শান্তিচুক্তির কারণে পাহাড়ে শান্তি ফিরে এসেছে: সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী

36

ডেস্ক রিপোর্টঃ-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক চেষ্টায় পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ও উন্নয়ন জোরদার হয়েছে। পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসায় উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় সম্পৃক্ত হয়েছে পাহাড়ি জনপদের মানুষ।
রবিবার (২২ জানুয়ারি) ‘পার্বত্য বিতর্ক উৎসব-২০২৩’ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি এসব কথা বলেন। রাজধানীর এফডিসি মিলনায়তনে ব্র্যাক ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি যৌথভাবে এ বিতর্কের আয়োজন করে।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে ৪৯টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী থাকলেও কয়েকটি নৃ-গোষ্ঠী বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংকা তৈরি হয়েছে। ছোট হয়ে যাওয়া কয়েকটি নৃ-গোষ্ঠী চাকমা মারমাসহ অন্যান্যদের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সুরক্ষা এবং তাদের ঐতিহ্য সংরক্ষণে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতি বিকাশের লক্ষ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় পার্বত্য এলাকার তিনটি জেলায় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছে।
সাংস্কৃতিক প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, পাহাড়ি এলাকায় অপরিকল্পিত পর্যটনের কারণে পরিবেশ ও প্রতিবেশ এর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তাই অপরিকল্পিত অবকাঠামো তৈরি এবং নির্দিষ্ট এলাকা ছাড়া যত্রতত্র পর্যটকদের ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা ও পরিচালনা করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাক এডুকেশন প্রোগ্রামের পরিচালক সাফি রহমান খান। পার্বত্য বিতর্ক উৎসবে পার্বত্য অঞ্চলের রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলার ৭টি উপজেলার ৫০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বাংলাদেশের এক-দশমাংশ ভূখন্ড জুড়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমির এই অঞ্চলের মানুষগুলো অতি সাধারণ জীবন যাপন করে। তারা মনে করে জমি, বন ও পাহাড় হচ্ছে যৌথ সম্পত্তি। ফলে পার্বত্য অঞ্চলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা নিবন্ধন ছাড়াই জমিতে চাষাবাদ ও বসবাস করে থাকে। তবে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ভূমির মালিকানা নিশ্চিতকরণে এখনও রয়েছে নানামুখী চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কথা চিন্তা করে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বিরোধের সমাধান করা উচিত। সরকার চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ভাষার শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের নিজ অক্ষরে পাঠ্যবই ছাপিয়েছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় এই অঞ্চলের মানুষের জন্য বহুমুখী প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন হচ্ছে। দুর্গম অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। সবার জন্য সুপেয় পানি নিশ্চিতকরণে কাজ চলছে। উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে পার্বত্য অঞ্চল।
অনুষ্ঠানে পার্বত্য অঞ্চলের জনগণের জীবনমান উন্নয়নে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির পক্ষ থেকে ৭ দফা সুপারিশ করা হয়: এগুলো হচ্ছে-
১) সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পার্বত্য এলাকার সকল জাতি ও গোষ্ঠীর মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা আরও বেশি করে প্রচার করা। ২) পার্বত্য অঞ্চলের স্থানীয় প্রশাসন এর পক্ষ থেকে বাল্যবিবাহ কমিয়ে আনতে সুবিধা বঞ্চিত পরিবারকে বিয়ের আংশিক খরচ বহন করা। ৩) পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন কার্যকর করার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক কার্যক্রম নির্দিষ্ট করা। ৪) পার্বত্য এলাকার সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থার গুনগত মান উন্নয়নে যোগাযোগ, উপবৃত্তি, শিক্ষকদের আবাসন ও বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা আরও বৃদ্ধি করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সর্বসাধারণের জন্য ডিজিটাল সুবিধা নিশ্চিত করা। ৫) পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হিসেবে মালয়েশিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিনা খরচে সরকারিভাবে কর্মী প্রেরণে পার্বত্য অঞ্চলকে অগ্রাধিকার প্রদান করা। ৬) আধুনিক পদ্ধতিতে পার্বত্য এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশন সুবিধা আরও বেশী নিশ্চিত করা। ৭) পার্বত্য অঞ্চলে নারীদের জন্য হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান ও নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে বিশেষ নীতিমালা প্রণয়ন করা।
‘সামাজিক সচেতনতাই পারে বাল্যবিবাহ রোধ করতে’ শীর্ষক উদ্বোধনী বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বান্দরবানের সুয়ালক উচ্চ বিদ্যালয়কে পরাজিত করে রাঙ্গামাটির মোনঘর আবাসিক বিদ্যালয় বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ বক্তা হয় পক্ষ দলের দময়ন্তী চাকমা। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন, অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক ড. শাকিলা জেসমিন, সাংবাদিক পার্থ সঞ্জয় ও সাংবাদিক ফারহানা ন্যান্সী। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির প্রধান প্রফুল্ল চন্দ্র বর্মন। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, গ্লোবাল এ্যাফেয়ার্স কানাডা এর সহযোগিতায় এই পার্বত্য বিতর্ক উৎসব আয়োজন করা হয়। আগামী ৩১ জানুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি পার্বত্য বিতর্ক উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ দলের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করবেন।