ভ্রাম্যমান লাইব্রেরী থেকে বই নিয়ে নিয়মিত পড়ছে কাপ্তাই তম্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

77

॥ কাজী মোশাররফ হোসেন, কাপ্তাই ॥
আমাদের দেশের ছাত্রছাত্রীদের ইদানিং বই পড়তে খুব বেশি আগ্রহী হতে দেখা যায়না। বিশেষ করে গ্রামগঞ্জ এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদের বই পড়ার আগ্রহ কম বলেই অনেকে মনে করেন। তারউপর টাকা দিয়ে বই কিনে পড়ার বেলায় আগ্রহতো আরো কম। কিন্তু কাপ্তাই উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়নে অবস্থিত তম্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা নিয়মিত টাকা দিয়ে বই কিনে পড়ে এবং বই পড়ার জন্য তাদের আগ্রহও অনেক বেশি।
রাঙ্গামাটিস্থ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমান লাইব্রেরী থেকে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত বই সংগ্রহ করে নিয়মিত পড়ছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি তবম্পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমান লাইব্রেরীর সামনে স্কুল ড্রেস পরা কয়েকজন ছাত্রছাত্রী অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে বই সংগ্রহ করছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী চিংউ মারমা, হ্যাপি তনচংগ্যা, উকিউচাই মারমা, নু উচাই মারমা, নেইপ্রু মারমা, উখ্যিইউ মারমা, উইএ মং মারমাসহ ছাত্রছাত্রীদের প্রত্যেকের হাতে একটা করে বই দেখা যাচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা জানায় তারা ২৫ জন ছাত্রছাত্রী প্রত্যেকে (ফেরৎযোগ্য) একশ টাকা হারে চাঁদা দিয়ে এই ভ্রাম্যমান লাইব্রেরীর সদস্য হয়েছে। এছাড়াও প্রতিমাসে বই সংগ্রহ বাবদ ১০ টাকা (অফেরৎ যোগ্য) চাঁদা দিয়ে মাসে ৪টি বই পড়ার সুযোগ পায় তারা। লাইব্রেরী থেকে পড়ার জন্য কিকি বই সংগ্রহ করে জানতে চাইলে ছাত্রছাত্রীরা জানায়, তারা মুক্তিযুদ্ধের বই, গল্পের বই, বঙ্গবন্ধুর বই, ভ্রমণ কাহিনী, মনিষীদের জীবনী ইত্যাদি নানা ধরনের বই পড়ে। বই নিয়ে প্রতি বুধবার ভ্রাম্যমান গাড়ী এই বদ্যালয়ে আসে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তারপরও তারা প্রত্যেকে একশ টাকা হারে জমা দিয়ে ভ্রাম্যমান লাইব্রেরীর সদস্য হয়েছে এবং মাসে ১০ টাকা চাঁদা দিয়ে বই সংগ্রহ করে নিয়মিত পড়ছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ঈসাইনু মারমা বলেন, বই পড়ার জন্য আমরা সব সময় ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ দিয়ে আসছি। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত স্কুলে আসে এবং স্কুলের পাঠদানও যথাসময় শেষ করে। এরই মধ্যে তারা লাইব্রেরী থেকে নেওয়া বইও পড়ে ফেলে এবং পরবর্তীতে নতুন বই সংগ্রহ করার জন্য বুধবারের অপেক্ষায় থাকে। কারণ প্রতি বুধবার ভ্রাম্যমান লাইব্রেরী নতুন বই নিয়ে স্কুলে আসে। প্রধান শিক্ষক বলেন অধিকাংশ অভিভাক দরিদ্র হওয়া সম্বেও তাঁরা ছেলে মেয়েদের বই পড়ার জন্য প্রতি মাসে ১০ টাকা করে প্রদান করেন। ছাত্রছাত্রীদের বই পড়ার আগ্রহ দেখে প্রধান শিক্ষকসহ বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক অনেক খুশি।
বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র রাঙ্গামাটির ভ্রাম্যমান লাইব্রেরীয়ান শওকত হোসেন বলেন, কাপ্তাই উপজেলার তম্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়াও দুর্গম অঞ্চলের আরো কয়েকটি বিদ্যালয়ে প্রাথমিকে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা তাদের লাইব্রেরীর সদস্য। তাদের বেশীরভাগ দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়া সত্বেও এই ছাত্রছাত্রীরা নিয়মিত লাইব্রেরী থেকে বই নিয়ে পড়ছে।
এ ব্যাপারে কাপ্তাই উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা আশিষ কুমার আচার্য্য জানান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠ্য বই পড়ার পাশাপাশি অন্যান্য বই পড়তেও আমরা উৎসাহ দিচ্ছি। এছাড়াও বিদ্যালয় আঙ্গীনা পরিস্কার রাখা এবং প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রী নিজ হাতে যাতে গাছের চারা রোপন করে এবং নিয়মিত গাছের পরিচর্যা করে সেজন্যও আমরা শিশুদের উদ্বুদ্ধ করছি।