসিং ছয় বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করেছেন জাতীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত স্পিকার, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবং বিগত ৫ বছর ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি একাধারে দলীয় ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালনের সুবাদে নিজ সংসদীয় আসন বান্দরবান ছাড়াও রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়ি জেলায়ও যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, কর্মসংস্থান, অবকাঠামোসহ ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত করেছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের ভাষায়, দল মত নির্বিশেষে সকলের আস্থার ঠিকানা এবং মডেল পার্বত্য এলাকা ও উন্নয়নের কারিগর বীর বাহাদুর।
তিনি এর ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তি চুক্তির পূর্বে এ সংক্রান্ত সংলাপ কমিটির অন্যতম সদস্য এবং তৎকালীন সরকারের বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৮ সালে উপমন্ত্রীর পদমর্যাদায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, রাঙ্গামাটি-এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃতীয়বারের মত নির্বাচিত হন। তিনি ২০০২ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জাতীয় সংসদের বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সংসদীয় দলের হুইপ নির্বাচিত হন।
তিনি ২০০৮ সাালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চতুর্থবারের মত নির্বাচিত হন। এই সংসদে তিনি সংসদের সংসদ কমিটি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। এছাড়া তিনি এই সময় প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় দ্বিতীয় বারের মত পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, রাঙ্গামাটি-এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালের ২৩ জুলাই দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান।
২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পঞ্চম বারের মত জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই সময় তিনি শেখ হাসিনার গঠিত মন্ত্রিসভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৮ সালের ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ষষ্ঠ বারের মত জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই সময় তিনি শেখ হাসিনার গঠিত মন্ত্রিসভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
এর আগে ২৩ নভেম্বর থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলটির সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় আসন্ন নির্বাচনের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের অংশগ্রহণে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী বীর বাহাদুর উশৈসিং বিজয় লাভ করেন। ছাত্র জীবনে ভালো ফুটবল খেলোয়াড় এবং পরে রেফারি তারপর খেলার মাঠ থেকে জাতীয় সংসদে। সেই থেকে তাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রী সবই হয়েছেন। এখনও পার্বত্য ”চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন।
১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর বাহাদুরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন বিএনপির প্রার্থী সাচিং প্রু জেরী। এই নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীকে হারিয়ে জয় লাভ করেন তিনি। ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় উপজাতীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাম্যাচিং। সেই নির্বাচনে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে বিএনপি নেতা সাচিংপ্রু জেরীও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এই নির্বাচনে মাত্র ৮৫৩ ভোট বেশি পেয়ে আওয়ামী লীগের বীর বাহাদুর জয় লাভ করেন। পক্ষান্তরে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী সাচিং প্রু জেরী ভোট পেয়েছিলেন প্রায় ১৪ হাজার। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীকে বিপুল ভোটে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বীর বাহাদুর। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দলের বহিষ্কৃত সাবেক সভাপতি প্রসন্ন কান্তি তংচঙ্গ্যা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এই নির্বাচনে প্রসন্ন কান্তি তংচঙ্গ্যাকে হারিয়ে বীর বাহাদুর জয় লাভ করেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী বীর বাহাদুরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিএনপি প্রার্থী সাচিং প্রু জেরী। এই নির্বাচনেও বিএনপি প্রার্থীকে হারিয়ে বীর বাহাদুর ষষ্ঠ বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।