দীঘিনালায় হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ, রোগীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসকরা

55

মো: সোহেল রানা, দীঘিনালাঃ-খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। হাসপাতালের ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর ভর্তি সংখ্যা বাড়ছে। দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগী ভর্তি হচ্ছে এবং অনেক রোগীকে বহি:বিভাগ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারী) স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রেকর্ড অনুযায়ী ৯ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই শিশু। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্সরা বলছেন, হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় দৈনিক ৮ থেকে ১০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে, আবার অনেক রোগী সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরছে।
শয্যার তুলনায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেশি হওয়ায় অনেক রোগীকে মেঝেতে বিছানা পেতে দেয়া হয়েছে। এদিকে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বেড কম থাকায় রোগীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
নার্সরা আরো জানান, বরাদ্দকৃত বেড ও ঔষধের তুলনায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় স্যালাইন সংকট পড়েছে। আমরা খাবারের স্যালাইন ও যাবতীয় ঔষধসহ চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছি। একাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ও স্বজনরা জানান, দীঘিনালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হবার পর প্রয়োজনীয় বেশির ভাগ ঔষধই হাসপাতালের ডাক্তারদের দেয়া স্লিপের মাধ্যমে বাহিরের ফার্মেসীগুলো থেকে টাকা দিয়ে কিনে আনতে হচ্ছে। স্যালাইনটা পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে দেয়া হচ্ছে না। ঠিকমত রোগীদের সেবা ডাক্তার ও নার্সরা দিচ্ছে না। যেকারণে রোগীদের অবস্থা আশংকাজনক হচ্ছে। নার্সদের আচরণও খুব অসৌজন্যমূলক। তারা আরো জানান, স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় ঔষধগুলো বাহিরের ফার্মেসীগুলোতেও পাওয়া যাচ্ছেনা।
সরেজমিনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওয়ার্ড গুলোতে ঘুরে দেখাযায় যতগুলো রোগীর শরীরে স্যালাইন চলছে তা সবগুলোই বিভিন্ন কম্পানির, ফার্মেসী থেকে রোগী স্বজনদের কিনে আনা। সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রোগীদের দেয়া হচ্ছেনা কোনো স্যালাইন। তাছাড়া জরুরি প্রয়োজনীয় ঔষধ গুলোও কিনতে হচ্ছে বাহির থেকে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আশপাশের ফার্মেসীগুলোতেও স্যালাইনের সংকট পড়েছে। কয়েকটি ফার্মেসীতে কথা বলে জানাযায়, অর্ডার কররেও জানুয়ারির ১৫ তারিখের পর থেকে ডায়রিয়া ও কলেরা জনিত রোগের স্যালাইনগুলো কোম্পানি থেকে পাওয়া যাচ্ছেনা।
স্থানীয় রোগীরা মনে করছেন, সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারদের সাথে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানি ও স্থানীয় ফার্মেসীর সাথে ব্যক্তিগত ও আর্থিক সমন্বয় থাকার কারণে স্যালাইনসহ বেশিরভাগ প্রয়োজনীয় ঔষধগুলি ডাক্তারদের দেয়া স্লিপের মাধ্যমে ফার্মেসী থেকে কিনে আনতে হচ্ছে। আবার দেখা যায়, বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা সারাক্ষণ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারদের সাথে দেখা ও কথা বলার জন্য। ডাক্তারদের দেয়া স্লিপ রোগীদের কাছ থেকে নিয়ে স্মার্ট ফোনে ছবি তুলে রাখেন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টোর কিপার সোহেল চাকমা জানান, কিছুদিন ধরে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় বেড ও ঔষধ বরাদ্দের চেয়ে রোগী বেশি হওয়ায় স্যালাইন, ঔষধ কিছুটা সংকট পড়েছে। আমরা চাহিদা পাঠিয়েছি স্যালাইন সহ যাবতীয় ঔষধ গুলো পেলে কিছুটা সংকট কাটবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার নাজমুন নেছা মিম জানান, হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ কিছুটা বেড়েছে। আজ এপর্যন্ত ৯ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছে। অনেকেই সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেছেন। অনেক রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়লেও এখন পর্যন্ত কোনো রোগীর অবস্থা আশংকাজনক হয়নি। স্যালাইন সংকটের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসপাতালে আপাতত কোনো ঔষধ বা স্যালাইন সংকট নেই। সেবাপ্রার্থী রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।