একেএম মকছুদ আহমেদের সাংবাদিকতা জীবনের ৫৫ বছরে পর্দাপণ করবে আগামী ১৫ নভেম্বর

353

॥ কাজী মোশাররফ হোসেন, কাপ্তাই ॥
বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ১৯৭৬ সালের পূর্বে কোন পত্রিকা প্রকাশিত হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি থেকে ১৯৭৮ সালের ২৬শে মার্চ সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়েছিল সাপ্তাহিক ‘বনভূমি’ পত্রিকা। এরপর ১৯৮৩ সালের ২৬শে মার্চ প্রকাশিত হয় ‘দৈনিক গিরিদর্পণ’ পত্রিকা। বনভূমি পত্রিকার প্রকাশনা অনেক আগে বন্ধ হলেও দৈনিক গিরিদর্পণ পত্রিকা অদ্যাবধি নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে দৈনিক গিরিদর্পণ প্রকাশনার ৪১ বছর পূর্ণ করল। এই দুটি পত্রিকাই প্রকাশিত হয়েছিল রাঙ্গামাটির প্রতিথযশা সাংবাদিক একেএম মকছুদ আহমেদের হাত ধরে। একেএম মকছুদ আহমেদ ইতিমধ্যে ৭৯ বছর পার করলেন। পাশাপাশি সাংবাদিকতা জীবরে ৫৫ বছর পূর্ণ করলেন।
সাংবাদিকতার এই দীর্ঘ জীবনে একেএম মকছুদ আহমেদ অনেক সাংবাদিকও তৈরি করেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে তাঁর হাত ধরে যারা সাংবাদিকতা শুরু করেছেন তাদের অনেকে বর্তমানে সাংবাদিকতায় খ্যাতি ও সুনাম অর্জন করেছেন। ১৯৮৩ সালে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামকে তৎকালিন সরকার রাঙ্গামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি এই তিন পার্বত্য জেলায় ভাগ করে। বর্তমানে এই তিন পার্বত্য জেলায় অসংখ্য সাংবাদিক নিষ্ঠা ও সুনামের সাথে গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে দৈনিক, সাপ্তাহিক এবং মাসিক মিলিয়ে অনেক পত্রিকাও এই তিন পার্বত্য জেলা থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে।
একেএম মকছুদ আহমেদ ১৯৬৯ সালের ১৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজাদী পত্রিকায় রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন। এর পর তিনি দৈনিক জনপথ, দৈনিক পূর্বদেশ, দৈনিক নিউনেশনসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। এছাড়াও তিনি বিবিসি, রয়টার এবং সংবাদ সংস্থা এপি-তেও দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন। তিনি ভয়েজ অব আমেরিকার বাংলাদেশ প্রতিনিধি গিয়াস কামাল চৌধুরীকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংবাদ পরিবেশন করে সহযোগিতা করেছেন। একেএম মকছুদ আহমেদ দীর্ঘ ৫ দশক ধরে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় রাঙ্গামাটি জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে সাংবাদিকতায় অসামান্য অবদান রাখায় একেএম মকছুদ আহমেদকে দৈনিক আজাদী পত্রিকা ২০০৩ সালে ‘চারন’ সাংবাদিক হিসেবে সম্মাননা জানায়। বাংলাদেশে তাঁর আগে দৈনিক সংবাদ পত্রিকার সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দীনকে চারন সাংবাদিক হিসবে সম্মাননা জানানো হয়েছিল। এই দুই বিশিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া বাংলাদেশে চারণ সাংবাদিক হিসেবে আর কোন সংস্থা বা সংগঠন অন্য কাউকে চারন সাংবাদিক হিসেবে সম্মাননা জানায়নি।
সাংবাদিকতা করতে গিয়ে একেএম মকছুদ আহমেদ অনেক ঝড়ঝঞ্জা এবং প্রতিকুল পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন। সাংবাদিকতা করার এখন যে সহজ যোগাযোগ ও মাধ্যম রয়েছে এমন মাধ্যম তিনি পাননি। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সীমাহীন কষ্ট ও পরীশ্রম করে তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেছেন। তিনি সফল সাংবাদিক হিসেবে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছেন। কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ একেএম মকছুদ আহমেদকে বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন থেকে অসংখ্য সম্মাননা জানানো হয়।
একেএম মকছুদ আহমেদ বর্তমানে শারিরীকভাবে অসুস্থ। একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁর অসুস্থার খবর শুনলে পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বস্তরের জনগণের মনে শঙ্কা তৈরি হয়। সবাই কায়মনে তাঁর সুস্থতা কামনা করেন। প্রতি বছর ১০ জুলাই তাঁর জন্মদিন পালন করা হয়। পার্বত্য মন্ত্রী, তিন পার্বত্য জেলার ৩ সংসদ সদস্য, উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জেলা পুলিশ সুপার, উপজেলা চেয়ারম্যান, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন ব্যক্তি জন্মদিনে একেএম মকছুদ আহমেদকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
বর্তমানে বয়সের ভারে কিছুটা দুর্বল হলেও মানসিক ভাবে তিনি এখনো অনেক শক্ত। দৈনিক গিরিদর্পণ পত্রিকার সম্পাদনা ছাড়াও তিনি নিয়মিত দৈনিক ইত্তেফাকে সাংবাদিকতা করছেন। প্রতিদিন নিয়ম করে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। একেএম মকছুদ আহমেদ সফলভাবে আরো দীর্ঘ সময় ধরে সাংবাদিকতা করবেন এই প্রত্যাশা আমাদের সকলের।