দীর্ঘ চল্লিশ বছরেও মৈদং ও দুমদুম্যা ইউনিয়ন পরিষদের ভবন নির্মানের উদ্যোগ নেই, সরকারী সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত স্থানীয়রা

224

সুমন্ত চাকমা, জুরাছড়িঃ-রাঙ্গামাটি জুরাছড়ি উপজেলা উন্নতির দীর্ঘ চল্লিশ বছর অধিক সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরেও সরকারি ভাবে এখনো মৈদং ও দুমদুম্যা ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব ভবন নির্মানের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। উপজেলার দুই ইউনিয়ন পরিষদের নেই নিজস্ব কার্যালয়। ৬০-৭০ কিলোমিটার দূরে উপজেলা সদরে ভাড়া করা একটি আবাসিক ভবনে চলে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম।
চৌদ্দ হাজার ১৫৮ জন মানুষেবাস করা মৈদং ও দুমদুম্যা ইউনিয়নে। দুই ইউনিয়নের চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা ও পাংখােয়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস।
উপজেলা পরিষদের সূত্র জানা গেছে, ১৯৮০ সালের পূর্বে জুরাছড়ি ছিল বরকল থানাধীন একটি ইউনিয়ন। পবর্তীতে জুরাছড়ি ইউনিয়নকে চারটি ইউনিয়নে ভাগ করে ১৯৮০ সাল ১৮ নভেম্বর জুরাছড়িকে মান্ননীত থানা হিসেব ঘোষনা করা হয়। ১৯৮৩ সাল ২৫ জুলাই উপজেলায় উন্নিত করা হয় জুরাছড়িকে।
ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে শিক্ষা, স্বাস্থ্য জনস্বাস্থ্য, কৃষি সম্প্রসারণসহ বিভিন সরকারি দপ্তর অফিসের কক্ষ বরাদ্দ থাকে। ইউনিয়ন পরিষদর নিজস্ব ভবন না থাকায় সংশ্লিষ্ট্য সরকারি কর্মকর্তারাও মাঝে মধ্যে অস্থায়ী ভাবে গেলেও প্রায় সময় উপজলায় অফিস করেন।
গত মঙ্গলবার (২১ মার্চ) সোকিনা চাকমার সাথে ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়ে দেখা হয়। জুরাছড়ি উপজেলার দুর্গম তিন দিন পাহাড়ি পথ হেটে উপজেলা সদর এসে পৌছেন। কোথায় থাকবে নিদিষ্ট্য ঠিকানা নেই। তার একমাত্র ১২দিনের বয়সের ছেলের জম্ম নিবন্ধন করার জন্য উপজলায় আসা। শুধু সোখিনা নয়, এ সময় কথা হয় বিশাখা, দুর্গামালা, চিগন তঞ্চঙ্গ্যাসহ ৮-১০ জনের সাথে। তারা কেউ স্থায়ী বাসিন্দার আবার কেউ ছেলের নাম সংশোধন আবার কেউ সরকারি ভাতা পাওয়া আবেদন করতে এসেছে।
এই দৃশ্য শুধু দুমদুম্যা ইউনিয়ন নয়, মৈদং ইউনিয়নেরও। দু’ ইউনিয়ন পরিষদের নেই নিজস্ব কার্যালয়। মৈদং ও দুমদুম্যা ইউনিয়নের ৬০/৭০ কিলামিটার দূর উপজলা পরিষদের ভাড়া করা একটি আবাসিক ভবনে চলে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম। দেশের সবচেয়ে ম্যালরিয়া প্রবণ এলাকায় এ দুমদুম্যা ও মৈদং ইউনিয়ন।
দুমদুম্যা মৌজার প্রবীন হেডম্যান সমূর পাংখোয়া (৭০) বলেন, ইউনিয়ন নেই কনো নেটওয়ার্ক, নেই যাতায়াতের সুব্যবস্থা। এখান থেকে উপজেলায় যেতে সময় লেগে যায় ৩/৪দিন। ফলে অধিকাংশ সময় দুমদুম্যাবাসী সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। বরকলক এলাকায় দুমদুম্যা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মিত হলে এলাকার অনেক অর্থনৈতিক ভাবে এগিয়ে যাবে।
মৈদং ইউনিয়নের হেডম্যান সম্রাট চাকমা বলেন, উপজেলার সাথে যোগাযোগ বিছিন্নতার কারণে স্থানীয় অধিবাসীরা সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে করে তারা অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বি হতে পারছে না।
পরিসংখ্যান তদন্তকারী কর্মকর্তা মংলাতুন রাখাইন বলেন, উপজেলা সদর থেকে মৈদং ৫০ কিলোমিটার ও দুমদুম্যা ইউনিয়নর দুরত্ব ৭০ কিলোমিটার প্রায়।
মৈদং ইউপি চয়ারম্যান সাধনা নন্দ চাকমা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব ভবন নির্মানের ইতিমধ্যে সকল প্রক্রিয়া সম্পাদন করা হয়েছে। এখন জেলা প্রশাসক মহোদয় সুদৃষ্টি দিলেই ভবন নির্মাণের টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।
মৈদং ইউপি চেয়ারম্যান আরো বলেন, এখান শুস্ক মৌসুমে বিশুদ্ধ পানিয়জলের সংকট বাড়ে। গত বছর ডাইরীয়া জনিত কারণে আমতলা বাদলহাট ছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়র একছাত্রী মারা যায়।
দুমদুম্যা ইউনিয়ন পরিষদর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাধন কুমার চাকমা বলেন, উপজেলায় এসে জনসাধানরকে সেবা গ্রহন করা ব্যয়বহুল ও কষ্টকর হচ্ছে। তাই দুমদুম্যা ইউনিয়ন পরিষদের ভবন নির্মানের জন্য ইতি মধ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে খাস জমি বন্দোবস্তির আবেদন করা হয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, কাগজে কলমে দুমদুম্যা ইউনিয়নের শিক্ষার হার ১৫ শতাংশ বলা হলেও বাস্তব এর সংখ্যা আরও কম। তার ইউনিয়ন কনো উচ্চ বিদ্যালয় নেই। কলেজ তো স্বপ্নের ব্যাপার! এখানে বিশুদ্ধ পানিয়জলের সংকট প্রকট, টিওয়েল আছে পানি নেই, কিংবা সংস্কার বা মেরামতের অজ্ঞানতায় পরিত্যাক্ত হয়ে পরে আছে। সব মানুষই নদী, খাল ও ছড়ার পানি পানসহ নিত্যব্যবহার্য কাজ করেন। ম্যালরিয়া প্রকট রয়েছে ইউনিয়ন জুড়ে।
উপজলা নির্বাহী অফিসার জিতেন্দ্র কুমার নাথ বলেন, মৈদং ও দুমদুম্যা ইউনিয়ন পরিষদর নিজস্ব ভবন নির্মানের সম্ভাব্য জায়গা সরজমিনে পরির্দশন করে জেলা প্রশাসকের নিকট সুপারিশ পাঠানা হয়েছে।