লামায় তিন বছরেও শেষ হয়নি ৩টি স্কুলের ভবনের কাজ, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলে পাঠদান

22

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামাঃ-শ্রেণীকক্ষ সংকটে লামার তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান চরম ব্যাহত হচ্ছে। কোন কোন বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন প্রায় ১০ বছর আগেই মেয়াদোত্তীর্ন ঘোষণা করলেও শ্রেণীকক্ষ সংকট থাকায় সেইসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান। এদিকে গত তিন বছর আগ থেকে ওই বিদ্যালয়গুলোতে নতুন ভবনের কাজ শুরু হলেও শুধুমাত্র ঠিকাদারের অবহেলার কারণে নতুন ভবন এখনো সম্পন্ন করা যায়নি বলে জানিয়েছেন, এলজিইডি লামা উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আবু হানিফ।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) লামার অফিস সূত্রে জানা যায়, শ্রেণীকক্ষ ও ভবন সংকট থাকায় এলজিইডি লামার অর্থায়নে গত ৩ নভেম্বর ২০২০ইং বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের ২নং চাম্বী সরকারি প্রাঃ বিদ্যালয়, ১৩ এপ্রিল ২০২১ইং ফাইতং ইউনিয়নের ধূইল্যাছড়ি সরকারি প্রাঃ বিদ্যালয় ও ৩ নভেম্বর ২০২০ইং লামা পৌরসভার শিলেরতুয়া সরকারি প্রাঃ বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের কাজ শুরু হয়। ২নং চাম্বী সরকারি প্রাঃ বিদ্যালয়ের দ্বিতল নতুন ভবনের চুক্তিমূল্য ৯১ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা, ধূইল্যাছড়ি সরকারি প্রাঃ বিদ্যালয়ের ভাটিক্যাল (২য়, ৩য় ও ৪র্থ তলা) ভবনের চুক্তিমূল্য ৮১ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা এবং শিলেরতুয়া সরকারি প্রাঃ বিদ্যালয়ের নতুন দ্বিতল ভবনের চুক্তিমূল্য ৮১ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা। তিনটি স্কুল ভবনের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় রাঙ্গামাটি জেলার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইউ.এম. ট্রেডার্স। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে কাজ তদারকি করছেন ঠিকাদার মোঃ দিদার।
এলজিইডি লামা উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আবু হানিফ বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। আমি যোগদানের পর থেকে অনেকবার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কাজ শেষ করতে চিঠি দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ২নং চাম্বী সরকারি প্রাঃ বিদ্যালয়ের কাজ ৯০ শতাংশ, ধূইল্যাছড়ি সরকারি প্রাঃ বিদ্যালয়ের কাজ ৮৫ শতাংশ ও শিলেরতুয়া সরকারি প্রাঃ বিদ্যালয়ের কাজ ৮৫ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। বিদ্যালয়গুলোতে কার্যাদেশের সময় পার হওয়ায় একবার করে সময় বাড়ানো হয়েছে। সেই সময়ও পার হয়ে গেছে। আবারো কাজের সময় বাড়াতে প্রধান প্রকৌশলী বরাবরে আবেদন পাঠানো হয়েছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মোঃ দিদার বলেন, পূর্বের রেটের সাথে বর্তমান মালামালের মূল্যের অনেক ফারাক ও কিছু সমস্যা থাকায় কাজ শেষ করা যায়নি। নতুন করে কাজ ধরা হয়েছে। শীঘ্রই কাজ শেষ করা হবে।
২নং চাম্বী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, ১৯৮১ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়েছে। বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ৩৭৫ জন ও শিক্ষক ৭ জন। প্রয়োজন তুলনায় শ্রেণীকক্ষ অনেক কম রয়েছে। তিন বছর আগে নতুন ভবনের কাজ শুরু হলেও এখনো কাজ শেষ হয়নি। নতুন ভবনের কাজের গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ভবনের অনেক জায়গায় ফাটল, বিদ্যুতের ওয়ারিংয়ে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। দরজা, জানালা ও গ্রিলের কাজের মান খুবই খারাপ।
ধূইল্যাছড়ি সরকারি প্রাঃ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ মুহিবুল হাসান বলেন, ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হলেও অল্প সময়ে উপজেলার প্রথম সারির স্কুলে এসেছে বিদ্যালয়টি। আমাদের এখন শিক্ষার্থী সংখ্যা ৪৪২ জন ও শিক্ষক ৬ জন। ৩টি শ্রেণীকক্ষে এত ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে স্কুল পরিচালনা করা কষ্টের। ২য় থেকে ৪র্থ তলা ভবনের কাজ শেষ না হওয়ায় পাঠদানে সমস্যা হচ্ছে।
শিলেরতুয়া সরকারি প্রাঃ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লিপিকা চৌধুরী বলেন, লামা পৌরসভার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বিদ্যালয়টি। তিন শতাধিক ছেলে-মেয়েদের জন্য ছোট ছোট তিনটি শ্রেণীকক্ষ। দ্বিতল বিশিষ্ট নতুন ভবন পেলেও কাজ শেষ না হওয়ায় কষ্ট লাগোব হচ্ছেনা।
লামা উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু নোমান মোঃ আব্দুল্লাহ বলেন, এলজিইডি লামার সাথে যোগাযোগ করে দ্রুত বিদ্যালয়গুলোর কাজ শেষ করতে তাগিদ দেয়া হবে। নতুন ভবনের কাজের গুণগত মান নিয়ে যেসব প্রশ্ন উঠেছে তার সমাধান করা হবে।