অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে খাগড়াছড়ি কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা নিকোলাস চাকমার বিরুদ্ধে দুদকের আরও একটি মামলা

98

॥ খাগড়াছড়ি সংবাদদাতা ॥
অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে এক কোটি ৩৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কৃষি ব্যাংকের খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক কার্যালয়ের সাবেক প্রধান কর্মকর্তা নিকোলাস চাকমার বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তিনি দীঘিনালার হেডম্যান পাড়ার মৃত সুজিত চাকমার ছেলে।
সংস্থাটির রাঙ্গামাটি সমন্বিত কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) এ মামলা দায়ের করেন, দুদকের রাঙ্গামাটি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আহামদ ফরহাদ।
এর আগে ওই ব্যাংকের দুই কোটি ৩৫ লাখ ২৯ হাজার ৩২৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত মে মাসে দুদক তার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা দায়ের করে। সেই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে নিকোলাস চাকমা বতর্মানে খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুদকের দায়ের করা দ্বিতীয় মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, আসামি নিকোলাস চাকমা কৃষি ব্যাংকের খাগড়াছড়ি শাখায় ২০১৫ সালের ২৯ এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কর্মরত থাকাকালীন তিনি ২০১৯ সালের ৪ এপ্রিল শাখার আমানতের ওপর সুদের খাত- ১৩৩/৩৭ (জে) ও ১৩৩/৩৭ (অন্যান্য) খাত ডেবিট (অর্থ জমা) করে ৪৬/১০ (প্রধান কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত সুদ খাত) স্থানান্তর করেন। পরবর্তীতে ওই (৪৬/১০) খাত থেকে বিভিন্ন তারিখে ৪৭ লাখ ১৪ হাজার ৭০০ টাকা ডেবিট করে বিভিন্ন ঋণ ও সঞ্চয়ী হিসাবে স্থানান্তর করার মাধ্যমে আত্মসাত করেন। ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর শাখার বিভিন্ন আমানতের ওপর সুদের খাত ১৩৩/৩৭ ডেবিট করে ১৪ লাখ ৭৩ হাজার টাকা চারটি মেয়াদী আমানত হিসাবে ক্রেডিট (দায়) করে গত ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর একই মেয়াদী আমানত ডেবিট করে তিন টি সিসি ঋণ হিসেবে স্থানান্তর করেন। এছাড়া, ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি শাখার বিভিন্ন আমানতের ওপর সুদের খাত-১৩৩/৩৭ ডেবিট করে ৩৬ লাখ ৫২ হাজার ৮১৪ টাকা বিকাশ চাকমার নামে পরিচালিত সঞ্চয়ী হিসাব নং-৭৭৭০-এ স্থানান্তর করেন। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ১২ জানুয়ারি ওই হিসাবে থাকা টাকা ডেবিট করে দুটি সিসি হিসাবে স্থানান্তর করেন। একইভাবে ২০২২ সালের ১৩ জানুয়ারি শাখার বিভিন্ন আমানতের ওপর সুদের খাত-১৩৩/৩৭ ডেবিট করে ৪০ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা বিকাশ চাকমার নামে পরিচালিত সঞ্চয়ী হিসাবে স্থানান্তর করেন। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি ওই সঞ্চয়ী হিসাব থেকে ওই টাকা ডেবিট করে চারটি সিসি ঋণ হিসাব স্থানান্তর করেন। এভাবে মোট এক কোটি ৩৯ লাখ ৩ হাজার ১৪ টাকা আত্মসাত করেন তিনি।
সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে পদোন্নতি পেয়ে দীঘিনালা শাখায় প্রধান কর্মকর্তা (শাখা ব্যবস্থাপক) হিসেবে যোগদান করেন।
সূত্র আরও জানায়, এর আগে দীঘিনালা শাখার ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালনের সময় একইভাবে ব্যাংকের দুই কোটি ৩৫ লাখ ২৯ হাজার ৩২৩ টাকা আত্মসাত করেন।
সূত্র জানায়, আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়ার পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নিকোলাস চাকমাকে গত ৭ মে দীঘিনালা শাখা হতে খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে ক্লোজড করা হয়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়েরের পর পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। পরর্তীতে ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তার র বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে দুদক।
সেই মামলার এজাহারে অভিযোগ আনা হয়, কৃষি ব্যাংকের খাগড়াছড়ির দীঘিনালা শাখায় ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন নিকোলাস চাকমা। ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত ওই শাখার আমানতের ওপর সুদ ব্যয়ের খাতের (১৩৩/৩৭) বিভিন্ন উপখাত ডেবিট করে এক কোটি ৩৭ লাখ ৫৫ হাজার ১০১ টাকা দুটি সিসি ও একটি সঞ্চয়ী হিসাবে স্থানান্তর করে আত্মসাৎ করেন তিনি। ২০২৩ সালের ১৮ এপ্রিল বিধিবহির্ভূতভাবে দুটি ভুয়া পারসোনাল ঋণ হিসাব খুলে ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। এছাড়া, বিভিন্ন সময়ে সিসি হিসাব নম্বর ১১৫-এর মাধ্যমে ও একটি ভুয়া সিসি হিসাব খুলে ৬০ লাখ ৭৪ হাজার ২২২ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে সব মিলিয়ে তিনি দুই কোটি ৩৫ লাখ ২৯ হাজার ৩২৩ টাকা আত্মসাৎ করেন।
সূত্র জানায়, এপ্রিলের শেষের দিকে আত্মসাতের ঘটনা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নজরে আসার পর তদন্ত শুরু হলে গা ঢাকা দেন নিকোলাস চাকমা। পরে ৭ মে কৌশলে তাকে এনে ৮ মে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২৩ মে আদালতে তার জামিনের আবেদন করা হলেও আদালত তা নাকচ করে দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। বতর্মানে তিনি খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারে বন্দি আছেন।